'নারী-পর্দা’ নিয়ে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক আমরা আলোচনা করব!!
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ,
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, বর্তমান জামানায় ইসলামে ’নারী-পর্দা’ একটি ধর্মীয় বিধান যা নারীদের শারীরিক ও মানসিক পরিশুদ্ধতা, নিরাপত্তা,মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে এবং পরিপূর্ণ মুসলিম হিসেবে নিজেদেরকে গঠন করতে সাহায্য করে থাকে এতে কোন সন্দেহ নেই।
পবিত্র কুরআনে নারীদের পর্দা বা হিজাবের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে আমরা এই পোস্টে আলোচনা করার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ। সঙ্গে থাকবেন আশা করছি-
পোস্ট সূচীপত্রঃ 'নারী-পর্দা’ নিয়ে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক আমরা আলোচনা করব!!
- কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তথা ইসলামী শরীয়তে ’নারী-পর্দা’ কতটুকু হওয়া উচিত
- ইসলামী শরীয়তে নারীদের পর্দার বিধি-বিধান কি কি
- কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নারী বেপর্দা থাকার ভয়াবহতা ও শাস্তি কি-চলুন দেখি
- ইসলামে নারীর পর্দা নিয়ে কিছু সহজ-সরল আলোচনা
- ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর পর্দা বা হিজাবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য চলুন জেনে আসি
- নারীদের পর্দা নিয়ে ইসলামিক কিছু মূল্যবান উক্তিসমূহ
- বেপর্দা নারীদের নিয়ে ইসলামিক উক্তি ও উপদেশ
- ইসলামে নারীদের জন্য নির্দিস্ট ১৪ জন মাহারম করা হয়েছে
- ইসলামে পুরুষদের জন্য নির্দিস্ট ১৪ জন মাহারম করা হয়েছে
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তথা ইসলামী শরীয়তে ’নারী-পর্দা’ কতটুকু হওয়া উচিত
পবিত্র কুরআনে সাত আয়াত এবং হাদীসের প্রায় ৭০টি বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে,
ইসলামী শরীয়তের আসল উদ্দেশ্য নারীদের পর্দা এমন হওয়া উচিত, যার দ্বারা তাদের
চলাফেরা, তাদের পোশাক পরিচ্ছদ, তাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য্যের কোন
কিছুিই অন্য বা বেগানা পুরুষের দৃষ্টিগোচর হবে না।
এরকম পর্দা বা হিজাব শুধুমাত্র একটি পর্দাবৃত বাড়ি এবং সংশ্লিষ্ট পর্দার দ্বারাই
সম্ভব করা যায়। আর এটি হচ্ছে পর্দার প্রথম স্তর। যা কিনা পবিত্র আল কুরআনে স্পস্ট
ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে।
নারীরা এমন ভাবে বড় কাপড় দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত করে বের হবে যাতে শরীরের কোন অংশ
বাহিরে প্রকাশিত না হয়। তাদের চেহারা, হাতপা, শরীরের কোন অংশ ও সাজগোজের অংশও
যাতে প্রকাশিত না হয়।
রাস্তা দেখার জন্য শুধু চোখ খোলা রাখবে বা চোখের সামনে নেট লাগিয়ে নিবে-যাতে করে
রাস্তা দেখা যায়। এটাই ইসলামের দৃষ্টিতে পর্দা।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত
রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশ করা যায়, তা
ছাড়া তাদের সৌন্দর্য ্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার
ওড়না দ্বারা বক্ষ দেশ ঢেকে রাখে।
ইসলামী শরীয়তে নারীদের পর্দার বিধি-বিধান কি কি
পর্দা শব্দটি মূলতঃ ফারসি- যার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে-হিজাব। আর পর্দা বা হিজাবের
বাংলা অর্থ আবৃত করা, গোপন রাখা, ঢেকে রাখা, অন্তরায়, আড়াল, আচ্ছাদন, আবরণ
ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায়, নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা অর্জনের
নিমিত্তে উভয়ের িইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত যে আড়াল বা আবরণ রয়েছে তাকে পর্দা
বলা হয়।
হিজাব মূলতঃ পোশাকের আবরণই নয় বরং সামগ্রিক একটি সমাজব্যবস্থ, যাতে নারী-পুরুষের
মধ্যে অপবিত্র ও অবৈধ সম্পর্ক এবং নারীর প্রতি পুরুষের অত্যাচারী আচরণ রোধের
বিভিন্ন ব্যবস্তা আছে।
পর্দা ইসলামের সার্বক্ষণিক পালনীয় অপরিহার্য বিধান। কুরআন-হাদীসের ভিত্তিতে
নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত ইত্যাদি বিধানের মতো সুস্পষ্ট এক ফরজ বিধান।
ইসলামে পর্দা করা নারী-পুরষ উভয়ের জন্যই ফরজ করা হয়েছে। পর্দার বিধান সম্পর্কে
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মুমিন
নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের একাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে
চেনা সহজ হবে এবং তারা কষ্টের শিকার হবে না।
পর্দা পালনের তিনটি পর্যায় আছে:
- ঘরে অবস্থানকালীন পর্দা
- ঘরের বাইরে গমনকালীন পর্দা এবং
- বৃদ্ধা অবস্থায় পর্দা।
গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে নারীর সতর বা পর্দা হলো পরিপূর্ণ শরীর তাদের সামনে
ঢেকে রাখতে হবে। অন্য নারীদের সঙ্গে নারীর সতর হলো হাত, মুখ, পা, মাথা, পেট ও
পিঠ ছাড়া বাকিগুলো যেমন নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত।
স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর কোনো সতর নেই। তেমনি স্ত্রীর জন্য স্বামীর কোনো সতর
নেই, সব দেখতে পারবে। তবে গোপনাঙ্গ না দেখার বিষয়ে হাদিসে নির্দেশনা এসেছে।
সুতরাং স্বামী-স্ত্রী গোপনাঙ্গ না দেখা উত্তম।
ইসলামী নারী-পর্দার কয়েকটি শর্ত:
- মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে নেওয়া। বোরকা বা অন্য কোনো পন্থায় সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা খুবই জরুরি।
- পরিহিত বোরকা অত্যধুনিক বা ফ্যাশনেবল না হওয়া।
- বোরকার কাপড় মোটা হওয়া বাঞ্চণীয়, যাতে করে শরীরের আকৃতি অনুধাবন করা না যায়।
- বোরকা ঢিলেঢালা হওয়া।
- নম্রভাবে কথা বলা ও পুরুষদের সঙ্গে মিশে না যাওয়া।
- সুগন্ধি ব্যবহার না করা।
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নারী-বেপর্দা থাকার ভয়াবহতা ও শাস্তি কি-চলুন দেখি
ইসলামে নারীদের বেপর্দা থাকার ভয়াবহতা:
মহান আল্লাহ সুবাহানাতায়ালা বলেন: হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের,
কন্যাদের ও মুসলিম নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের একাংশ নিজেদের উপর
টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে এবং তারা কষ্টের শিকার হবে না।
আল্লাহ পাক আরও বলেন:
আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের
সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে, তবে যা সাধারণত প্রকাশিত হয়ে যায় তা ব্যতিত। আর
তারা যেন তাদের ওড়না বুকের ওপর টেনে দেয়।
বেপর্দা নারীদের শাস্তি:
আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন: দুই শ্রেণির মানুষ জাহান্নামী, যাদের আমি
এখনো দেখিনি। তাদের মধ্যে এক শ্রেণি হলো এমন নারী যারা পোশাক পরিহিত হয়েও
নগ্ন, যারা অন্যদের আকৃষ্ট করে ও নিজেরাও আকৃষ্ট হয়। তাদের মাথা হবে উটের
কুঁজের মতো, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।
রাসুল সা.আরও বলেছেন:
যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে এবং পর-পুরুষদের মাঝে দিয়ে যায়, সে যেন
ব্যভিচারের পথে হাঁটলো।
বেপর্দা থাকার শাস্তি:
- বেপর্দা নারীরা পাবে জাহান্নামের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি
- জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।
- শয়তানের অনুসারী হয়ে যাবে।
ইসলামে নারীর পর্দা নিয়ে কিছু সহজ-সরল আলোচনা
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন- ইহরাম
গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ বুখারী ৪/৬৩,
হাদীস : ১৮৩৮)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
নারী হল সতর তথা ঢেকে থাকার জিনিস। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে বের হয়
তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান
করে তখন সে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।
এই হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, প্রয়োজন ব্যতীত ঘর থেকে বের হওয়া
উচিত নয়।
কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী বলেন, নারীর জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল ঢেকে রাখা
ফরয। তবে হজ্বের সময়টুকু এর ব্যতিক্রম। কেননা, এই সময় তারা ওড়নাটা
চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে, চেহারার সাথে মিলিয়ে রাখবে না। পর-পুরুষ থেকে
নিজেদেরকে দূরে রাখবে এবং পুরুষরাও তাদের থেকে দূরে থাকবে।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশতঃ কাপড় ঝুলিয়ে রাখে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার
দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না। তখন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা.
জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের ঝুল কীভাবে রাখবে?
রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এক বিঘত ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মে সালামা বললেন, এতে তো
তাদের পা অনাবৃত থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তাহলে এক হাত ঝুলিয়ে
রাখবে, এর বেশি নয়।
ইমাম তিরমিযী বলেন, এই হাদীসে নারীর জন্য কাপড় ঝুলিয়ে রাখার অবকাশ দেওয়া
হয়েছে। কারণ এটিই তাদের জন্য অধিক আবৃতকারী।
ওকবা ইবনে আমের জুহানী রা.-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাক।
এক আনসারী সাহাবী আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! স্বামী পক্ষীয় আত্মীয়
সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বললে, সে তো মৃত্যু।
এই হাদীসে বেগানা নারী-পুরুষের একান্ত অবস্থানকে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ
প্রসঙ্গে স্বামী পক্ষীয় আত্মীয়-স্বজন যেমন দেবর-ভাসুর ইত্যাদির সাথে অধিক
সাবধানতা অবলম্বনকে অপরিহার্য করা হয়েছে।
হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম
একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী। সে যখন আমার
অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে
আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে
আমাকে দেখেছিল। সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে,
যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি।
সুতরাং নারীদের পর্দা সম্পর্কে উপরোক্ত হাদীসের মাধ্যমে কিছুটা হলেও জানতে
পারলাম।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর পর্দা বা হিজাবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য চলুন জেনে আসি
ইসলামে নারী-পর্দার গুরুত্ব:
ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত সুউচ্চ। পবিত্র কুরআনে নারীকে সম্মান, অধিকার
এবং মর্যাদার যে আসন প্রদান করা হয়েছে, তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে অনন্য।
নারীর শালীনতা ও সম্মান রক্ষায় ইসলাম পর্দা প্রথাকে অপরিহার্য বিধান হিসেবে
নির্ধারণ করেছে। পর্দা নারীকে লাঞ্ছনা, অসম্মান এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি
থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি, এটি পুরুষের দৃষ্টিশুদ্ধি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের
চর্চাও নিশ্চিত করে।
ইসলামে পর্দা শুধু নারী-পুরুষের শারীরিক সৌন্দর্য আড়াল করার মাধ্যম নয়, বরং
এটি চরিত্রের পবিত্রতা রক্ষার প্রতীক। পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে থাকে ব্যক্তির
পরিচয়, মনস্তত্ত্ব এবং জীবনদর্শন। একজন নারীর পর্দাশীল জীবনাচার তার
ব্যক্তিত্বকে সম্মানিত করে, সমাজে তাকে মর্যাদাশীল অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে
এবং তাকে হয়রানি, কু-প্রস্তাব ও লাঞ্ছনা থেকে নিরাপদ রাখে
ইসলামে নারী-পর্দার তাৎপর্য:
রাসূলুল্লাহ (স.) নারীর মর্যাদা ও পর্দা প্রসঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ
করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।” (বুখারি ও মুসলিম)
নারীর লজ্জাশীলতা তার পর্দাশীলতার অন্যতম অভিব্যক্তি। ইসলামের দৃষ্টিতে
লজ্জা একটি পূর্ণাঙ্গ নৈতিক গুণ, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের চরিত্র গঠনে মুখ্য
ভূমিকা পালন করে। কিন্তু নারীর জন্য এটি তার নিজস্ব অস্তিত্বের অংশ। কারণ,
নারীর দেহের গঠন এবং সৌন্দর্য সহজাতভাবে পুরুষকে আকর্ষণ করে, যা সমাজে
বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই ইসলাম নারীর জন্য পর্দাকে
বাধ্যতামূলক করেছে।
একটি সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় পর্দা প্রথা এক অপরিহার্য উপাদান। পর্দাহীনতা
কেবল ব্যক্তিগত অবক্ষয়ই নয়, সামাজিক নৈতিকতাকেও ভেঙে দেয়। ইসলাম চায় একটি
সুন্দর, নিরাপদ এবং সদাচারপূর্ণ সমাজ, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়েই মর্যাদাশীল
অবস্থায় বসবাস করবে। পর্দা সমাজে পবিত্রতা, সৌহার্দ্য এবং শালীনতার আবহ
তৈরি করে।
নারীদের পর্দা নিয়ে ইসলামিক কিছু মূল্যবান উক্তিসমূহ
ইসলামে পর্দা নারীর শ্রেষ্ঠ অলংকার। বেপর্দা নারী ইহকাল ও পরকালে উভয়
জায়গাতেই সম্মান হারাবে সুনিশ্চিত । নারীর পর্দা, বোরকা, হিজাব, নেকাব
নিয়ে ইসলামিক কিছু উক্তিঃ
- পর্দাকে ফ্যাশন নয়, আমার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে পর্দার আবরনে ঢেকে রাখি।
- আধুনিকতা মানে পর্দাহীনতা নয়, বরং প্রকৃত আধুনিকতা হলো নিজের আত্মমর্যাদাকে বুঝতে পারা।
- নিজেকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলার জন্য পর্দা নয়। বরং পর্দা হচ্ছে নারীদের জন্য ফরজ বিধান।
- আমার পর্দা আমার গর্ব, কারণ আমি জানি আমার মূল্য কেবল চেহারায় নয়, বরং আমার আত্মমর্যাদায়।
- পর্দা আমার বাধা নয়, বরং আমার রক্ষাকবচ, এবং আমার নারীত্বের মর্যাদার প্রতীক হচ্ছে পর্দা।
- পর্দা মানে লুকিয়ে থাকা নয়, বরং নিজেকে এমনভাবে উপস্থাপন করা যা আমাকে সত্যিকারের নারী হিসাবে মূল্যবান করে তোলে।
- যে নারী তার মূল্য জানে, সে কখনো নিজের সৌন্দর্য সবার সামনে উন্মুক্ত করবে না।
- নারী পর্দার অন্তরালে থাকা উচিত। যখন সে পর্দা ভেঙে বাইরে আসে, তখন শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দেয়। (তিরমিজি, হাদিস: ১১৭৩)।
বেপর্দা নারীদের নিয়ে ইসলামিক উক্তি ও উপদেশ
ইসলামে নারীদের সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তার জন্য পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম।
ইসলাম ধর্মসহ বহু সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে নারীর শালীনতা ও পর্দাশীলতা প্রশংসিত
হয়েছে। পর্দাহীনতা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক এবং নৈতিক দিক থেকেও
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিম্নে কিছু ইসলামি উক্তি দেওয়া হলো।
বেপর্দা নারী সম্পর্কে ইসলামিক উক্তি:
- “নারীর পর্দা তার শ্রেষ্ঠত্বের ঢাল।”
- “হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ ও মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন নিজেদের ওপর চাদর টেনে দেয়।” – (সূরা আহযাব: ৫৯)
- “পর্দাহীন নারী শয়তানের হাতের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।”
- “একজন নারী যখন নিজেকে আড়ালে রাখে, তখন সে দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হয়ে ওঠে।”
- “যে নারী পর্দা মানে না, সে আল্লাহর দেওয়া সম্মানের অবহেলা করে।”
- “নারীর সৌন্দর্য তার চরিত্র ও পর্দায় নিহিত, বাহ্যিক রূপে নয়।”
- “যেখানে পর্দাহীনতা শুরু হয়, সেখানে লজ্জা ও ঈমান কমে যেতে থাকে।”
- “পর্দাহীনতা সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়।”
- “নারী যদি পর্দাহীন হয়, তবে সমাজের নৈতিক অবক্ষয় অবশ্যম্ভাবী।”
- “একজন পর্দাহীন নারী শুধু নিজের ক্ষতিই করে না, বরং পুরো সমাজের জন্য ফিতনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
ইসলামে নারীদের জন্য নির্দিস্ট ১৪ জন মাহারম করা হয়েছে
মহান আল্লাহর তায়ালার বিধান মেনে চলাই পরহেজগার নারীদের পরিচয়! নারীদের
জন্য মাহরাম ১৪ জন নির্দিষ্ট করা হয়েছে ইসলামে। এদের বাইরে অন্য পুরুষের
সামনে যাওয়া হারাম।
১. বাবা ২. আপন দাদা ৩. আপন নানা ৪. আপন চাচা ৫. আপন মামা ৬. আপন ভাই ৭.
স্বামী ৮. আপন ছেলে ৯. আপন ভাইয়ের ছেলে ১০ আপন বোনের ছেলে ১১. আপন ছেলের
ঘরের নাতি ১২. আপন মেয়ের ঘরের নাতি ১৩. আপন শ্বশুর এবং ১৪. আপন মেয়ের
জামাই।
আর বাকী যত পুরুষ আছে সবাই নারীদের জন্য হারাম।
ইসলামে পুরুষদের জন্য নির্দিস্ট ১৪ জন মাহারম করা হয়েছে
পুরুষের জন্য মাহরাম ১৪ জন নির্দিষ্ট করা হয়েছে ইসলামে। এদের বাইরে অন্য
নারীর সামনে যাওয়া হারাম।
১. মা ২. আপন দাদি ৩. আপন নানি ৪. আপন ফুফু ৫. আপন খালা ৬. আপন বোন ৭.
স্ত্রী ৮. আপন মেয়ে ৯. আপন ভাইয়ের মেয়ে ১০ আপন বোনের মেয়ে ১১. আপন মেয়ের
ঘরের নাতনি ১২. আপন ছেলের ঘরের নাতনি ১৩. আপন শ্বাশুড়ী এবং ১৪. আপন ছেলের
স্ত্রী।
আর বাকী যত নারী আছে সবাই পুরুষদের জন্য হারাম।
শেষ মন্তব্যঃ 'নারী-পর্দা’ নিয়ে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক আলোচনা
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক নারী-পর্দা একটি সমাজের শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্য।পূর্ণ উপাদান। বেপর্দা নারী কেবল ব্যক্তিগত অবক্ষয়ই নয়, সামাজিক নৈতিকতাকেও ভেঙে দেয়। ইসলাম চায় একটি
সুন্দর, নিরাপদ এবং সদাচারপূর্ণ সমাজ, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়েই মর্যাদাশীল
অবস্থায় বসবাস করবে। পর্দা সমাজে পবিত্রতা, সৌহার্দ্য এবং শালীনতার আবহ
তৈরি করে।


গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url