জন্মের পর শিশুকে টিকাদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ- বিস্তারিত আলোচনা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,

প্রিয় পাঠক- আসসালামু আলাইকুম, জন্মের পর শিশুকে টিকাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, টিকাদান প্রত্যেকটি শিশুর জন্মগত মৌলিক অধিকার। জন্মের পর শিশুকে টিকাদান অত্যন্ত জরুরি কারণ এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন জটিল ও সম্ভাব্য জীবন-হুমকিস্বরূপ রোগ থেকে রক্ষা বা দেহের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে থাকে।

জন্মের-পর-শিশুকে-টিকাদান-কতটা-গুরুত্বপূর্ণ-বিস্তারিত-আলোচনা

তাই আজকে আমাদের পোস্টের আলোচ্য বিষয় হলো- জন্মের পর শিশুকে টিকাদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো, ইনশাল্লাহ্।

পেজ সূচিপত্রঃ জন্মের পর শিশুকে টিকাদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ- বিস্তারিত আলোচনা

জন্মের পর শিশুকে টিকাদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ- বিস্তারিত আলোচনা

বিশেষজ্ঞদের ভাষায়- টিকা হলো একটি জৈবিক পদার্থ যা শিশুর শরীরকে নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করে। টিকাদান শিশুদের জন্য ঢালের মতো কাজ করে, তাদের ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে রক্ষা করে যা তাদের খুব অসুস্থ করে তুলতে পারে। সময়ের সাথে সাথে টিকা অনেক বিপজ্জনক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

জন্মের পর শিশুকে টিকাদান সমাজে রোগের প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিও কমায়, যার ফলে অন্যান্য শিশুরাও নিরাপদ থাকে। টিকাগুলি নিরাপদ এবং কার্যকর কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়, যা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক সময়গুলোতে নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা প্রদান করে থাকে।

জন্মের পর শিশুকে টিকাদান কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জন্মের পর শিশুকে টিকাদানের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যখন একটি শিশু টিকা গ্রহণ করে, তখন তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অ্যান্টিবডি তৈরি করে প্রতিক্রিয়া জানায় যা ভবিষ্যতে যদি তারা সেই নির্দিষ্ট জীবাণুর মুখোমুখি হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
জন্মের-পর-শিশুকে-টিকাদান-কেন-গুরুত্বপূর্ণ?
টিকাগুলি শিশুদের হাম, পোলিও এবং হুপিং কাশির মতো বিপজ্জনক রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে - এই রোগগুলি একসময় ব্যাপক ছিল কিন্তু টিকাদান কর্মসূচির কারণে এখন অনেক কম সাধারণ হয়ে উঠেছে।

সময়মত টিকা দেওয়া হলে খুবই কার্যকর। যেমন- ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের পোলিওর মতো রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই তাদের আগে থেকেই বিশেষ টিকা দেওয়া হয়। এই টিকাগুলো মিস করলে শিশুরা নিরাপদ নয় এবং মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই কারণেই শিশুকে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখার জন্য টিকাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জন্মের পর শিশুর সাধারণ টিকাগুলো কি কি?

জন্মের পর পরই শিশুর সাধারণ টিকাগুলি হলো:
  • BCG vaccine (বিসিজি - যক্ষ্মা),
  • Hepatitis B virus (হেপাটাইটিস বি)
  • Polio vaccine (পোলিও টিকা - ওপিভি)
 পরবর্তী সময় অন্যান্য যেসব টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া হয় সেগুলো হলো:
  • Pentavalent Vaccine (পেন্টাভ্যালেন্ট - ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস বি, এবং হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি)
  • Pneumonia Vaccine (নিউমোনিয়ার টিকা - পিসিভি), এবং
  • Measles and Rubella Vaccine (হাম ও রুবেলার টিকা - এমআর)
উপরোক্ত টিকাগুলো অবশ্যই সময়মতো দিতে হয়।

জন্মের পর শিশুর প্রথম টিকাদান

আসলে শিশুর জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের যে শাল দুধ পান করানো হয় সেটাই হচ্ছে প্রথম টিকা। এটা আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত নির্ভেজাল প্রাকৃতিক টিকা। এছাড়া সরকারিভাবে বা গর্ভমেন্ট অফিসিয়ালি যে টিকাগুলো দিয়ে থাকে ইপিআই (EPI) সিডিউল- এর মাধ্যমে সেগুলোর মধ্যে সর্ব প্রথম যে টিকাটি শিশুকে দেওয়া হয় তা হলো:
জন্মের-পর-শিশুর-প্রথম-টিকাদান
BCG vaccine (বিসিজি) অর্থাৎ যক্ষার টিকা- যেটা শিশু জন্মের পর যত দ্রুত সম্ভব দিতে হয় অর্থাৎ ১৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে।

এছাড়া সরকারী হাসপাতাল, সূর্যের হাসি ক্লিনিক অথবা অনেক প্রাইভেট ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন।  

শিশুকে টিকাদানের ফলে যেসব রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া

জন্মের পর শিশুর টিকাদান তাদের অনেক মারাত্মক এবং বিভিন্ন জটিল ও সম্ভাব্য জীবন-হুমকিস্বরূপ রোগ থেকে রক্ষা বা দেহের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে থাকে। নিম্নে বিভিন্ন টিকা ও রোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
  • BCG vaccine (বিসিজি টিকা - যক্ষ্মা): যক্ষার ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা প্রাথমিকভাবে ফুসফুসকে প্রভাবিত করে কিন্তু অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিসিজি টিকা শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করে, বিশেষ করে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে।
  • Hepatitis B virus (হেপাটাইটিস বি ভাইরাস): এতে লিভারের সংক্রমণ যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী লিভারের ক্ষতি বা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  • Polio vaccine (পোলিও টিকা - ওপিভি): একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা স্থায়ী পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে, শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। Polio vaccine (পোলিও টিকা - ওপিভি টিকাদান বিশ্বব্যাপী পোলিও প্রায় নির্মূল করেছে।
  • Pneumonia Vaccine (নিউমোনিয়ার টিকা - পিসিভি): ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, বা রক্তপ্রবাহের সংক্রমণের কারণ হতে পারে, বিশেষ করে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ।
  • Measles and Rubella Vaccine (হাম ও রুবেলার টিকা - এমআর): এই অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাল সংক্রমণগুলি শিশুদের নিউমোনিয়া, মস্তিষ্ক ফুলে যাওয়া বা শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার মতো গুরুতর জটিলতা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।
  • ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি এবং টিটেনাস (ডিপিটি): ডিপথেরিয়া- গুরুতর কারণ গলা সংক্রমণ এবং শ্বাসকষ্ট। হুপিং কাশি- এর ফলে তীব্র কাশির আক্রমণ হয় যা শিশুদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে। টিটেনাস- একটি জীবন-হুমকিস্বরূপ সংক্রমণ যা বেদনাদায়ক পেশী শক্ততা।
  • Influenza vaccine: একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা শিশুদের মধ্যে আরও তীব্র হতে পারে, যা নিউমোনিয়া বা অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।
  • রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন: রোটাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, যা ছোট বাচ্চাদের মধ্যে তীব্র ডায়রিয়া এবং পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে।
উল্লেখিত সকল টিকাগুলো একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এগুলো শিশুদের এমন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে যা সময়মত টিকাদানের মাধ্যমে প্রতিরোধযোগ্য।

শিশুকে টিকা দেওয়ার বিভিন্ন ধাপসমূহ

সাধারণত শিশুর জন্মের পর তিনটি ধাপে টিকা দেওয়া হয়ে থাকে-
  • প্রথম ধাপ জন্মের সময়: শিশুর জন্মের পর প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে- টিবি, হেপাটাইটিস বি এবং পোলিওর মত প্রাথমিক টিকা দেওয়া হয়। যা শিশুকে মারাত্মক সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা করে।
  • দ্বিতীয় ধাপ নির্দিষ্ট বয়সে টিকা: শিশুর জন্মের পর ৬ সপ্তাহ থেকে শুরু করে ১২-১৮ মাস বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন টিকা দেওয়া হয়। যেমন- ডিপথেরিয়া, কক্লাস, টিটেনাস, হাম-রুবেলা, এবং মেনিনজাইটিসের টিকা।
  • তৃতীয় ধাপ বুস্টার ডোজ: আবার কিছু টিকার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সে পুনরায় বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়। যেগুলো শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর রাখতে সাহায্য করে।

জন্মের পর শিশুদের সরকারি টিকাদান সময়সূচি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মান ও নির্দেশনা অনুযায়ী টিকাদান অতি সাবধানতার সহিত সঠিক পরিমানে শিশুর যথাযথ বয়সে প্রদান করা হয়।

০-১১ মাস এবং ১৫ মাস বয়সের শিশুদের সরকারি টিকাদান সময়সূচি:
রোগের নাম টিকার নাম ডোজের সংখ্যা ডোজের মধ্যে বিরতি টিকা শুরুর বয়স
যক্ষা বিসিজি জন্মের পর থেকে
ডিফথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস বি, হিমোফাইনলাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন ডিপিটি হেপাটাইটিস-বি, হিব ৪ সপ্তাহ ৬ সপ্তাহ থেকে
নিউমোকক্কাল জনিত নিউমোনিয়া পিসিভি ভ্যাকসিন ৪ সপ্তাহ ৬ সপ্তাহ থেকে
পোলিও মাইলাইটিস ওপিভি ৪ সপ্তাহ ৬ সপ্তাহ থেকে
হাম ও রুবেলা এমআর টিকা ৯ মাস থেকে
ধনুষ্টংকার টিটি ১৫ মাস বয়স পূর্ণ হলে

শিশুর টিকাদানের কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শিশুর টিকাদানের কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে বেশিরভাগ শিশুই টিকগুলো খুব ভালোভাবে গ্রহণ করে থাকে।

শিশুর টিকাদানের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ:
  • এক বা দুই দিনের জন্য হালকা জ্বর।
  • ইনজেকশনের জায়গায় ব্যথা বা সামান্য ব্যথা।
  • ইনজেকশন সাইটে লালভাব বা ফোলাভাব দেখা যায়।
  • ঠিকমত ঘুমাতে চায় না বা ক্লান্তিরোধ করে।
  • শিশুর অস্থিরতা বা বিরক্তিভাব পরিলক্ষিত হয়।
  • শিশু খাবার ক্ষেতে চায় না।
এগুলো একটি স্বাভাবিক লক্ষণ যা কিনা সাধারণত এক বা দুই দিনের মধ্যে চলে যায়। আর বেশি সমস্যা মনে হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্য-কেন্দ্রে অথবা মাঠকর্মীকে খবর দিন।

প্রশ্ন ও উত্তরঃ জন্মের পর শিশুকে টিকাদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ- বিস্তারিত আলোচনা

প্রশ্ন:
টিকা দেওয়ার পরেও কি শিশুর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

উত্তর:
টিকা দেওয়ার পরেও কি শিশুর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছেে এবিষয়ে যদিও কোনো টিকাই শতভাগ কার্যকর নয়, টিকা দেওয়া ব্যক্তিরা যারা এই রোগে আক্রান্ত হয় তারা প্রায়ই টিকা না দেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় হালকা লক্ষণ অনুভব করে থাকে।

প্রশ্ন:
শিশুকে টিকা দিয়ো কি সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ?

উত্তর:
হ্যাঁ, শিশুকে টিকা দিয়ো সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। কারণ, টিকাগুলি সুরক্ষার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয় এবং শিশুদের গুরুতর রোগ থেকে রক্ষা করে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সাধারণত হালকা হয়, যেমন ব্যথা বা জ্বর।

প্রশ্ন:
আমি কি নির্দিষ্ট কোন ভ্যাকসিন বাদ দিতে পারবো?

উত্তর:
নির্দিষ্ট কোন ভ্যাকসিন বাদ দিলে আপনার শিশুকে গুরুতর অসুস্থতার জন্য সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। প্রস্তাবিত সময়সূচী অনুসরণ করে সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

পোস্টের শেষ-কথাঃ জন্মের পর শিশুকে টিকাদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ- বিস্তারিত আলোচনা

স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য জন্মের পর শিশুকে  টিকাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। মেডিকোভার পেডিয়াট্রিক্সের মতো পরিষেবাগুলি দ্বারা প্রদত্ত টিকাগুলি গুরুতর রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এগুলি বিপজ্জনক রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করে, সংক্রমণের বিস্তার রোধ করে। আপনার শিশুদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে, আপনি নিশ্চিত করছেন যে তারা সুস্থভাবে বেড়ে উঠছে এবং গুরুতর অসুস্থতার হুমকি থেকে মুক্ত। টিকা বিশ্বকে অনেক বেশি নিরাপদ স্থান করে তুলেছে।

বি: দ্র: এই পোস্টটি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আপনার সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি মাত্র। আশা করি, উপকৃত হবেন। ভালো থাকবেন। আর ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url