গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
প্রিয় পাঠক-আসসালামু আলাইকুম, নিয়মিত ফল ও সবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য
খুবই উপকারী। তবে গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থায় নিজের এবং গর্ভের সন্তানের
সুরক্ষায় নিয়মিত খাদ্য তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতে হয়।
তাই গর্ভাবস্থায় মায়েদেরকে কিছু কিছু ফল ও সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আজকে এই আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়, ‘গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি -
বিস্তারিত আলোচনা’।
পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা
- গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা
- গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর বা ঝুঁকিপূর্ণ ফল সমূহ
- গর্ভাবস্থায় খাওয়া উপকারী ফল সমূহ
- গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিৎ- সবজি সমূহ
- গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য উপকারী সবজি সমূহ
- গর্ভাবস্থায় ফল ও সবজি খাওয়ার ব্যাপারে কিছু জরুরী সর্তকতা
- প্রশ্ন ও উত্তর: গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা
- পোস্টের েইতিকথাঃ গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা
গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা
গর্ভাবস্থার সময়টা একজন মায়ের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময় অতিরিক্ত
সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি। গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার থেকে দূরে থাকার কথা বলছেন
বিশেষজ্ঞরা। তবে মানা করা সেই খাবারগুলো সব হবু মায়েদেরে জন্য ক্ষতিকর নাও হতে
পারে।
গর্ভাবস্থায় অবশ্য সব ধরনের খাবারই খাওয়া যায় কিন্তু কিছু খাবার মাঝে মাঝে কারও
কারও স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে নিষেধ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে কিংবা খাওয়া যাবে না- প্রত্যেক মায়েরই সেটা
অবশ্যই জানা থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় শিশু গর্ভে থাকার ফলে গর্ভবতী মায়ের খাবারের
দিক থেকে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। সাধারনত ফল-মূল, সাক সবজি শরীরের জন্য
অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ও উপকারী।
অপরদিকে, ফল-মূল, সাক সবজি শরীরের জন্য যেমনিভাবে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ও উপকারী
তেমনিভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়েদের শরীর- এর বিপরীত অর্থাৎ অপকার বা
ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা পরিলক্ষিত হয়।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের শারীরিক ও মানসিক নানাবিধ পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়ে
থাকে। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় মায়েদের শারিরিক ও মানসিক কিছু সমস্যা দেখা
দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় অত্যান্ত সাবধানতার সাথে চলাফেরা করা যেমন- গুরুত্বপুর্ন,
ঠিক তেমনি কিছু নিয়ম কানুন মেনে খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। একজন গর্ভবতী মা একা
একটি দেহ নয়, তার ভেতরেই বেড়ে উঠে আরো একটি নতুন প্রাণ।
আরো পড়ুনঃ
গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর বা ঝুঁকিপূর্ণ ফল সমূহ
গর্ভবতী হলে আপনার ফলের বাটিতে কিছু ফল থাকা উচিত নয়। কারণ এসব ফল গর্ভবতী
মায়েদের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। যে সমস্ত ক্ষতিকারক বা ঝুঁকিপূর্ণ
ফল গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে না সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:
কলা: যাদের ডায়াবেটিস বা
অ্যালার্জি আছে গর্ভাবস্থায় তাদের কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ, কলায়
চিটিনেস নামক ল্যাটেক্স জাতীয় পদার্থ থাকে যা অ্যালার্জিক এবং শরীরের উত্তাপ
বাড়ায়। যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
আনারস: গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়ার ফলে ব্রোমেলেন এনজাইমের কারণে
জরায়ুতে প্রাথমিক সংকোচন হতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে সাধারণত অকাল
প্রসব বা গর্ভপাত হতে পারে।
তদুপরি, ফলটি অ্যাসিড রিফ্লাক্স এবং বুকজ্বালাও খারাপ করতে পারে, যা গর্ভবতী
মায়েদের মধ্যে স্বাভাবিক। বিশেষত প্রথম ত্রৈমাসিকে এটি গর্ভপাত ও অকাল
প্রসবের ঝুঁকি বাড়ায়।
কমলালেবু: গর্ভাবস্থায় বিশেষজ্ঞরা দিনে মাত্র একটি কমলালেবু
খাওয়ার পরামর্শ দেন। যদিও গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত
পরিমাণে সেবন করলে বুক জ্বালাপোড়া এবং বদহজমের সমস্যা হতে পারে।
আঙ্গুর: গর্ভাবস্থায়, বিশেষজ্ঞরা
গর্ভবতী মায়েদের পরিমিত পরিমাণে আঙ্গুর খাওয়ার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে তৃতীয়
ত্রৈমাসিকে। অতিরিক্ত আঙ্গুর খাওয়ার ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধের সমস্যা এবং বদহজম
হতে পারে এবং শরীরে তাপ তৈরি হতে পারে, যা মা এবং গর্ভে ক্রমবর্ধমান শিশু উভয়েরই
ক্ষতি করতে পারে।
বিশেষ করে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকা মায়েদের জন্য
অতিরিক্ত আঙ্গুর খাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
কাঁচা-পেঁপে: গর্ভাবস্থায় পেঁপে পাকা অবস্থায় খেলে ভিটামিন সি,
ভিটামিন এ, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি অপরিহার্য উৎস। তবে,
কাঁচা-পেঁপে খেলে জরায়ুর সংকোচন শুরু হতে পারে কারণ এতে প্যাপেইন এবং ল্যাটেক্স
নামক এনজাইম থাকে।
তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে, কাঁচা-পেঁপে অকাল প্রসব বা গর্ভপাত ঘটাতে পারে। তাই,
কাঁচা-পেঁপে খাওয়া এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, এমনকি পরিমিত পরিমাণেও
নয়।
পলিফেনল সমৃদ্ধ ফল: পলিফেনল
সমৃদ্ধ ফল পুষ্টিকর এবং নিরাপদ হলেও, অতিরিক্ত পরিমাণে কমলালেবু খাওয়া
ক্রমবর্ধমান শিশুর জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির
মধ্যে ভ্রূণের নালী সংকোচন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ভ্রূণের নালী সংকোচন তখন হয়
যখন গর্ভধারণের সময় ভ্রূণের নালী অকাল সংকুচিত হয়ে যায়, কখনও কখনও
সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।
এটি ভ্রূণের পালমোনারি উচ্চ রক্তচাপ, ডান হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, হাইড্রোপস
ফেটালিস (ভ্রূণে অতিরিক্ত তরল জমা), এমনকি মৃত শিশুর জন্মের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য
ঝুঁকির বিকাশে অবদান রাখতে পারে।
তেঁতুল: বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশি
তেঁতুল খাওয়া গর্ভধারণের পর শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষত, প্রথম ট্রাইমেস্টারে
অতিরিক্ত তেঁতুল খাওয়া উচিত নয়।
সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গেছে, তেঁতুল গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে প্রোজেস্টেরন
হরমোনের উৎপাদন অনেকটাই কমিয়ে দেয়। এর কারণ তেঁতুলে অত্যাধিক মাত্রায় থাকা
ভিটামিন সি রয়েছে।
আর প্রোজেস্টেরনের উৎপাদন কমে গেলে শিশুর সময়ের আগে জন্ম অর্থাৎ প্রিটার্ম
বার্থের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এছাড়াও মায়ের গর্ভপাতও হতে পারে। এর পাশাপাশি
অত্যাধিক ভিটামিন সি ভ্রুণের কোষ নষ্ট করে দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় খাওয়া উপকারী ফল সমূহ
গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের সুস্থ থাকার জন্য এবং গর্ভের সন্তানের সুস্থতার
জন্য খাবার তালিকায় ফল থাকাটা খুবই জরুরী। নিম্নে কিছু উপকারী ফলের আলোচনা করা
হলো:
কলা: গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার গুরুত্ব অনেক। কলাতে আছে প্রয়োজনীয়
ভিটামিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট ও ডায়েটরি ফাইবার। এতে করে বমিভাব ও মর্নিং
সিকনেস কমাতে সাহার্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
গর্ভের বাচ্চার মস্তিষ্ক ও নার্ভ সিস্টেমের গঠন ঠিক রাকতে সাহায্য করে। শক্তি
জোগায় ও ক্লান্তি দূর করে।
কমলালেবু: কমলালেবু–আপনাকে হাইড্রেটেড
রাখে এবং এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। গর্ভাবস্থায় এটি স্বাস্থ্যকর চর্বি
সমৃদ্ধ এবং ফোলেট ধারণ করে যা ভ্রূণের নবজাতক শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থ বৃদ্ধিতে
সহায়তা করে। এছাড়াও এগুলিতে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম এবং
পটাসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে। এটি আয়রন শোষণেও সাহায্য করে।
আপেল: আপেল ফাইবার,
ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের একটি অপরিহার্য উৎস। তাই গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে
এটি খাওয়া যেতে পারে। আপেল খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, অ্যালার্জি এবং
হাঁপানির ঝুঁকি কমাতে, হজমে সহায়তা করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
আম: আম ভিটামিন এ ও সি
সমৃদ্ধ ফল যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমশক্তি উন্নত করে। তবে পরিমিত
পরিমাণে খেতে হবে, বিশেষ করে যখন এটি গর্ভাবস্থায় খাওয়া হয়। কারণ এই ফলটিতে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, খনিজ এবং ভিটামিনের অপরিহার্য উৎস রয়েছে।
পরিমিত পরিমাণে আম খেলে মা এবং ক্রমবর্ধমান ভ্রূণ উভয়েরই স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে
পারে। তাছাড়া ফলটি গর্ভাবস্থার সবচেয়ে সাধারণ জটিলতাগুলির মধ্যে একটি, যা
কোষ্ঠকাঠিন্য, পরিচালনা করতেও সহায়ক।
পেয়ারা: পেয়ারাতে আছে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও পুষ্টি যা আপেল ও কমলা থেকেও অধিক মাত্রার পুষ্টিগুণ
সম্পন্ন উপাদান। গর্ভাবস্থা পেয়ারা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করা যায়।
তরমুজ: গর্ভাবস্থায় তরমুজ
খাওয়ার মূল সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে কোষ্ঠকাঠিন্য, সকালের অসুস্থতা এবং বুক
জ্বালাপোড়ার মতো গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি পরিচালনা করা।
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে জল থাকার পাশাপাশি, এই ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং
ভিটামিনের মতো অন্যান্য পুষ্টিগুণও রয়েছে।
ডালিম: ডালিমের পুষ্টিগুণের কারণে এর বেশ
কিছু উপকারিতা রয়েছে। এগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফোলেট, ভিটামিন সি এবং আয়রনের
একটি ভালো উৎস। গর্ভবতী মা এবং গর্ভের শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এই
পুষ্টি উপাদানগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও, ডালিমের রস প্লাসেন্টার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এবং
প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সহায়তা করে। তদুপরি, এটি
অকাল প্রসব এবং বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা প্রতিরোধেও সহায়ক।
গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিৎ- সবজি সমূহ
কাঁচা পেঁপে: গর্ভাবস্থায় কাঁচা অথবা আধা-কাঁচা পেঁপে না খাওয়াই উত্তম বা উচিৎ।
কাঁচা-পেঁপে পুষ্টিকর সবজি হিসেবে বিবেচিত হলেও গর্ভাবস্থায় তা হতে পারে
নানাবিধ সমস্যার কারণ। এতে আছে উচ্চমাত্রায় ল্যাটেক্স যা জরায়ুর সংকোচন
ঘটিয়ে গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, কাঁচা পেঁপে খেলে সেটি গর্ভের শিশুর জন্য নিরাপদ নাও হতে
পারে। উল্লেখ্য, পাকা পেঁপে খেতে কোনো সমস্যা নেই। পাকা পেঁপে ভিটামিন সি-সহ
বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের একটি ভালো উৎস।
কাঁচা মূলা: ভালোভাবে না ধুয়ে খেলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর ক্ষতি হতে পারে। কারণ, এগুলোতে লিসটেরিয়া,
সালমোনিলা ও ই. কোলির মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
কাঁচা অংকুরিত বীজ: গর্ভাবস্থায় কাঁচা অংকুরিত বীজ যেমন-
ছোলা, মুগ ডাল, শিমের বীজ গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য ও সন্তানের জন্য ক্ষতিকর
হতে পারে। এগুলো সিদ্ধ না করে খেলে সালমোনেলা ও ই. কোলাই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
সজিনা: এতে রয়েছে আলফা
সিটেস্টেরল নামক এক ধরনের উপাদান। যা অনেক সময় গর্ভবতী মায়ের গর্ভপাতও ঘটাতে
পারে।
করলা: করলায় রয়েছে গ্লাইকোলাইসিস, সেপোনিক, মারোডিসিন নামক
পদার্থ যা গর্ভবতী মায়েদের অনেক ধরনের ক্ষতিকর উপসর্গের সৃষ্টি করে ৷ ক্ষতি
হতে পারে গর্ভজাত সন্তানেরও ৷ যদিও করলা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
বেগুন: যাদের শরীর এ এলার্জি রয়েছে বেগুন তাদের প্রত্যাক্ষ
শত্রু। শুধু এলার্জি রোগী নয়, গর্ভাবস্থায় ও বেগুন অনেক সময় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে
থাকে। অতিরিক্ত খেলে ঋতুস্রাব ও গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। এতে প্রচুর ফাইবার
থাকায় পেট ব্যথা ও অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে পুরোপুরি রান্না করে খাবেন। এতে
ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকর উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মনে রাখবেন, নিরাপত্তাই
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য উপকারী সবজি সমূহ
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যে সমস্ত ভিটামিন, খনিস,
ফাইবারযুক্ত সবজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সেই ধরনের কিছু সবজি নিয়ে নিম্নে
আলোচনা করা হলো:
বিটরুট: গর্ভাবস্থায় বিটরুট মা ও গর্ভের
শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী সবজি। বিটরুটগুলিতে ভিটামিন এবং ফাইবার বেশি থাকে।
এগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে সহায়তা করে।
ব্রকলি: ব্রকলিতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন
সি, ভিটামিন কে এবং ফোলেট উচ্চ মাত্রায় থাকে। এগুলি কোষ্ঠকাঠিন্য হ্রাস করার
জন্য উপকারী, হাড়কে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তাই গর্ভাবস্থায় ব্রকলি খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মিষ্টি আলু: গর্ভাবস্থায় মিষ্টি আলু
খাওয়া খুবই জরুরী। মিষ্টি আলুতে বিটা-ক্যারোটিন থাকে, যা ভিটামিন এ তে
রূপান্তরিত হয়। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য এবং কোষের বিকাশে সহায়তা করে। এছাড়াও
রয়েছে ভিটামিন বি, সি।
মটরশুঁটি: মটরশুঁটি গর্ভবতী মায়ের শরীরে
শক্তি বৃদ্ধি এবং গর্ভের শিশুর বিকাশে সহায়তা করে থাকে। এগুলি ভিটামিন সি
এবং কে–তে সমৃদ্ধ, পাশাপাশি ফাইবারও রয়েছে।
কুমড়া: কুমড়া ত্বক এবং চোখের
স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
গাজর: গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার গুরুত্ব
রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন থাকে। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে এবং
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
টমেটো: টমেটো ভিটামিন সি, কে এবং
বায়োটিন সমৃদ্ধ। গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়া যেতে পারে।
শিম: শিম গর্ভবতী মায়ের শরীরে রক্তের
পরিমাণ বজায় রাখতে এবং শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে। কারণ, এতে
রয়েছে আয়রন এবং ফোলেট।
বাঁধাকপি: এতে রয়েছে ভিটামিন সি, কে এবং
ফোলেট। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মায়ের শরীরে ক্যালসিয়ামের
পরিমাণ বজায় রাখতে সাহায্য করে
ফুলকপি: এতে রয়েছে ভিটামিন
সি, কে এবং ফোলেট।
গাঢ় সবুজ পাতাযুক্ত শাক: গাঢ় সবুজ
পাতাযুক্ত শাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন কে, ক্যারোটিনয়েড এবং
ফোলেট। এটি মায়ের রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং শিশুর বিকাশেও
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গর্ভাবস্থায় ফল ও সবজি খাওয়ার ব্যাপারে কিছু জরুরী সর্তকতা
গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন সংক্রমণ এবং অসুস্থতা থেকে রক্ষা করার জন্য
বিশেষজ্ঞরা যেসব জরুরি সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছেন তা নিম্নরূপ।
- প্যাকেটজাত ফল বা সালাদ না খাওয়ার কথা বিবেচনা করুন।
- জৈব ফল ও সবজি বেছে নেওয়ার কথা বিবেচনা করুন কারণ এতে প্রচলিতভাবে জন্মানো ফল ও সবজির তুলনায় খুব কম কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ থাকে।
- ফলও সবজিতে পচাঁ অংশ কেটে ফেলে দিন কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
- অর্ধেক ফল খাওয়ার পরিবর্তে পুরো ফলটি খাওয়ার কথা বিবেচনা করুন এবং বাকি অর্ধেক পরে খাওয়ার পরিকল্পনা করুন।
- সম্ভব হলে ফল ও সবজি ফ্রিজে রাখা এড়িয়ে চলুন।
- খাওয়ার আগে ফল ও সবজিগুলি ভালোভাবে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
- আমের মতো নির্দিষ্ট ফলের খোসা ছাড়ানোর কথা বিবেচনা করুন।
- নির্দিষ্ট ফল বা সবজির প্রতি আপনার অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করুন।
প্রশ্ন ও উত্তর: গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা
প্রশ্ন:
কখন ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময়?
উত্তর:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল সকাল। আপনি সকালের নাস্তা, দুপুর
বা রাতের খাবারেও ফল খেতে পারেন। এটি করলে গর্ভবতী মহিলাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি
পাবে।
প্রশ্ন:
কোন ফল গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে?
উত্তর:
সাধারণত, গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণে কমলা এবং কলা একটি দুর্দান্ত
পছন্দ। এই ফলগুলি হজমে, বমি বমি ভাব নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
সহায়তা করে।
প্রশ্ন:
সপ্তাহে অন্তত কতবার সহবাস করা স্বাস্থ্যকর বা উচিৎ?
উত্তর
বিশেষজ্ঞদের মতে স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর সহবাস হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্কদের
জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার। কারণ এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং হার্টের
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তবে নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।
পোস্টের েইতিকথাঃ গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা
গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর ফল ও সবজি - বিস্তারিত আলোচনা এ প্রসঙ্গে পোস্টের মধ্যে যে
সমস্ত আলোচনা করা হলো অর্থাৎ যে সমস্ত ফল ও সবজি খাওয়া গর্ভবতী মা ও গর্ভের
শিশুর জন্য ক্ষতিকারক তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
অপরদিকে গর্ভাবস্থায় যেসব ফল ও সবজি খাওয়ার জন্য নিরাপদ, সেগুলো আপনার
গর্ভাবস্থার ডায়েটে যুক্ত করুন। তবে, যদি আপনি দুই, তিনবার কোনো
নির্দিষ্ট ফল ও সবজি খাওয়ার পরে অস্বস্তি বোধ করেন, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে
যোগাযোগ করুন। আপনার ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ আপনাকে সেরা পরামর্শ দিতে সক্ষম হবেন!
বি: দ্র: এই পোস্টটি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আপনার
সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আশা করি, উপকৃত হবেন। ভালো থাকবেন। আর
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।



গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url