ইসলামে নারী-পুরুষের কি ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ হওয়া উচিত?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,

প্রিয় পাঠক- আসসালামু আলাইকুম, ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবন-বিধান। যেখানে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধান পরিলক্ষিত হয়। তেমনিভাবে আমাদের অর্থাৎ নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়েও ইসলামের কিছু মৌলিক বিধি নিষেধ বা দিক নির্দেশনা রয়েছে।

ইসলামে-নারী-পুরুষের-কি-ধরনের-পোশাক-পরিচ্ছদ-হওয়া-উচিত

তাই আজকে আমরা ইসলামে নারী-পুরুষের কি ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ হওয়া উচিত? এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আলোচনা করার চেষ্টা করবো-ইনশাল্লাহ।

পেজ সূচিপত্রঃ ইসলামে নারী-পুরুষের কি ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ হওয়া উচিত?

ইসলামে নারী-পুরুষের কি ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ হওয়া উচিত?

ইসলামে নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়ে যে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে তা আমরা এই অত্যাধুনিক যুগে একেবারে ভুলেই গেছি বলা যায়। যা একেবারেই কাম্য নয় শরীয়তের দৃষ্টিতে।শরীয়ত এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআন কারীম এবং হাদীস শরীফে এ সম্পর্কিত উসূল ও আহকাম তথা নীতি ও বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে মানুষের রুচি ও স্বভাবের প্রতিও একটা পর্যায় পর্যন্ত শরীয়ত অনুমোদন দিয়েছে।

নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ ও বেশ-ভূষার বিষয়ে আজকাল আমাদের সমাজে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও ফ্যাশনের একটা শক্ত প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। হাদিস শরীফে এসেছে, “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে সে তাদের দলভুক্ত।” (সুনানে আবু দাউদ: ২/৫৫৯)

পোশাক-পরিচ্ছদ যদিও বাহ্যিক বিষয় তবে একথাও তো অনস্বীকার্য যে, শরীয়তের বাহ্যিক লেবাসে -পোশাকেরও একটি বড় প্রভাব মানুষের স্বভাব ও আচরণের উপর পড়ে থাকে। কিছু পোশাক বিনয় ও নম্রতা জাগ্রত করে আবার কিছু পোশাক ভালো কাজে ও ভালো ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে কিছু পোশাক মন্দ ও অকল্যাণের দিকে আকর্ষণ করে।

ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদের কিছু নীতি ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা নারী-পুরুষ সকলের জন্য প্রযোজ্য। যেমন-

  • প্রথমত সতর আবৃত করা: এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।” (সূরা- আ’রাফ, আয়াত: ২৬)
  • বিধর্মীদের পোশাক নয় এমন পোশাক: এ বিষয়ে হাদীস শরীফে এসেছে, “নিশ্চয়ই এটি কাফেরদের পোশাক। তোমরা তা পরিধান করো না।” (সহীহ মুসলিম ৬/১৪৪; মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৯০)
  • খুব বেশি পাতলা বা আঁটশাট নয় এমন পোশাক: যে পোশাক পরিধান করলে শরীরের আকৃতি পোশাকের উপর ফুটে উঠে তা নাজায়েজ বা হারাম।
  • বিখ্যাত বা প্রসিদ্ধ পোশাক না হওয়া: রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। অতঃপর তাকে অগ্নিদগ্ধ করা হবে।” (সুনানে আবু দাউদ ৪০২৯; আততারগীব ৩/১১২)
  • অহংকার সৃষ্টিকারী পোশাক না হওয়া: এ বিষয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাক। কেননা এটা অহংকারবশত হয়ে থাকে। আর আল্লাহ তায়ালা অহংকারীকে ভালবাসেন না।” (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৬৪ হাদীস ২৭৫; মুসনাদে আহমদ ৫/৬৩ হাদীস ২৪১৯)
নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে  আরো আলোচনা করা হবে পযায়ক্রমে-

ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলামে নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম ও অনস্বীকার্য। পোশাক-পরিচ্ছদ মানুষের মৌলিক প্রয়োজনীয় বিষয়। লজ্জাস্থান আবৃত রাখা এবং সুন্দর ও পরিপাটি থাকার চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত। তদ্রূপ, শীত-গ্রীষ্মের প্রকোপ ও বাইরের ধুলোবালি থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য তা অতীব জরুরি আবরণ। মানুষের রুচিবোধ ও ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন ঘটে পোশাকের মধ্য দিয়ে। তাই পোশাক পরিধানে যথাযথ বিধি-নিষেধ পালনের গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম।

ইসলামে-পোশাক-পরিচ্ছদের-গুরুত্ব-ও-তাৎপর্য

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজসজ্জার বস্ত্র ও পরহেজগারির পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সূরা-আরাফ : ২৬)।

পোশাক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“হে আদম সন্তান! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সাজসজ্জা গ্রহণ কর। আর খাও, পান কর কিন্তু অপচয় করো না। অবশ্যই তিনি অপচয়কারীদেরকে পসন্দ করেন না।” (সূরা- আ‘রাফ ৭/৩১)। 

সুন্দর পোশাক পরিধান সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, “যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক ব্যক্তি বলল, মানুষ তো পসন্দ করে যে তার পোশাক সুন্দর হোক এবং তার জুতা সুন্দর হোক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পসন্দ করেন। অহংকার হ’ল হককে অস্বীকার করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা” (মুসলিম হাদিস নং ৯১; আবু দাউদ হাদিস নং ৪০৯২; তিরমিযী হাদিস নং ১৯৯৯; মিশকাত হাদিস নং ১০৮)

পুরুষের ফরয- সতর আবৃত হলে বাকী দেহের জন্য পাতলা কাপড়ের পোশাক পরিধান আপত্তিকর নয়। তবে আঁটশাট ও সতর প্রকাশকারী পোশাক সর্বাবস্থায় বর্জনীয়।

নারী-পুরুষ স্বতন্ত্র পোশাক পরিধান করা সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, “রাসুল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন ওই পুরুষকে যে নারীর পোশাক পরে এবং ওই নারীকে যে পুরুষের পোশাক পরে।” (আবু দাউদ, হাদিস নং ৪০৯৮)

অপচয় ও কৃপণতা সর্বক্ষেত্রেই নিন্দনীয়। পোশাক-পরিচ্ছদেও এর ব্যতিক্রম নয়। সামর্থ্য থাকার পরও কেউ যদি কৃপণতা করে নিম্নমানের পোশাক পরিধান করে ইসলামে তাদের অপছন্দ করা হয়েছে।

পোশাক-পরিচ্ছদ দ্বারা সতর আবৃত করার পাশাপাশি নিয়মিত পরিষ্কার-পরিপাটি রাখা ইসলামের নির্দেশনা। সাহল বিন হানজালিয়া (রা.) বলেন, কোনো এক সফর থেকে ফেরার পথে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রিয় সাহাবাদের লক্ষ করে বলেন, “তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে আগমন করছ। সুতরাং তোমাদের হাওদাগুলো গুছিয়ে নাও এবং তোমাদের পোশাক পরিপাটি করো, যাতে তোমাদের (সাক্ষাৎ করতে আসা) মানুষের ভিড়ে তিলকের মতো (সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন) মনে হয়। (জেনে রেখো) আল্লাহ তাআলা স্বভাবগত নোংরামি বা ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা থাকা, কোনোটাই পছন্দ করেন না।” (আবু দাউদ, হাদিস নং৭০৮৩)

আরো পড়ুনঃ 'নারী-পর্দা’ নিয়ে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক আমরা আলোচনা করব!!

পাঞ্জাবি কি সুন্নতি পোশাক জেনে নিন

পাঞ্জাবি কি সুন্নতি পোশাক? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরেছেন কিনা এটি সহীহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি বা প্রমাণিত হয়নি কিন্তু যদি কেউ পরেন তাহলে পরতে পারবেন নাজায়েজ নয়।

তবে সুন্নাহ বলতে আপনি এটা বোঝান যে, নবী (সা.)-এর আমল, তাহলে শাইখুল ইসলাম ইবনুল কাইয়ুম (র.) বলেছেন যে, নবী (সা.) এর আমল দ্বারা প্রমাণিত হয়নি যে নবী (সা.) পাজামা পরেছেন।

নবী করিম (সা.) বিভিন্ন ধরনের জোব্বা পরেছেন- ইয়েমেনি জোব্বা পরেছেন, রোমি জোব্বা পরেছেন এটা সুস্পষ্ট হাদিসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। সুনানে তিরমিজি, সুনানে নাসাঈর মধ্যে হাদিসটি রয়েছে, একাধিক হাদিসের কিতাবের মধ্যে এই মর্মে হাদিস রয়েছে। তাই যদি কেউ নবীজী (সা.) পরেছেন এ কারণে তিনি জোব্বা পরেন, তাহলে তিনি নবী (সা.)-এর আমলের কারণে সওয়াব পাবেন, শুধু জোব্বা পরার কারণে নয়।

পোশাক-পরিচ্ছদগুলো কিন্তু নবী করিম (সা.)-এর স্বভাবগত আমলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ আদাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এগুলো সরাসরি তা’আব্বুদিবা বা ইবাদত সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়। যে বিষয়গুলো ইবাদত-সংশ্লিষ্ট বিষয় না, সেগুলোর ওপর শরিয়তের বিধান সুন্নাত অর্থে প্রয়োগ করা বৈধ নয়, কারণ এগুলো আদাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়। কিন্তু যে বিষয়গুলো তা’আব্বুদি, সেগুলো রাসুল (সা.) করেছেন প্রমাণিত হলেই সুন্নাহ সাব্যস্ত হবে।

আরো পড়ুনঃ আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নেক আমল ও জান্নাত লাভ

নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে কুরআনের আয়াত

নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ তাদের ব্যক্তিত্ব, আভিজাত্য, সভ্যতা ও লজ্জাশীলতার পরিচায়ক। এর মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব যেমন ফুটে ওঠে তেমনি যথাযথভাবে না পরলে তা ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

পোশাকের গুরুত্ব তুলে ধরে কোরআনে কারীমে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

  • “হে মানব জাতি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দোষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যেরও উপকরণ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই সর্বোত্তম। এসব আল্লাহর নির্দেশনাবলির অন্যতম, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরা-আরাফ, আয়াত: ২৬)
নারী-পুরুষের-পোশাক-পরিচ্ছদ

শরীয়তে পুরুষের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর। ইসলামে পোশাক পরিধানের মূল উদ্দেশ্যই পুরো সতর ঢেকে রাখা। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

  • “হে আদমসন্তান! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।” (সূরা-আরাফ, আয়াত: ২৬)
ইসলামে নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহারে জাঁকজমক ও আড়ম্বরতা নিষেধ। যতটা সম্ভব মার্জিত পোশাক পরিধান করতে নির্দেশ দেয় ইসলাম। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
  • “আল্লাহ জাঁকজমকপূর্ণ (গর্বিত) লোককে পছন্দ করেন না।” (সূরা-আল হাদিদ, আয়াত: ২৩)
নারী-পুরুষের সর্বদা এমন পোশাক পরা উচিত যাতে তাদের আভিজাত্য ও সৌন্দর্যের পরিচয় বহন করে। যতদূর সম্ভব এমন পোশাক পরা উচিত নয়, যাতে সৌন্দর্যহীনতা প্রকাশ পায়। সম্মানহানি এবং মর্যাদা কমে যায়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ মহান তায়ালা বলেন,

  • “হে আদমসন্তান! প্রতি সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক পরিধান করবে।” (সূরা-আরাফ, আয়াত: ৩১) 
শরীয়তে পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে সতর্কতা খুবই জরুরি। কখনও যদি পোশাক শরীরের কোনো অংশ থেকে সরে যায় তাহলে দ্রুত সেটা যথাস্থানে উঠিয়ে রাখা আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

  • “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মোমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়।” (সূরা-আহজাব, আয়াত: ৫৯)

পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে হাদিসসমূহ

পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে কিছু হাদিস নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

  • নবী করিম (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয় এ দুটো জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের উপর হারাম (নিষিদ্ধ), নারীদের জন্য জায়েয (বৈধ)।” (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৬৪০, আলবানী সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ্‌ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন) যেমন- মৃতপ্রাণীর চামড়া পরিধান করা অবৈধ; তবে দাবাগত করলে তথা প্রক্রিয়াজাত করলে বৈধ। আর ভেড়া, উট ও ছাগলের পশম দিয়ে তৈরী পোশাক এর বিধান হচ্ছে– এগুলো পবিত্র ও বৈধ।
  • আব্দুল্লাহ্‌ বিন আমর বিন আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে কুসুম রঙ-এর দুটো কাপড় পরিহিত দেখে বললেন, এগুলো কাফেরদের পোশাক। তাই, তুমি এগুলো পরিধান করো না। (সহীহ মুসলিম- ২০৭৭)
  • পোশাকের ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য নারীদের বেশ ধারণ করা এবং নারীদের জন্য পুরুষদের বেশ ধারণ করা হারাম। কেননা, “নবী (সা.) নারীদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষ ও পুরুষদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীদেরকে লানত করেছেন।” (সহীহ বুখারী-৫৫৪৬)
  • পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতি যত্নবান হওয়া সুন্নত। আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তির অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এক লোক বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! মানুষ তো পছন্দ করে তার কাপড়টি সুন্দর হবে, তার জুতাটি সুন্দর হবে। তিনি বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার হচ্ছে– সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা।” (সহীহ-মুসলিম: ৯১)
  • তাছাড়া সাদা রঙের পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) বলেছেন, “তোমরা সাদা পোশাক পরিধান করো। কেননা সাদা পোশাক সর্বোত্তম পোশাক। এবং সাদা পোশাকে তোমাদের মৃতব্যক্তিদেরকে কাফন দাও।” (সুনানে তিরমিযি: ৯৯৪)
  • আবু যর (রাঃ) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আবু যার (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিনবার বলেছেন। আবু যার (রাঃ) বলেন: তারা ব্যর্থ হোক ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক। ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! তারা কারা? তিনি বললেন: লুঙ্গি প্রলম্বিতকারী, খোঁটা দানকারী ও মিথ্যা শপথ করে পণ্যসামগ্রী বিক্রয়কারী।[সহিহ মুসলিম (১০৬)]

নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে হাদিসসমূহ

মুসলমান নারীরা যে পোশাক ব্যবহার করবে তাতে যেন পর্দা পাওয়া যায় অর্থাৎ সেই পোশাক যেন তাদের সারা দেহকে আবৃত করে। সুতরাং যে লেবাসে নারীদের কেশদাম, গ্রীবা,বক্ষদেশ, উদর ও পৃষ্ঠদেশ (যেমন, শাড়ি ও খাটো ব্লাউজে) এবং  হাঁটু ও জাং (যেমন, স্ক্যার্ট্, ঘাগরা, ফ্রক্  ইত্যাদিতে) প্রকাশিত থাকে তা (সাধারণতঃ গম্য পুরুষদের সম্মুখে) পরিধান করা হারাম।

নারীদের ক্ষেত্রে এমন কোন রঙিন পোষাক পরে বাইরে বের হওয়া নিষেধ যা অন্যের দৃষ্টি আকর্ষন করে। নারীর পোষাক যেন এত ক্ষীণ ও পাতলা কিংবা লাগোয়া না হয় যা তার দেহ আবরণের জন্য যথেষ্ট নয়।

  • বর্তমানে ডিজাইন করা আকর্ষণীয় টাইটপিট বোরখা পরে যারা নিজেকে পর্দানশিন ভাবছেন তারা ভুলের মধ্যে আছেন।  ঢিলেঢালা এবং শালীন পোষাকেই নারীর প্রকৃত সৌন্দর্য ও সুরক্ষা। পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্য সুগন্ধি মেখে ঘরের বাইরে বের হতে- রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন। তিনি এমন পোষাক পরতেও মানা করেছেন যা পুরুষদের পোষাকের সাথে মিলে যায়। 
  • রাসূল (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন, সুন্দর সুন্দর জামা পরিধান করা কিংবা পোষাকে পরিপাটি হয়ে থাকা অহংকার নয়, বরং আল্লাহ পাক সুন্দর এবং তিনি বান্দার সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। এগুলো অহংকার হিসেবে তখনই গণ্য হবে যখন কেউ সুন্দর জামা গায়ে দিয়ে অন্যকে তুচ্ছ করে এবং নিজেকে সবার চেয়ে দামী ও সুন্দর ভাবতে থাকে।
  • রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা সাদা রঙের পোষাক পরিধান করো। কারণ তোমাদের অন্যান্য কাপড় ও বস্ত্র থেকে এটি উত্তম। এ সাদা কাপড়েই তোমাদের মৃতদেরকে কাফন দিও।” (তিরমিযী)
  • কেউ কেউ সবুজ রঙের পোষাক পরাকেও মুস্তাহাব বলেছেন। কারণ পবিত্র কুরআনে জান্নাতী লোকদের পোষাকের বর্ণনায় এ রঙের কথা আল্লাহ পাক উল্লেখ করেছেন। (ইনসান-২১)

আরো পড়ুনঃ ইসলামে নারীর মর্যাদা কেমন হওয়া উচিত?

ইসলামে পুরুষের পোশাকের রং কেমন হওয়া উচিত?

পোশাকের মাধ্যমে শরীর ঢাকা মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্যতম। পোশাকের মাধ্যমেই মানুষের সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের প্রভাব ফুটে ওঠে। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে সাদৃশ্য অবলম্বনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বিষয়গুলো হলো-

  1. কাফির-মুশরিকদের পোশাক গ্রহণ করা যাবে না।
  2. ফাসেক-পাপাচারীদের মতো পোশাক পরিধান করা যাবে না।
  3. বিপরীত লিঙ্গের মতো পোশাক ধারণ করা যাবে না।

পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড় পরিধানও বৈধ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতের মধ্যে পুরুষদের জন্য রেশমি কাপড় এবং স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম; কিন্তু নারীদের জন্য তা হালাল।” (তিরমিজি, হাদিস: ১৭২০)

অপরদিকে, পুরুষদের জন্য একেবারে লাল রঙের পোশাক না পরা কথা বলা হয়েছে। তাদের জন্য একেবারে গাঢ় লাল রঙের পোশাক পরিধান করা মাকরুহ। তবে হালকা লাল রঙের পোশাক পরিধান করা বৈধ। (রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৫৮, কিতাবুল লেবাস : ২০৯)

এবং সাদা, কালো, সবুজ, নীলসহ অন্যান্য রংগুলো অনুমোদিত, এবং সাদা রং পবিত্রতা ও সরলতার প্রতীক হিসেবে বিশেষভাবে মুস্তাহাব (পছন্দনীয়)।

ইসলামে নারীদের পোশাকের রং কেমন হওয়া উচিত?

ইসলামে নারীদের পোশাকের রং কেমন হওয়া উচিত? এর উত্তরে বলা যায়, ইসলামে নারীদের পোশাকের রঙের নির্দিষ্ট কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে শালীনতা বজায় রাখা মূল বিষয়। তাই কালো, ধূসর, গাঢ় নীল বা সবুজ রঙের মতো নীরব ও আকর্ষণহীন রংগুলো প্রচলিত, যা মনোযোগ আকর্ষণ করে না, যদিও প্রয়োজনে উজ্জ্বল রং পরা যায়, তবে এমন রং পরিহার করা উচিত যা পুরুষদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বা সংস্কৃতি অনুযায়ী বেমানান। যেমন- কিছু ক্ষেত্রে লাল বা খুব উজ্জ্বল রং। 

প্রশ্ন ‍ও উত্তরঃ ইসলামে নারী-পুরুষের কি ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ হওয়া উচিত?

প্রশ্নঃ পুরুষরা কি নারীদের পোশাক পরতে পারবে ইসলাম কি বলে?
উত্তরঃ না, পরতে পারবে না। নারীর পোশাক পুরুষের পরা হারাম। শুধু হারাম নয়, অভিশপ্ত কাজ। রাসূল (সা.) বলেন, “যেসব নারী পুরুষের মতো পোশাক পরে অথবা যেসব পুরুষ নারীদের মতো পোশাক পরে, তাদের ওপর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের লা’নাত, অভিশাপ।” (সুনানে তিরমিজী)

প্রশ্নঃ শরীয়তে ছেলেদের হলুদ কাপড় পরা কি হারাম?
উত্তরঃ শরীয়তে ছেলেদের হলুদ কাপড় পরা মাকরুহ বা কিছু আলেমের মতে হারাম, কারণ রাসুল (সাঃ) এসব পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করেছেন, তবে অন্য রঙের সাথে মিশ্রিত হলুদ বা লাল পোশাকে কোনো বাধা নেই।

প্রশ্নঃ সিল্কের পাঞ্জাবি পরা কি ইসলামে নিষেধ?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ইসলামে সিল্কের পাঞ্জাবি পরা পরুষদের জন্য নিষেধ। তবে কৃত্রিম সিল্ক বা রেশম মিশ্রিত কাপড় যা রেশম পোকা থেকে তৈরি নয়, তা ব্যবহার করা জায়েজ আছে। 

হাদিস অনুযায়ী পুরুষদের জন্য রেশম ও স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে এবং এটি একটি কবিরা গুনাহ, যা ইসলামে নারীদের জন্য বৈধ।

পোস্টের শেষ-কথাঃ ইসলামে নারী-পুরুষের কি ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ হওয়া উচিত?

পরিশেষে, ‘ইসলামে নারী-পুরুষের কি ধরনের পোশাক-পরিচ্ছদ হওয়া উচিত?’ শিরোনামের আর্টিকেলটি  আলোচনা করে আমরা বলতে পারি যে, বাহ্যিক পোশাক দ্বারা গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করা ও সাজ-সজ্জা করার আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত যেন গুপ্তাঙ্গসমূহ পুরোপুরি আবৃত হয়। পোশাক শরীরে এমন আঁটশাট না হওয়া চাই, যাতে এসব অঙ্গ উলঙ্গের মত দৃষ্টিগোচর হয়।

পোশাক অহঙ্কার ও গর্বের বিষয় যাতে না হয় বরং নম্রতার চি‎হ্ন পরিদৃষ্ট হয় এবং প্রয়োজনাতিরিক্ত অপব্যয় না হয়। নারীদের জন্য পুরুষের আর পুরুষদের জন্য নারীদের পোশাক যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নারীরা সুন্দর ও শালীন পোশাক পরতে পারবে। সে ক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুসরণ করাটা উত্তম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url