প্রতিদিনের ঘুম ও সুস্থ শরীর - সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,

প্রিয় পাঠক- আসসালামু আলাইকুম, শিশু থেকে বৃদ্ধ- সকল বয়সের মানুষের সুস্থতার জন্য ঘুম হচ্ছে জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। দেহ ও মনের সুস্থতায় প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। 

প্রতিদিনের-ঘুম-ও-সুস্থ-শরীর---সম্পর্কে-বিস্তারিত-জেনে-নিন

এটি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি আমাদের মস্তিষ্কেও সুস্থ রাখতে বিশেষ ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আজকে এই আর্টিকেলে আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে-প্রতিদিনের ঘুম ও সুস্থ শরীর।

পেজ সূচিপত্রঃ প্রতিদিনের ঘুম ও সুস্থ শরীর - সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রতিদিনের ঘুম ও সুস্থ শরীর - সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রতিদিনের পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের সার্বিক সুস্থতা প্রদান করে থাকে। ঘুম শুধু মস্তিষ্কের বিশ্রামই নয় বরং এটি আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আপনি যদি ঘুমকে অগ্রাধিকার দেন আর ভালো ঘুমের অভ্যাস তৈরি করেন, তাহলে আপনার মন-মেজাজ ভালো থাকবে, শরীর মজবুত থাকবে আর বড় ধরনের রোগের ঝুঁকি কমবে।

ঘুম জীবনের গতি ঠিক রাখার জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। আমরা যখন ঘুমাই তখন- মস্তিষ্ক তথ্য জমা রাখে, স্মৃতি তৈরি করে, শরীরে শক্তি জমায়, টিস্যু মেরামত করে আর হরমোন তৈরি করে থাকে।

বর্তমানে এই অত্যাধুনিক ডিজিটাল যুগে মানুষ স্মার্টফোনে আসক্ত। তারা দিনের অধিকাংশ সময় স্মার্টফোনে অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটিয়ে থাকে এবং তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে পারে না। ফলে তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য খুবই খারাপ অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।

ঘুম কেবলমাত্র শরীর ও মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করার উপায় নয় বরং এটি জীবনের গুণগত মান উন্নত করার প্রধান মাধ্যম। পরিমিত পরিমাণে ও নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম নিশ্চিত করতে পারলে আপনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ ও সফল জীবনযাপন করতে পারবেন। তাই আজকে আমরা প্রতিদিনের ঘুম ও সুস্থ শরীর নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

আরো পড়ুনঃ স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন - আমাদের যা যা করণীয়

ঘুমের অভ্যাস কেমন হওয়া উচিত?

ঘুমের অভ্যাস কেমন হওয়া উচিত? এটা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা সফল মানুষে তারা নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি মেনে চলেন, ঘুমের আগে শান্ত পরিবেশ তৈরি করেন এবং এ্যালকোহল বা ক্যাফেইন ও ভারী খাবার এড়িয়ে চলেন।

ঘুমের-অভ্যাস-কেমন-হওয়া-উচিত

এতে তারা পান গুণগত ঘুম, যা পরের দিন মনোযোগ, সৃজনশীলতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। নিচে কিছু ভালো ঘুমের অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা যাক-

  • প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো আর ঘুম থেকে ওঠা এমনকি ছুটির দিনেও একই সময়ে ঘুমাতে গেলে আর ঘুম থেকে উঠলে রাতে ঘুম গভীর হয়।
  • ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগে স্মার্টফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ বা পিসি সব বন্ধ করে দিন। স্ক্রিনের নীল আলো ঘুমের হরমোন ‘মেলাটোনিন’-এর ক্ষরণে বাধা দেয়। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়। তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে এসব ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
  • ক্যাফেইন জাতীয় খাবার বা ঠান্ডা জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকুন। অর্থাৎ যত দূর সম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে দুপুরের পর না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, এতে রাতে দেরিতে ঘুম আসে।
  • প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে বা বিকালে হাটাহাটি বা হাল্কা ব্যায়াম করুন। এতেও রাতে ভালো ঘুম হবে।
  • বিশেষ করে যে ঘরে ঘুমাবেন সে ঘরকে আরামদায়ক একটা পরিবেশে তৈরি করুন। যেমন-  আরামদায়ক বিছানা, বালিশ আর পাতলা চাদর ঘুমের মান অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজন হলে ব্ল্যাক-আউট পর্দা, চোখ ঢাকার কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।
  • অনেকের দিনে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে এতে করে রাতে ঘুম দেরিতে আসে। তাই যারা দিনে ঘুমাবেন তারা অবশ্যই ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
  • রাতে ঘুমানোর আগে ভারী খাবার না খাওয়াই ভালো। কারন, এতে হজমে সমস্যা হতে পারে।
  • বিশেষত: রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ঘরের আলো নিবিয়ে দিন অথবা হাল্কা আলো ব্যবহার করুন অথবা নাইট মোড- দিয়ে রাখুন।

রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমালে কি ক্ষতি হয়?

প্রতিদিন রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমালে আপনার শরীরের উপর খারাপ প্রভাব পরতে পারে এটাই স্বাভিাবিক। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে না ঘুমিয়ে রাতে ঘুমায় তাদের শরীরে ক্রমাগতভাবে প্রায় ১০০ ধরনের প্রয়োজনীয় প্রোটিনে পরিবর্তন আসতে থাকবে, যাদের অধিকাংশই রক্তের জন্য এবং দেহের প্রতিরক্ষার জন্য দরকার।

তাছাড়া দিনে সামান্য পরিমাণ ঘুমের অভ্যাস মন্দ নয় ভালো। দিনে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা ঘুমালে আপনার ব্রেনের কার্যকারিতা পারবে এবং স্মৃতিশক্তিও ভালো থাকবে।

যারা দীর্ঘদিন রাতে সজাগ থেকে দিনে ঘুমায় তাদের সমস্যা হবারই কথা - কিন্তু ক্ষতি যা হবে সেটা অনেকটা পরোক্ষ। তাই, তাৎক্ষণিক কিছু বা নির্দিস্ট কোনো সমস্যা হয়তো বোঝা যাবে না।

বাস্তবিক পক্ষে, আমাদের শারীরিক অবস্থা-ই এমন যা দিনে কাজ করা এবং রাতে ঘুমানোর জন্যে উপযুক্ত। কারণ, গভীর ঘুমে শরীরের জন্যে উপকারী যেসব হরমোন নিঃসৃত হয় তার জন্যে প্রয়োজন রাতের অন্ধকার।

কিন্তু আপনি যখন দিনের পর দিন এই স্বাভাবিক জৈব-ছন্দকে প্রভাবিত করেন তাহলে দেহঘড়িতে বাধে গোলমাল। ফলে জ্বর-জ্বর ভাব, ঠান্ডা লাগা, এসিডিটি-র পাশাপাশি দুর্বল হতে থাকে আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

আমাদের শরীরের বিভিন্ন হরমোন ও এনজাইমগুলোর মাত্রা সকাল-সন্ধ্যা ভেদে তারতম্য ঘটে। যেমন- কর্টিসোল, মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী। এ হরমোনটির নিঃসরণ-মাত্রা দিনের প্রথমার্ধে থাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে এবং এরপর থেকে কমতে থাকে। কিন্তু টানা রাত্রি জাগরণের ফলে এই প্রাকৃতিক নিয়ম পাল্টে যায়। বিঘ্নিত হয় দেহের স্বাভাবিক হরমোন প্রবাহ।

আরো পড়ুনঃ বয়স অনুযায়ী আমাদের খাদ্যাভ্যাস কি হওয়া উচিত?

দিনে ঘুমানোর অপকারিতা জানুন

মহান রাব্বুল আলামিন রাতের অন্ধকারকে আমাদের ঘুমের জন্য উপযুক্ত করে দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের প্রজন্মের কিছু মানুষের কাছে এবং একালের বেশিরভাগের কাছেই রাতে জেগে থাকতে এবং দিনের অনেকটা সময় ঘুমিয়ে কাটাতে আনন্দ। কিছু মানুষ দাবি করেন, এটা তাদের 'ক্রিয়েটিভিটি' বৃদ্ধি করে। কথাটা হয়তো কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

দিনে-ঘুমানোর-অপকারিতা

যারা মহান বিজ্ঞানী, দার্শনিক কিংবা কোনও সৃষ্টিশীল পেশার প্রতিভাবান মানুষ, তাদের কারও কারও জন্য হয়ত রাতের নীরবতা কাজের ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী। কিন্তু অধিকাংশ রাতজাগা মানুষ আমাদের মতো সাধারণ এবং তাদের রাতজাগা মানবকল্যাণে কোনও উপকার তো করেই না, বরং তাদের নিজেদেরই মহা ক্ষতি করে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের তরুণ সমাজের বড় অংশই এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।

"মহান আল্লাহপাক আমাদের জন্য রাতকে বিশ্রাম বা আরামের জন্য আর দিনকে কাজকর্মের জন্য নির্ধারণ করেছেন।" (আল কুর'আন- ৬:৯৬; ১০:৬৭; ২৫:৪৭)

বৈজ্ঞানিকভাবে, রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমালে শরীরের বায়োলজিকাল ক্লক বা সারকাডিয়ান রিদম বিঘ্নিত হয়, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। এটি ঘুমের মান কমায়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। আর এটি মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, ও মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।

আমাদের যারা অকারণে আড্ডা দিয়ে, টিভি-সিনেমা দেখে কিংবা মোবাইল ফোনে গেম খেলে রাতের সময়টুকু কাটিয়ে 'সারকাডিয়ান রিদম' এলোমেলো করে দিচ্ছি, তাদের ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সমস্যার শঙ্কা অনেক বেশি।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা রাতের শিফটে কাজ করেন তাদের মধ্যে স্তন-ক্যান্সারের সম্ভাবনা ৩৬ শতাংশ বেশি! এটা আসলেই অতি ভয়াবহ পরিসংখ্যান।

আরো পড়ুনঃ দৈনিক পুষ্টিকর খাবার কি হওয়া উচিত - বিস্তারিত জানুন

দিনের বেলা ঘুমালে কি ওজন বাড়ে?

সম্প্রতি নতুন একটি গবেষণায় বলা হয়, যদি সারা রাত ভালো ঘুমের পরও দিনের বেলায় আপনার ঘুমভাব হয় তবে এটি ওজন এবং বিষণ্ণতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট কলেজ অব মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক জুলিও ফারনান্দেজ মেনডোজা বলেন, ওজনাধিক্য এবং ওজন বাড়া দিনের বেলার ঘুম এবং ঘুমভাবের জন্য অনেকাংশে দায়ী। কেবল কম ঘুমের জন্যই ওজন বাড়ে না, নিয়মিত নিদ্রালুভাবের জন্যও ওজন বাড়ে। এনডিটিভি প্রকাশ করেছে এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন।

জুলিও ফারনান্দেজ বলেন, এসব লোক রাতে ভালো করে ঘুমানোর পরও সারা দিন ক্লান্তবোধ করেন। তাই যদি আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তবে অবশ্যই দিনের বেলার ঘুমভাব কাটাতে হবে। শরীরের ওজনের ওপর নির্ভর করে আপনার ঘুমানোর পরিমাণ নির্দিষ্ট করুন।

আরেকটি স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ওয়েব এমডি জানিয়েছে, যারা দিনের বেলা ঘুমান বা নিদ্রালু থাকেন, তারা অন্যদের তুলনায় তিন ভাগ বেশি বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত হন এবং ওজন যাদের বেশি এ সমস্যার কারণে তারা স্লিপ এপিনিয়ার সমস্যায় ভোগেন।

আরো পড়ুনঃ সুস্থ থাকতে প্রতিদিন দুধ খান- নিজেকে ফিট রাখুন

প্রতিদিন কমপক্ষে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত

প্রতিদিন কমপক্ষে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত? এর উত্তরে বিশেজ্ঞদের মত- ‘কয়েক রাত ধরে ঘুম কম হতে থাকলে আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন, মনোযোগ কমে যাবে এবং বিষণ্নতা ভর করতে পারে, উদ্বেগও বেড়ে যেতে পারে। আর যদি এই ঘুম কম হওয়াটা চলতেই থাকে, তাহলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, নিয়মিত অতিরিক্ত ঘুমালেও এই স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো বেড়ে যেতে পারে।’

বিভিন্ন বয়সে দৈনিক ঘুমের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, যেমন-

নবজাতক অর্থাৎ যাদের বয়স ০-৩ মাস তাদের জন্য প্রতিদিন ১৪-১৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। ছোট শিশুদের অর্থাৎ যাদের বসয় ৪-১১ মাস তাদের জন্য প্রতিদিন ১২-১৫ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। আর শিশু অর্থাৎ যাদের বয়স ১-২ বছর তাদের জন্য প্রতিদিন ১১-১৪ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। 

প্রাকস্কুল বয়সী অর্থাৎ ৩-৫ বছর শিশুদের জন্য প্রতিদিন ১০-১৩ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। আর স্কুল বয়সী শিশুদের অর্থাৎ ৬-১৩ বছর শিশুদের জন্য প্রতিদিন ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।

কৈশোর কাল অর্থাৎ যাদের বয়স ১৪-১৭ বছর তাদের জন্য প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। তরুণ অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮-২৫ বছর তাদের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।

প্রাপ্ত বয়স্ক অর্থাৎ যাদের বয়স ২৬-৬৪ বছর তাদের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। আর যাদের বয়স ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি তাদের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়।

রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম

রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম-  ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ইনসমনিয়া (insomnia)। বা অনিদ্রা। অনিদ্রা ব্যখ্যা করার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক এবং শারীরবৃত্তীয় দুটি প্রধান মডেল বিদ্যমান।

জ্ঞানভিত্তিক মডেলের মতে, কোনও ব্যক্তিকে ঘুমিয়ে পড়া থেকে বিরত রাখতে অনুধ্যান এবং হাইপারঅ্যারোসাল অবদান রাখে। যা ব্যক্তিকে ইনসমনিয়ার দিকে পরিচালিত করতে পারে।

আর এই ইনসমনিয়া নিয়ে গবেষণায়, নিবারক নিউরোট্রান্সমিটার GABA এর পরিবর্তিত মাত্রা পাওয়া গেছে। অনিদ্রা, ঘুমের উপর সার্কেডিয়ান নিয়ন্ত্রণ বা জাগ্রত নির্ভরশীল প্রক্রিয়া দ্বারা চালিত হয় কিনা তা নিয়ে গবেষণায় অসঙ্গতিপূর্ণ ফলাফল পাওয়া গেছে।

রাতে ঘুম না আসার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যেমন-

  • মানসিক চাপ
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন পান
  • ঘুমের ব্যাঘাত
  • ধূমপান বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহন
  • কিছু ঔষধ সেবনের ফলে
  • কিছু শারীরিক সমস্যায়
  • অনিয়মিত কাজের সময়
  • পরিবেশগত কারণে

তাছাড়া, বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের মধ্যে যৌন হরমোনের পরিবর্তন বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ঘুমের ব্যাধির জন্য আংশিকভাবে দায়ী হতে পারে।

ইসলামে ঘুমানোর সঠিক নিয়ম

অন্যান্য সকল বিষয়ের মত ইসলামে ঘুমানোর কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে সেগুলো মেনে চললে ঘুমও ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে ইনশা-আল্লাহ। যেমন-

  • প্রথমে বিছানা ঝেড়ে নেয়া যাতে কোন প্রকার পীড়াদায়ক কিছু না থাকে।
  • পবিত্রতার সঙ্গে ঘুমানো। প্রিয় নবী (সা.) যখনই ঘুমাতেন অজুর সঙ্গে ঘুমাতেন।
  • ঘুমানোর আগে সবাইকে ক্ষমা করে ঘুমানো। হাদিসে এমন ব্যক্তিদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ এসেছে।
  • জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা যখন ঘুমাবে তখন বাতি নিভিয়ে দেবে, দরজাগুলো বন্ধ করবে, মশকের মুখ বন্ধ করবে, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি ঢেকে রাখবে।” (বুখারি: ৫৬২৪)
  • উপুর হয়ে না ঘুমানো। আল্লাহ তাআলা এ রকম শোয়া পছন্দ করেন না। (তিরমিজি: ২৭৬৮)
  • বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, “যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাজের অজুর মতো অজু করে নেবে। তারপর ডান পাশে শুয়ে পড়বে।” (বুখারি: ২৪৭)
  • ঘুমানোর আগের দোয়া পড়ে ঘুমানো। দোয়াটি হলোঃ ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।
  • ঘুম থেকে জাগার পর দোয়া পড়া। দোয়াটি হলোঃ ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়া না বা’দা মা আমা তানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।

ইসলামে কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত?

ইসলামে ঘুমের কোন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত নেই। তবে, সুস্থ ও সঠিক জীবন-যাপনের জন্য আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম অত্যন্ত প্রয়োজন বা জরুরী। আমরা জানি, বয়সের সাথে সাথে ঘুমের চাহিদা পরিবর্তিত হয়। শিশুদের বেশি ঘুমের প্রয়োজন হয়, আর বয়স্কদের কম।

তাছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ইবাদত করার সময় মনোযোগ দিতে কষ্ট হয় এবং ইবাদত থেকে পূর্ণ ফল পাওয়া যায় না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়শই ইশার নামাজের পরে ঘুমিয়ে পড়তেন এবং ফজরের নামাজের জন্য উঠে পড়তেন আর দুপুরের কিছু সময় ঘুমিয়ে নিতেন।

প্রশ্ন ও উত্তরঃ প্রতিদিনের ঘুম ও সুস্থ শরীর - সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রশ্নঃ নবী করিম (সা.) কিভাবে ঘুমাতেন?
উত্তরঃ নবী করিম (সা.) ডান কাত হয়ে, ডান হাতের তালুর উপর গাল রেখে, কেবলামুখী হয়ে ঘুমাতেন। তিনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওযু করে নিতেন, বিছানা পরিস্কার করে নিতেন, এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে ও জাগার পরে দোয়া পরতেন।

প্রশ্নঃ রাতের বেলা কম ঘুমালে কোন রোগ হয়?
উত্তরঃ রাতে কম ঘুমালে মনোযোগ কমে, মেজাজ খিটখিটে হয়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে, এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃৎরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ে; এটি মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্ণতাও বাড়ায়। 

প্রশ্নঃ ইসলামের দৃষ্টিতে কোন সময় ঘুমানো উচিত নয়?
উত্তরঃ ইসলামের দৃষ্টিতে কিছু নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো উচিত নয়। যেমন- ফজরের পর, আসরের পর,  মাগরিবের আগে। এমনকি এশার পর লম্বা সময় জেগে থাকা নবীজী (সা.) অপছন্দ করতেন।

প্রশ্নঃ দ্রুত ঘুমানোর উপায় কি?
উত্তরঃ দ্রুত ঘুমানোর উপায় হিসেবে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখনই রাতে ঘুমানোর জন্য শুতেন, তখন তিনি তাঁর (ডান) হাত তাঁর (ডান) গালের নীচে রাখতেন এবং এই দোয়া করতেন: “আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।”

পোস্টের শেষ-কথাঃ প্রতিদিনের ঘুম ও সুস্থ শরীর - সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

পরিশেষে, ‘প্রতিদিনের ঘুম ও সুস্থ শরীর - সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন’ শিরোনামের আর্টিকেলটি আলোচনা করে আমরা বলতে পারি যে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকঠাক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে, প্রতিদিনের ঘুম খুব কম বা বেশি হলেও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে আমাদের বয়স অনুযায়ী ঘুমানো উচিত। আর যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বিশেষ-কথা: এই পোস্টে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান এবং তথ্যের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url