খাদ্যাভ্যাসে হালাল-হারামের ইসলামীক নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
প্রিয় পাঠক- আসসালামু আলাইকুম, আমাদের শারীরিক সুস্থতা হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার একটি বড় নেয়ামত। আর সুস্থ থাকার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। তবে এ ব্যাপারে একজন মুসলমান হিসেবে অবশ্যই হালাল-হারামের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকে আমরা “খাদ্যাভ্যাসে হালাল-হারামের ইসলামিক নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা” এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে হালাল ও হারাম খাদ্য গ্রহণে ইসলামিক নিয়ম নীতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।
পেজ সূচিপত্রঃ খাদ্যাভ্যাসে হালাল-হারামের ইসলামীক নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা
- খাদ্যাভ্যাসে হালাল-হারামের ইসলামীক নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা
- হালাল খাবার সম্পর্কে আল-কুরআনের আয়াত
- হালাল খাবার সম্পর্কে কিছু হাদিসসমূহ
- হারাম খাবার সম্পর্কে আল-কুরআনের আয়াত
- হারাম খাবার সম্পর্কে কিছু হাদিস
- হালাল ও হারাম খাবারের তালিকা জেনে নিন
- উপসংহারঃ খাদ্যাভ্যাসে হালাল-হারামের ইসলামীক নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা
খাদ্যাভ্যাসে হালাল-হারামের ইসলামীক নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা
মানুষ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য গ্রহণ একটি অপরিহার্য বিষয়। খাদ্য ছাড়া মানুষের জীবন রক্ষা একেবারেই অসম্ভব। তবে এখানে খাদ্যাভ্যাসে হালাল-হারামের ইসলামীক নীতিমালা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। আমাদের দেহে শক্তি জোগাতে খাবার গ্রহণ অবশ্যই অবশ্যই করতে হয়।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন’ “হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান কর। পানাহার কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আরাফ, আয়াত: ৩১)
আমাদের জীবনের অন্যান্য প্রতিটি বিধানের মতো খাবারের ক্ষেত্রেও শিষ্টাচার ও বিধি-নিষেধের শিক্ষা দিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবীজী (সা.)। তাই দৈনন্দিন জীবনে একজন মুসলমানের জন্য কোন খাবার হালাল আর কোনটি হারাম, তা জানা অপরিহার্য।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তোমরা হালাল ও পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করো এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত করো।” (সূরা নাহল, আয়াত: ১১৪)
হালাল-হারাম সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, “হে মানবজাতি, আমি তোমাদের জন্য যা দিয়েছি, সেখান থেকে হালাল এবং পবিত্র জিনিসগুলো খাও।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৬৮)
হালাল খাবার গ্রহণের মাধ্যমে মুসলিমরা আল্লাহর নির্দেশ পালন করে এবং শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিক জীবনকে আরও উন্নত করতে সক্ষম হয়। হালাল খাবার শুধু একটি ধর্মীয় বিধান নয়, এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি সুন্দর ও ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারকারী একটি উপায়। একজন মুমিনের উচিত তার খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা এবং সর্বদা হালাল এবং পবিত্র খাবার গ্রহণ করা।
হালাল খাবার সম্পর্কে আল-কুরআনের আয়াত
একজন মুমিনের পবিত্র জীবনযাপনের জন্য হালাল খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আল্লাহ তোমাদের হালাল ও পবিত্র যে রিজিক (জীবনোপকরণ) দান করেছেন, তা থেকে তোমরা আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করো।” (সুরা-নাহল, আয়াত: ১১৪)
যে সমস্ত খাদ্য, পানীয় গ্রহণ করলে আমাদের দেহের উপকার হয়ে থাকে মহান আল্লাহ তায়ালা তা হালাল করে দিয়েছেন। যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার বান্দারা শক্তি সঞ্চয় করে তার এবাদত করতে পারে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“হে মানুষ, জমিয়ে যা রয়েছে তা থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার করা এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।” (সূরা- আল-বাকারা, আয়াত: ১৬৮)
অন্য একটি আয়াতে আরও স্পষ্ট করে মানব সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে খাবারের মানদণ্ড বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতটি হলোঃ
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ كُلُوْا مِمَّا فِی الْاَرْضِ حَلٰلًا طَیِّبًا
“হে মানব সম্প্রদায় পৃথিবীর হালাল ও পবিত্র বস্তু আহার কর।” (সূরা-বাকারা: ১৬৮)
হালাল খাবার যে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে শক্তিশালী সহায়ক সেটাও কোরআনে কারীমে স্পষ্ট তুলে ধরা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য ঠিক রাখার মাধ্যমেই ইবাদত যথাযথ পালন করা সম্ভব তা সেখান থেকে প্রকাশ পেয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
فَكُلُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّٰهُ حَلٰلًا طَیِّبًا ۪ وَّ اشْكُرُوْا نِعْمَتَ اللّٰهِ اِنْ كُنْتُمْ اِیَّاهُ تَعْبُدُوْنَ
অর্থাৎ, “যদি তোমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত কর তবে তোমাদেরকে যেসব হালাল ও পবিত্র বস্তু তিনি দিয়েছেন তা থেকেই তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর নেয়ামতের শোকর আদায় কর।” (সূরা- আরাফ: ১৫৭)
হালাল খাদ্যাভ্যাস মুসলিমদের ধর্মীয় পরিচয় ও আধ্যাত্মিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল খাদ্যের বিষয় নয়, বরং ইসলামি জীবনধারার একটি প্রতিফলন। হালাল পদ্ধতি প্রাণীদের প্রতি মানবিক আচরণের ওপর জোর দেয়, যা আধুনিক পশু কল্যাণ আন্দোলনের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তবে তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খাদ্য হালাল না হলে আমাদের কোনো সৎকর্ম আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে রাসুলগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমি অবহিত।” (সূরা-মুমিনুন, আয়াত: ৫১)
হালাল খাবার সম্পর্কে কিছু হাদিসসমূহ
উত্তম খাদ্য গ্রহণ ও বৈধ পন্থায় উপার্জনের সাথে সাথে শরীর সুস্থ রাখার ব্যাপারেও ইসলামে গুরুত্বারোপ করা হযেছে। শরীরকে সুস্থ রেখে ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাকা মানুষের দায়িত্ব।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে গনীমত মনে কর।” (মুসতাদরাকে হাকেম- হাদীস : ৭৯১৬)
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “হে মানুষেরা, নিশ্চয় মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনো কিছুই কবুল করেন না।” (মুসলিম, হাদিস: ১০১৫)
হালাল ও সৎ উপার্জনের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি স্বহস্তে উপার্জিত হালাল রিজিক আহার করল, সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।” (জামিউল আখবার: ৩৯০)।
এবং “যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করে জীবন ধারণ করে, আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং তাকে কখনো শাস্তি দেবেন না।” (জামিউল আখবার: ১০৮৫)।
হাদিস শরিফে এসেছে, “হালাল রিজিকের সন্ধান করা অন্যান্য ফরজ ইবাদতের পর অন্যতম ফরজ।” (আল-মুজামুল কাবির, হাদিস: ৯৯৯৩)
হারাম খাবার সম্পর্কে আল-কুরআনের আয়াত
যদি কেউ হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে হালাল খাবার কিনে, তবে সেই খাবার তার জন্য হারাম হয়ে যায়। এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু আহার করো ও সৎকর্ম করো।” (সূরা-আল-মু’মিনুন)
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত পশু, রক্ত ও শূকর মাংস, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে জবাই-করা পশু আর গলা-চিপে-মারা জন্তু, বাড়ি-খাওয়া মরা জন্তু, পড়ে মরা জন্তু, শিঙের ঘায়ে মরা জন্তু ও হিংস্র পশুর আক্রমণে মারা যাওয়া জন্তু, তবে তোমরা যা জবাই করে পবিত্র করেছ তা ছাড়া। আজ অবিশ্বাসীরা তোমাদের ধর্মের বিরোধিতা করতে সাহস করছে না, তো তাদেরকে ভয় কোরো না, শুধু আমাকে ভয় করো। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করলাম ও তোমাদের ওপর আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম মনোনীত করলাম। তবে যদি কেউ ক্ষুধার তাড়নায় বাধ্য হয়, কিন্তু ইচ্ছা ক'রে পাপের দিকে না ঝোঁকে (তার জন্য) আল্লাহ তো ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।” (সূরা-মায়িদা, আয়াত: ৩-৪)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আর তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা সীমালঙ্গন।” (সূরা- আল-আন‘আম, আয়াত: ১২১)
যে ব্যক্তি এমন খাদ্য সংকটে পতিত হলো যে হারাম না খেলে মারা যাবে, তার জন্য জীবিত থাকার পরিমাণ হারাম খাদ্য গ্রহণ করা বৈধ। যদি তা বিষ না হয় আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয় তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শুকুরের গোসত এবং যা আল্লাহর নামে জবাই করা হয়েছে। সুতরাং যে বাধ্য হবে, অবাধ্য বা সীমালঙ্গনকারী না হয়, তাহলে তার কোন পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা- আল-বাকারা, আয়াত:৭৩)
হারাম খাবার সম্পর্কে কিছু হাদিস
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করল, বিক্ষিপ্ত চুল, ধুলাবালিযুক্ত শরীর, দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দোয়া করতে থাকে : হে প্রভু! হে প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারা শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে তার দোয়া কবুল করা হবে?” (সহীহ মুসলিম, হাদিস : ১৬৮৬)
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন, “প্রত্যেক নেশা দ্রব্যই মাদক আর প্রত্যেক নেশা দ্রব্যই হারাম।” (সহীহ
মুসলিম)
সাধারণত যেসব খাবার আমরা গ্রহণ করে থাকি, তা দুই প্রকার। একটি পশু-পাখি, অপরটি উদ্ভিদ ও শাকসবজি।
যেসব প্রাণীতে (পশু-পাখি) হারামের কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে, তা খাওয়া জায়েজ নেই। যেমন- বাঘ-সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতা বাঘ, হাতি, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, কচ্ছপ, সজারু ও বানর ইত্যাদি।
আবার, হিংস্র প্রাণী যেমন- ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা ইত্যাদি। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)- “দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র জন্তু ও নখ দিয়ে শিকারকারী প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম, হাদিস নং: ১৯৩৪)
তাছাড়া, নির্দিষ্টভাবে যেসব পশু খেতে নিষেধ করা হয়েছে, তা খাওয়া হারাম। যেমন, গৃহপালিত গাধা। জাবের (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)- “খায়বরের দিন গৃহপালিত গাধা খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।” (বুখারি, হাদিস: ৪২১৯; মুসলিম, হাদিস: ১৯৪১)
যেসব পশু বা পাখির অধিকাংশ খাদ্যই নাপাক, সেগুলোর ওপর আরোহণ করা, সেগুলোর গোস্ত-ডিম খাওয়া এবং দুধ পান করা হারাম।
হালাল ও হারাম খাবারের তালিকা জেনে নিন
যেসব খাবার (পশু-পাখি) খাওয়া হালাল-
- উট, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ, খরগোশ, গরু, হরিণ, হাঁস, হেরন (দীর্ঘ ঘাড়, লম্বা পা এবং সাধারণত লম্বা ঠোঁট সহ ধূসর বা সাদা পাখি), উটপাখি, ঘুঘু, কবুতর, সারস, মোরগ, মুরগি। (ইসলামিক পদ্ধতিতে জবাইকৃত)।
- আঁশযুক্ত সকল মাছ এবং চিংড়ি (বেশিরভাগ মত অনুযায়ী) হালাল। তবে মরা মাছ খাওয়া কিন্তু হারাম না এটা সম্পূর্ণরূপে হালাল।
- চাল, গম, বার্লি, ভুট্টা, বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটর, ছোলা, বাদাম, চিনাবাদাম।
- সকল তাজা, শুকনো, রান্না করা ফল ও সবজি।
- হালাল পশু থেকে প্রাপ্ত দুধ, পনির, দই, মাখন এবং হালাল পাখির ডিম।
যেসব খাবার (পশু-পাখি) খাওয়া হারাম-
পশু-পাখির ক্ষেত্রে কিছু নিদর্শন ও বিধি-বিধান লক্ষ্য করলে হালাল-হারাম নির্ণয় করা সহজ। যে প্রাণীতে হারামের কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে, তা খাওয়া জায়েজ নেই। যেমন-
- দাঁতবিশিষ্ট হিংস্র জন্তু: যেমন- বাঘ-সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতা বাঘ, হাতি, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, কচ্ছপ, সজারু ও বানর ইত্যাদি।
- পাঞ্জাধারী হিংস্র পাখি: যেমন, ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা ইত্যাদি।
- নির্দিষ্ট কিছু পশু: নির্দিষ্টভাবে যেসব পশু খেতে নিষেধ করা হয়েছে, তা খাওয়া হারাম। যেমন, গৃহপালিত গাধা এবং শূকরের গোশত।
- নোংরা ও নাপাক কোনো কিছু: যেমন- মৃত জন্তু, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, প্রবাহিত রক্ত এবং সেসব খাবারে কোনো প্রকার উপকার নেই যেমন বিষ, মদ, খড়কুটা, মাদকদ্রব্য, তামাক ও অন্যান্য নেশজাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি।
- শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ প্রাণী: যেমন- ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি, বিচ্ছু, কাক, চিল ইত্যাদি।
- জবাইয়ে আল্লাহ নাম না নিলে: আল্লাহ নাম নেওয়া ছাড়া জবাইকৃত হালাল পশু-পাখিও হারাম।
- নোংরা পোকামাকড়: নাপাক বস্তু থেকে সৃষ্ট পোকা-মাকড় এবং যার শরীরে প্রবাহিত রক্ত নেই, সেগুলোও নাপাক। যেমন- তেলাপোকা ইত্যাদি।
- মৃত প্রাণী ও প্রবাহিত রক্ত: সব ধরনের মৃত প্রাণী এবং প্রবাহিত রক্ত হারাম। তবে দুই ধরনের মৃত প্রাণী ও রক্ত হালাল। রাসুল (সা.) বলেন, “আমাদের জন্য দু’প্রকার মৃত প্রাণী ও দু’প্রকার রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত প্রাণী হলো, মাছ ও পঙ্গপাল। আর রক্ত হলো, কলিজা ও প্লীহা।” (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৫৭২৩; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩২১৮)
তাছাড়া গাঁজা, আফিম, ইয়াবা, বিয়ার, শ্যাম্পেইন, হেরোইনসহ এ জাতীয় অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম।
উপসংহারঃ খাদ্যাভ্যাসে হালাল-হারামের ইসলামীক নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা
পরিশেষে, আমারা উপরের আর্টিকেলটি আলোচনা করে বলতে পারি যে, হালাল-হারামের ইসলামীক নীতিমালা মেনে আমাদের সকল প্রকার খাবার গ্রহণ করা উচিত। কারণ, হালাল উপার্জনের মাধ্যমে হালাল খাদ্য গ্রহণও আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের শামিল। ইসলামে হালাল ও হারামের পার্থক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিনের জীবনে একজন মুসলমানের জন্য কোন খাবার হালাল আর কোনটি হারাম তা জানা অপরিহার্য। তাই আমাদের উচিত- পবিত্র কুরআনের আলোকে ও নবীজী (সা.) এর হাদিস মোতাবেক হালাল খাবার গ্রহণ করা আর হারাম খাবার বর্জন করা।


গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url