বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ ঘরোয়া সমাধান ও পরামর্শ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ যদি আপনি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত আপনাকে পড়তে হবে। ঘুমের মতে বাচ্চাদের হঠাৎ করে হাত পা ছুড়ে মারা বা শরীর ঝাকে ওঠার বিভিন্ন কারণ রয়েছে।
অনেকেই জানেন না এইসব ঘটার কারণ কি। শিশুদের ঘুমের সময়কার
আচরণ তাদের স্নায়বিক স্বাস্থ্য মানসিক অবস্থা এবং দৈনন্দিন অভ্যাসের
সঙ্গে জড়িত। এই কারণে ঘুমের মধ্যে ঝাঁকনি দেখা দিলে সেটিকে অবহেলা না করে
সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
পেজ সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
- বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
- নিউরোলজিক্যাল বিকাশে অস্বাভাবিক অংশ
- ঘুমের বিভিন্ন স্তরে প্রবেশের সময় ঝাঁকুনি
- ঘুমের ঘাটতির অভাবের কারণে
- নির্দিষ্ট ভিটামিন বা মিনারেল এর ঘাটতির লক্ষণ
- অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে এটি হয়
- অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পরিবেশে ঘুমের সমস্যা
- চোখে বা মাথায় স্নায়বিক চাপের ইঙ্গিত
- ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন বা ভয় পেয়ে ঝাঁকুনি
- শ্বাস-প্রশাস সমস্যা থেকে সৃষ্ট ঝাঁকুনি
- রাতের ঘুমে ঝাঁকুনি কি বিকাশ জনিত বিলম্বের লক্ষণ
- চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সঠিক সময় কখন
- শিশুর সঠিক ঘুমের পরিবেশ নিশ্চিত করার উপায়
- বাচ্চাদের ঘুমের পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব
- উপসংহার
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ বিস্তারিত আলোচনা করব। বাচ্চাদের
ঘুমের সময় আচমকা হাত-পা ছুঁড়ে মারা, শরীর কেঁপে ওঠা বা হঠাৎ ঝাঁকিয়ে ওঠার ঘটনা
অনেক বাবা-মায়ের নজরে পড়ে। এই আচরণগুলো দেখে অনেকেই ভয় পান যে, শিশুটি কোনো
গুরুতর রোগে আক্রান্ত কিনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি শিশুর বেড়ে ওঠার স্বাভাবিক
একটি অংশ এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এমন ঝাঁকুনি কমে যায়। তবে সবসময় এটি স্বাভাবিক
এমন নয়। কখনও কখনও এটি বিশেষ কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা, নিউরোলজিক্যাল অসুবিধা
কিংবা ঘুমজনিত রোগের লক্ষণও হতে পারে। তাই বিষয়টিকে সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ
করাটা জরুরি।
শিশুরা যখন গভীর ঘুমে প্রবেশ করে, তখন তাদের স্নায়ুতন্ত্র বিভিন্ন
পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই সময় পরিবর্তনগুলো অনেক সময় আচমকা ঝাঁকুনির
মাধ্যমে প্রকাশ পায়। যদি এসব ঝাঁকুনি খুব ঘন ঘন হয়, অতিরিক্ত তীব্র হয়, কিংবা
বাচ্চার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় তাহলে স্বাভাবিক ধরা যায়। অনেক সময় ঘুমের মধ্যে
ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে ঘুমের ঘাটতি, মানসিক চাপ, শরীরের কোনো পুষ্টির ঘাটতি,
বা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে।্তালই বাবা-মায়েদের উচিত শিশুর ঘুম ও আচরণ
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজন মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। এই
আর্টিকেলে আমরা জানবো বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ, কারণ এবং
করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত।
নিউরোলজিক্যাল বিকাশে অস্বাভাবিক অংশ
অনেক সময় শিশুর নিউরোলজিকাল সমস্যা থাকলে ঘুমানোর সময় ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে যদি এই ঝাঁকুনিগুলো ঘন ঘন হয়, অনিয়ন্ত্রিত হয় বা ঘুমের নির্দিষ্ট
পর্যায়ে না হয়ে এলোমেলো সময়ে ঘটে তাহলে এটি কোনো লক্ষণ হতে পারে। এই
ধরনের ঝাঁকুনির সময় শিশুর শরীর হঠাৎ শক্ত হয়ে যেতে পারে, চোখ উল্টে যেতে পারে,
এমনকি কিছু সময়ের জন্য জ্ঞানশূন্যতার মতো আচরণও দেখা যায়। এসব লক্ষণ
নিউরোলজিকাল সমস্যার সরাসরি ইঙ্গিত হতে পারে এবং অবহেলা করা উচিত নয়।
আরো পড়ুনঃ
খাবারে অরুচি ও বমি বমি ভাব কিসের লক্ষ
তবে প্রতিটি ঝাঁকুনি মানেই সমস্যা নয়। অনেক শিশুর ঘুমের শুরুতে বা ঘুমের
গভীরতায় প্রবেশের সময় স্বাভাবিকভাবে হালকা ঝাঁকুনি হতে পারে। কিন্তু যদি এই
ঝাঁকুনির সাথে শিশু বিকাশে পিছিয়ে পড়ে, চোখে চোখ না রাখে, কথা বলার বা হাঁটার
দেরি করে ।তাহলে এগুলো নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এ
অবস্থায় দ্রুত শিশুর নিউরোলজিস্ট বা শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া
প্রয়োজন, যাতে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়।
ঘুমের বিভিন্ন স্তরের প্রবেশের সময় ঝাঁকুনি
শিশু ঘুম একটি নির্দিষ্ট চক্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যেখানে শরীর হালকা ঘুম
থেকে গভীর ঘুমে এবং আবার জাগরণের দিকে চলে যায়। এই পরিবর্তনের সময়, বিশেষ করে
ঘুমের প্রথম পর্যায়ে প্রবেশের সময়, অনেকের শরীরে হঠাৎ করে একটি হালকা ঝাঁকুনি
অনুভূত হতে পারে। একে হিপনিক জার্ক বলা হয়। এটি সাধারণত একটি স্বাভাবিক
প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তি, উদ্বেগ, বা অনিয়মিত ঘুমের কারণে বেশি হতে পারে।
শিশুরাও যখন ঘুমের স্তর পরিবর্তন করে, তখন এমন ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে, যা
বেশিরভাগ সময়ই ক্ষতিকর নয়।
এই ধরনের ঝাঁকুনিগুলো খুব দ্রুত হয় এবং সাধারণত কোনো ব্যথা বা অস্বস্তি তৈরি
করে না। এটি শরীরের পেশির স্বাভাবিক সংকোচন এবং মস্তিষ্কের শিথিল হওয়ার
প্রক্রিয়ার একটি অংশ। তবে যদি ঝাঁকুনিগুলো ঘন ঘন হয়, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় বা
অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে দেখা দেয়, তখন সেটা আর স্বাভাবিক নয় ধরে নেওয়া উচিত।
সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ঘুমের ঘাটতির অভাবের কারণে
ঘুমের ঘাটতি বা পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব শিশুর ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনির একটি কারণ
হতে পারে। শিশু দীর্ঘ সময় ঘুম না পায় বা বারবার ঘুম ভেঙে যায়।তখন তাদের
স্নায়ুতন্ত্র অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এই অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে ঘুমে
ঢোকার সময় বা ঘুমের গভীরে হঠাৎ শরীর কেঁপে ওঠা বা ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে। এই
ধরণের ঝাঁকুনি মূলত শরীর ও মস্তিষ্কের ক্লান্তি থেকে উদ্ভূত হয় ।
তবে দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব থাকলে শিশুর স্নায়ু এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ
বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এবং সেইসাথে ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঝাঁকুনি, দুঃস্বপ্ন বা
ঘুম ভেঙে কান্নার প্রবণতা বাড়তে পারে। এ জন্য শিশুকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়
ঘুমাতে দেওয়া, শান্ত ও নিরাপদ পরিবেশে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
যদি ঘন ঘন ঝাঁকুনি দেখা দেয় বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গের সাথে থাকে, তাহলে
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
নির্দিষ্ট ভিটামিন বা মিনারেল এর ঘাটতির লক্ষণ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি অনেক সময় নির্দিষ্ট ভিটামিন বা মিনারেলের ঘাটতির কারণে হতে পারে। বিশেষ করে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-এর অভাব ঘুমের সময় মাংসপেশিতে অস্বাভাবিক সংকোচন বা ঝাঁকুনি সৃষ্টি করতে পারে। ম্যাগনেশিয়াম স্নায়ু ও পেশি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাই এর ঘাটতি হলে শিশুদের মাঝে ঘুমে টান ধরা, ঝাঁকুনি বা অতিরিক্ত নড়াচড়া দেখা যেতে পারে। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম ঘাটতির কারণে হাড় ও পেশির দুর্বলতা তৈরি হয়, যা রাতে ঝাঁকুনির আকারে প্রকাশ পায়।
এছাড়া, আয়রন ঘাটতির ফলে রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম নামক সমস্যা হতে পারে, যেখানে বাচ্চারা ঘুমের সময় পা নড়াতে থাকে বা টান অনুভব করে। এটি তাদের গভীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় এবং ঘন ঘন ঝাঁকুনির কারণ হতে পারে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে শিশুর রক্তে ভিটামিন ও মিনারেলের মাত্রা পরীক্ষা করে সঠিক খাদ্য ও সাপ্লিমেন্ট দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই এই উপসর্গগুলো অবহেলা না করে পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে এটি হয়
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ অনেকে এটা জানেন না। যদি আপনাকে
জানতে চান তাহলে আপনাকে এটি বিস্তারিত করতে হবে। শিশুরা সারাদিন ঃ যেমন অত্যধিক
খেলাধুলা, চিৎকার,চেঁচামেচি, ভয়াবহ বা উত্তেজনাকর কার্টুন দেখা, বাড়ির অশান্ত
পরিবেশ বা অপরিচিত পরিবেশে থাকা ।এসব তাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের উত্তেজনার
সৃষ্টি করে। মস্তিষ্ক দিনের শেষে যখন বিশ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন অতিরিক্ত
উত্তেজিত নিউরোনগুলো তা সহজে করতে পারে না। যার কারনে ঘুমে ঢোকার সময় বা ঘুমের
মাঝে হঠাৎ পেশির সংকোচন, হাত-পা কেঁপে ওঠা বা পুরো শরীরে এক ঝাঁকুনি দেখা দেয়,
যাকে Hypnic jerk বলা হয়।
এই ঝাঁকুনিগুলো সাধারণত কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং তেমন ক্ষতির কারণ নয়। তবে
শিশুর ঘুমে বারবার বিঘ্ন ঘটলে তারা ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারে, কান্না করতে পারে
বা ঘুমে ভীতিও তৈরি হতে পারে। এটা শিশুর ঘুমের মানকে খারাপ করে দেয় এবং তাদের
দৈনন্দিন মনোযোগ ও আচরণেও প্রভাব ফেলে। এ সমস্যা দূর করতে হলে বাচ্চার জন্য
রাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে । নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন, টিভি বা
মোবাইল বন্ধ রাখা, ঘুমের আগে উষ্ণ দুধ খাওয়ানো, নরম আলোতে ঘুমানো, এবং ধীরে
ধীরে শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। যদি এরপরও ঝাঁকুনি খুব
ঘন ঘন বা অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে শিশুর শিশু চিকিৎসক বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ
নিতে হবে।
অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পরিবেশে ঘুমের সমস্যা
অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম পরিবেশ শিশুর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, এবং এর ফলে
ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি দেখা যেতে পারে। শিশুর শরীর খুব সংবেদনশীল, তাই ঘরের
তাপমাত্রা যদি অস্বস্তিকর হয়, তাহলে মস্তিষ্ক ও স্নায়ু স্বাভাবিকভাবে বিশ্রামে
যেতে পারে না। ঠান্ডার সময় শরীর পেশিগুলোকে গরম রাখতে সংকুচিত করে, এতে হঠাৎ
পেশির কাঁপুনি বা ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে। গরমে অতিরিক্ত ঘাম বা অস্বস্তির
কারণে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া বা ঘুমের স্তরে বিঘ্ন ঘটে, যা শরীরের অনিয়ন্ত্রিত
নড়াচড়ার কারণ হতে পারে।
এছাড়াও, অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডায় শিশুর ঘুমের গভীরতা কমে যায়, এবং তাদের
মস্তিষ্ক বারবার সজাগ অবস্থার কাছাকাছি চলে আসে। এতে করে শিশুর ঘুমের চক্র
ঠিকমতো সম্পন্ন হয় না এবং মাঝেমধ্যে শরীর ঝাঁকিয়ে ওঠা বা আচমকা দেহ নড়াচড়ার মতো
উপসর্গ দেখা দেয়। তাই শিশুর ঘুমের জন্য ঘরের তাপমাত্রা সবসময় আরামদায়ক রাখা,
হালকা কাপড় পরানো, এবং শরীর অনুযায়ী গরম বা ঠান্ডা ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত
জরুরি। যদি এ ধরনের ঝাঁকুনি খুব ঘন ঘন হয় বা শিশুর ঘুমে বড় ধরনের সমস্যা হয়,
তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চোখে বা মাথায় স্নায়বিক চাপের ইঙ্গিত
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ জানতে হলে আপনাকে এটি ভাল করে পড়তে
হবে।বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনির অন্যতম লক্ষণ চোখে অথবা মাথায়
স্নায়বিক চাপ। যা একটি বাচ্চার জন্য অনেক ক্ষতি হতে পারে। চোখে হঠাৎ করে
ঝাপসা দেখা, চোখের পাতা অনিচ্ছাকৃতভাবে কাঁপা, বা এক বা দুই চোখ হঠাৎ বন্ধ হয়ে
যাওয়া স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় মস্তিষ্কের স্নায়ুতে চাপ পড়লে
চোখের পলকে সমস্যা দেখা দেয়।
আবার দৃষ্টিভ্রম যেমন আলো ঝলকানো বা অন্ধকার দেখা। মাইগ্রেন বা চোখের
স্নায়ু সমস্যার পূর্বাভাস হতে পারে। এসব লক্ষণকে ছোট করে দেখা ঠিক নয়, বিশেষ করে
বারবার হলে।হঠাৎ মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো, কথা জড়িয়ে যাওয়া, স্মৃতিভ্রান্তি বা
মাথায় তীব্র ব্যথা স্নায়বিক অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় মেনিনজাইটিস বা
স্নায়বিক প্রদাহ মাথায় এমন উপসর্গ সৃষ্টি করে। যদি মাথা ব্যথার সঙ্গে চোখে
অন্ধকার দেখা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার উপসর্গ থাকে, তাহলে দ্রুত নিউরোলজিস্টের
পরামর্শ নিতে হবে।
ঘুমের মধ্যেই দুঃস্বপ্ন বা ভয় পেয়ে ঝাঁকুনি
রাত্রিবেলায় যখন বাচ্চাটা ঘুমাই তখন অনেক সময় দেখা যায় যে স্বপ্নের মধ্যে
বাচ্চাটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে বা ভয় পেয়েছি তখন তাদের শরীর কেঁপে ওঠে।ঘুমের
মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা অনেক সময়ই শিশুর মধ্যে আচমকা শরীর কেঁপে ওঠা বা ঝাঁকুনি
দেওয়ার কারণ হতে পারে। ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্ক দ্রুত বিকাশের মধ্যে থাকে, যার ফলে
ঘুমের সময় তারা অনেক বেশি স্বপ্ন দেখে। কোনো ভয়ানক বা অস্বস্তিকর স্বপ্ন দেখলে
শিশুরা হঠাৎ জেগে উঠে ভয় পেতে পারে বা কান্না শুরু করতে পারে। এর সঙ্গে সঙ্গে
তাদের শরীরে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ঝাঁকুনিও দেখা যেতে পারে। যেটা মূলত ভয়ের
প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ঘটে।
এই ধরণের দুঃস্বপ্ন সাধারণত গভীর ঘুমের সময় বা ঘুমের মাঝামাঝি পর্যায়ে হয়ে থাকে।
বাবা মার উচিত শিশুকে শান্তভাবে জড়িয়ে ধরে নিরাপত্তার অনুভব দেওয়া। রাতে অতিরিক্ত
উত্তেজনাপূর্ণ কার্টুন দেখা, ভয়ের গল্প শোনা বা উদ্বেগজনক কোনো পারিবারিক ঘটনা এই
দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে। তাই ঘুমের আগে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা, গল্প বলা,
হালকা গান বা দোয়া শোনানো শিশুর মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং
দুঃস্বপ্ন ও ঝাঁকুনি অনেকটা কমিয়ে আনতে পারে।
শ্বাস-প্রশাস সমস্যা থেকে সৃষ্ট ঝাঁকুনি
যেসব বাচ্চাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে অনেক সময় দেখা যায় রাত্রিবেলা
ঘুমানোর সময় শরীর কেঁপে উঠে। যাকে ঝাঁকুনি বলা যেতে পারে।শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত
সমস্যা যেমন হাঁপানি, ঘন ঘন সর্দি বা শ্বাসকষ্ট অনেক সময় বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে
ঝাঁকুনির কারণ হতে পারে। যখন বাচ্চার শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বা বাতাস চলাচলে বাধা
আসে তখন মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরকে সজাগ করতে ঝাঁকুনি বা হঠাৎ নড়াচড়ার
মাধ্যমে সাড়া দেয়। এটা একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরকে সঠিকভাবে
অক্সিজেন পাওয়ার জন্য জাগিয়ে তোলে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো যদি বাচ্চার ঘুমের সময় নাক বন্ধ থাকে, মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়
বা শ্বাসের মাঝে শব্দ হয় তাহলে এটি শ্বাসকষ্টের লক্ষণ হতে পারে। এই অবস্থায় ঘুমের
মধ্যে ঘন ঘন ঝাঁকুনি, ঘাম বা হঠাৎ জেগে উঠা দেখা যায়। এ ধরণের লক্ষণ দেখলে শিশুর
ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্র বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত চিকিৎসা ও ঘরের
ধুলাবালি পরিষ্কার রাখতে হবে এই ধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
রাতের ঘুমে ঝাঁকুনি কি বিকাশ জনিত বিলম্বের লক্ষণ
রাতের ঘুমে ঝাঁকুনি অনেক সময় শিশুদের জন্য স্বাভাবিক হতে পারে, তবে যদি তা খুব
ঘন ঘন হয় বা দৈনন্দিন কাজে প্রভাব ফেলে, তাহলে এটি বিকাশজনিত বিলম্বের
একটি সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ যেমন কথা
বলতে দেরি, শরীরের সমন্বয়ে সমস্যা বা চোখে অস্বাভাবিক নড়াচড়া থাকে । তাহলে
বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা প্রয়োজন। কারণ মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা থাকলে ঘুমের
সময় স্নায়বিক কার্যকলাপের অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ঘুমের মধ্যে অতিরিক্ত ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি
নিউরোলজিক্যাল কোনো সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে, যা শিশুর শেখার ক্ষমতা বা
সামাজিক বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই যদি বাচ্চার ঘুমের সময় নিয়মিতভাবে
শক্তভাবে ঝাঁকুনি হয় এবং দিনে তার ব্যবহার বা বিকাশে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়,
তাহলে দ্রুত শিশু নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সঠিক সময় কখন
বাচ্চার ঘুমের মধ্যে বা জেগে থাকাকালীন ঝাঁকুনি অনেক সময় অস্বাভাবিক হতে পারে।
বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। তবে যদি এই ঝাঁকুনি নিয়মিত হয়, প্রতিদিন একই
সময়ে হয়, অথবা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করা ঠিক নয়। বাচ্চা
হঠাৎ করে চমকে উঠে কাঁদে, চোখ উল্টে যায়, শ্বাসকষ্ট হয়, অথবা অজ্ঞান হয়ে পড়ে
তাহলে এমন লক্ষণ থাকলে অবিলম্বে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সঠিক সময় হলো যখন ঝাঁকুনির সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ যেমন
জ্বর, খিঁচুনি, ঘুমের ব্যাঘাত, খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া, বা আচরণগত পরিবর্তন দেখা
যায়। বিশেষ করে যদি বাচ্চার বয়স তিন মাসের কম হয় এবং সে অস্বাভাবিকভাবে ঝাঁকুনি
দেয়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্টের যাওয়া প্রয়োজন।
কারণ এটি স্নায়বিক সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা পেলে অনেক জটিলতা
প্রতিরোধ করা সম্ভব।
শিশুর সঠিক ঘুমের পরিবেশ নিশ্চিত করার উপায়
শিশুর সঠিক ঘুম নিশ্চিত করার জন্য প্রথমেই ঘুমের পরিবেশ শান্ত, নিরাপদ ও
আরামদায়ক করে গড়ে তোলা জরুরি। ঘরের আলো নরম ও মৃদু রাখা উচিত, যাতে শিশুর ঘুমের
মধ্যে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। অতিরিক্ত আলো, শব্দ বা তাপমাত্রা শিশুর ঘুমে সমস্যা
সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঘর যেন ঠাণ্ডা ও হালকা বাতাস চলাচলের উপযোগী হয় তা
নিশ্চিত করা জরুরি। শিশু ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি বা উচ্চ শব্দ এড়িয়ে চলতে
হবে।
শিশুর বিছানা সবসময় পরিষ্কার ও আরামদায়ক হওয়া দরকার। বেশি নরম বা বেশি শক্ত
বিছানা এড়িয়ে যাওয়া ভালো, এবং বালিশ যেন উপযুক্ত উচ্চতার হয় তাও খেয়াল রাখতে
হবে। ঘুমের আগে শিশুদের একটি নির্দিষ্ট রুটিন যেমন গুনগুন করে গান গাওয়া, হালকা
মালিশ করা বা বই পড়া এগুলো শিশুদের মনে নিরাপত্তা ও শান্তির অনুভব জাগায়, যা
সহজ ঘুমে সহায়তা করে। ঘুমের সময় নির্দিষ্ট করে দিলে শিশুর শরীর ধীরে ধীরে সে
সময় অনুযায়ী মানিয়ে নিতে পারে।
বাচ্চাদের ঘুমের পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব
বাচ্চাদের ঘুমের পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বুঝতে
সহায়তা করে কখন বাচ্চা প্রকৃতপক্ষে ঘুমাতে প্রস্তুত। যেমনঃচোখ রগড়ানো, হাই
তোলা, চুপচাপ হয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো বা কান ধরে টানা ইত্যাদি আচরণ ঘুমের আগের
ইঙ্গিত হতে পারে। এসব লক্ষণ ঠিক সময়ে ধরতে পারলে শিশুকে সহজে ঘুম পাড়ানো যায়,
এবং ঘুমের মানও ভালো হয়। কারণ দেরি হলে শিশুর অতিরিক্ত উত্তেজনা তৈরি হয়, ফলে
ঘুমে যেতে অসুবিধা হয়।
এই পর্যবেক্ষণ অভিভাবকদের জন্য একটি অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত। প্রতিদিন
নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চার আচরণ খেয়াল করলে ধীরে ধীরে তার ঘুমের ধরন ও সময়
সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এতে করে শিশুকে তার প্রাকৃতিক ঘুমচক্র অনুযায়ী
ঘুমানোর সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়, যা তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময় ঘুমালে শিশু দিনের বাকি সময় আরও সতেজ ও মনোযোগী থাকে।
উপসংহারঃ বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি সাধারণত একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া
হতে পারে, বিশেষ করে নবজাতক বা ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে। তবে যদি এই ঝাঁকুনি ঘন ঘন
ঘটে, সময়ের সঙ্গে বাড়ে বা এর সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ যেমন খিঁচুনি, জ্বর,
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায়, তাহলে তা স্নায়বিক সমস্যা,
ঘুমের ব্যাধি বা বিকাশগত বিলম্বের লক্ষণও হতে পারে। সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে
উপসর্গগুলোর ধরন বুঝে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
পরিশেষে বলা যায়, ঘুমে ঝাঁকুনি সবসময় উদ্বেগের কারণ নয়, তবে এটি কখনো কখনো গভীর
কোনো সমস্যার পূর্বাভাসও হতে পারে। তাই অভিভাবকদের সচেতন থাকা ও বাচ্চার
প্রতিদিনের ঘুম ও আচরণে নজর রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে শিশুর
সুস্থ বিকাশ ও ভবিষ্যতের জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে বিশেষ করে বাবা মাকে সবসময় এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আশা করা যায় যে
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ সবকিছু জানতে পেরেছেন।
গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url