শীতকালে শিশুর ত্বকের সঠিক পরিচর্যায় করণীয় ‍কি কি?

 শীতকালের আবহাওয়া সাধারণত আর্দ্র হয়ে থাকে তাতে শিশুর ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ। অন্য ঋতুর চেয়ে শীত ঋতুর ব্যাপারটা একেবারেই আলাদা। এ সময়ে শিশুর প্রতি রাখতে হবে বাড়তি সতর্কতা। শিশু মায়ের গর্ভে উষ্ণ তাপমাত্রায় থাকে। তাই পৃথিবীর তাপমাত্রায় সে শীত অনুভব করে।

শীতকালে-শিশুর-ত্বকের-সঠিক-পরিচর্যায়-করণীয় -কি-কি?

তাছাড়া শিশুর শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি হতেও সময় লাগে। তাই যে শিশু কিছুদিন হল পৃথিবীতে এসেছে তাকে উষ্ণ তাপমাত্রায় রাখতে এই শীতে আর্দ্র পরিবেশে আপনার ছোট্ট শিশুর ত্বকের জন্য চাই বিশেষ পরিচর্যা।

পোস্ট সূচীপত্রঃ শীতকালে শিশুর ত্বকের সঠিক পরিচর্যায় করণীয় ‍কি কি?

শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন ও পরিচর্যায় যা যা করা অত্যাবশ্যক

শীতকালে সাধারনভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের চেয়ে শিশুদের তুলনামূলক বেশি গরম কাপড় নিশ্চিত করতে হবে। কয়েক জোড়া শীতের কাপড় ব্যবহার করবেন। দুই একদিন পর পর কাপড় পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিবেন।

শীতকালে শিশুদের পোশাক কেমন হওয়া উচিত:
শীতে শিশুদের নিরাপদ রাখার প্রথম ও প্রধান উপায় হলো তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে কাপড় পরানো উচিত। এবং আরো বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আবার তীব্র শীতে শিশুর ঠান্ডা না লাগে। অথার্ৎ শীতের তব্রিতা অনুযায়ী পোশাক পরানো।

শীতে শিশুদের গোসল:
শীতে শিশুদের বেশি বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গোসল হচ্ছে এর প্রধান উপায়। তদের শরীরের তেল, ময়লা, ধূলো-বালি পরিষ্কার করতে গোসল অত্যাবশ্যক। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আবার ঠান্ডা লেগে না যায়।

শিশুদের ত্বকের যত্নে লোশন ব্যবহার:
শিশুদের ত্বক শুষ্ক হলে তাতে লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে ফলে ত্বক আর্দ্র ভাব চলে আসবে। শিশুকে গোসল করানোর পর টাওয়েল দিয়ে মুছে তারপর মশ্চারাইজার যেকোন ভালো ক্রিম লাগানো যেতে পারে।


কাপড় ব্যবহার:
শীতে শিশুদের গরম সুতি কাপড় ব্যবহার করা উচিত তাতে শরীর দ্রুত গরম হয়।

ডায়াপার ব্যবহার:
বেশি শোষণ ক্ষমতার ডায়াপার ব্যবহার করলে শিশুদের ঠাণ্ডা লাগার প্রবণতা কম থাকে।

ঠাণ্ডা লাগলে যা করবেন:
বেশি শীতে শিশুদের ঠাণ্ডা লেগে তাদের নাক বন্ধ হয়ে যায় ফলে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এজন্য না ঘুমের আগে নাকে ড্রপ ব্যবহার করবেন।

শীতকালে শিশুর ত্বক সম্পর্কে কিছু কথা

শীতকালে শিশুদের ত্বকের ব্যাপারে প্রথমেই জানা দরকার সচরাচর কি ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তার উপর ভিত্তি করে হালকা ও প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি বিভিন্ন লোশন ও ক্রিম ব্যবহার করে শিশুর ত্বককে সুরক্ষিত রাখা যায়।
  • নরম ও সংবেদনশীল ত্বক: সাধারণভাবে শিশুর ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। সহজেই ধূলাবালি, দূষণ বা আবহাওয়ার পরিবর্তনে, চুলকানি, রুক্ষতা দেখা দিতে পারে।
  • শিশুর আরাম ও আনন্দ: শিশুর ত্বক সুস্থ থাকলে শিশুর আরাম ও মনের আনন্দ বাড়ে। অসুস্থতা কমে হয় এবং স্বস্তির ঘুম হয়। শিশুর সামগ্রিক আচার ব্যবহারে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
  • ভবিষ্যৎ অভ্যাস গড়ে তোলা: শিশুকাল থেকেই ত্বকের সঠিক যত্নের  অভ্যাস তৈরি হলে পরবর্তীতে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা এড়ানো সহজ হয়।

শীতের প্রারম্ভে শিশুর ত্বকের যত্ন ‍ও পরিচর্যায় কি করা উচিত?

আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে শরতের শেষেই শীতের শুরু অনুভূত হয়ে থাকে। আর শীতে আমাদের ত্বক সবচেয়ে বেশি নাজুক হয়ে পড়ে। তাই শিশুসহ সবার জন্য প্রয়োজন ত্বকের যত্নে বিশেষ খেয়ালী হওয়া। এ সময় শিশুদের বিশেষ পরিচর্যা ও একটু বাড়তি যত্ন নিলে তারা ভালো থাকবে।

শীতকালে শিশুরা ত্বকসহ সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় বেশিরভাগ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শীতের আবহাওয়া অত্যন্ত শুষ্ক থাকে আর তার মাঝে বাতাসে ধূলোবালি তো আছেই। ফলে শিশুরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

শীতকালে-শিশুর-ত্বকের-সঠিক-পরিচর্যা

যেভাবে ত্বকের যত্ন ও পরিচর্যা করবেন:
শিশুর ত্বক খুব সংবেদনশীল। অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে পড়ে। তাই শিশুর মুখ ও সারা শরীরে বেবি লোশন, বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন। সমস্যা হলে অবহেলা না করে দ্রুত শিশুরোগ ও ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তাতে আপনার শিশু ভালো থাকবে।

যেসব পোশাক পড়াবেন:
শিশুকে অবশ্যই সুতি বা উলের পোশাক পরানো উচিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে সরাসরি উলের পোশাক যাতে গায়ে নাকে লাগে। উলের লোমে শিশুর অ্যালার্জি হতে পারে। সুতি কাপড় পরিয়ে তার ওপর উলের পোশাক পরানো ভালো। পোশাকটি হতে হবে নরম কাপড়ের। খসখসে কাপড়ের পোশাক শিশুর নরম ত্বকের সমস্যার কারণ হতে পারে।


তবে হালকা শীতে শিশুর গরম পোশাকটি খুব বেশি গরম কাপড়ের হওয়া উচিত নয়। কারণ খুব বেশি গরম কাপড় পরালে গরমে ঘেমে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

শীতে শিশুর খাদ্য:
শীতকালে দেখা যায় শিশুদের খাওয়ার আগ্রহ কমে যায়। তাতে শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাই শিশুদের ঘনঘন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। ত্বকের কোমলতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ এবং ফলের রস খাওয়ানো উত্তম। বিশেষ করে গাজর, বিট, টমেটো শিশুদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।

এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি দিয়ে খিঁচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। শিশুরা এ সময় যেন কোনো ধরনের ঠাণ্ডা খাবার না খায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এলার্জী হয় এমন খাবার পরিহার করা উচিত।

শীতে শিশুর ত্বকে কি কি রোগ হতে পারে!

শীতে সব বয়সের মানুষেরই কম-বেশি ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে  শিশুদের চামড়া আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে সব সময় মানিয়ে নিতে পারে না বলে তাদের ত্বকের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকার দরুণ ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আবার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে রোগ-জীবাণুরাও সহজেই আক্রমণ করে থাকে।

শীতে শিশুর ত্বকে অনেক ধরনের রোগ হলেও মূলতঃ অ্যাকজিমা, ইকথায়সিস, ঠোঁট ফাটা, হাত-পা ফাটা, এলার্জি, মুখে ঘা ইত্যাদি সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে।

অ্যাকজিমা:
এই সমস্যা শিশুদের ক্ষেত্রে শীতকালে খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়। এটা বংশগত কারণের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের কারণগুলো যুক্ত হয়ে রোগটি  তৈরি হয়।

শিশুদের মুখে, হাত-পায়ে এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। প্রথমে চামড়া লাল খসখসে হয়। সেখান থেকে তরল আঠালো পানি বের হয়। কখনো কখনো চুলকানি থাকে।আবার  অনেকের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড চুলকানি হতে পারে। এবং কখনো ইনফেকশন হওয়াতে পুঁজ ও ঘা হতে পারে।

নিরাময়:
প্রথমত অ্যান্টি হিস্টামিন সিরাপ এক চামচ করে দুবার এক সপ্তাহ থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত খেতে পারে। বয়সভেদে ট্যাবলেটও দেওয়া যেতে পারে। ইনফেকশন হলে কখনো কখনো অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খাওয়ানো যেতে পারে।

তবে শিশুর বয়স, ওজন ও স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে অবশ্যই চিকিৎসক দেখিয়ে এ ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত। আপাতত ক্ষতস্থানে স্থানীয়ভাবে শ্যাম্পু, পটাশিয়াম-পারম্যাঙ্গানেট সলিউশন দিয়ে পরিষ্কার করা যেতে পারে।

এলার্জি:
শীতকালে এলার্জির প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কারণ আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে ধূলাবালি ও বিভিন্ন ছত্রাক বাতাসে বেশি পরিমাণে থাকে। এতে করে শিশুরা খুব সহজেই এলার্জিতে আক্রান্ত হতে পারে। আবার অনেক শিশু বিশেষ কোন খাবারের কারণেও আক্রান্ত হতে পারে।

নিরাময়:
খাদ্যজনিত অ্যালার্জির জন্য খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিন। যেসব খাবারে এলার্জির সমস্যা, তা এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে অ্যান্টিহিস্টামিন সিরাপ বা ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে।

ইকথায়সিস:
এটিও এক ধরনের বংশগত রোগ, যা শীতকালে বৃদ্ধি পায়।

নিরাময়:
ইমোলিয়েন্ট ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত: নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়। এবং স্টেরয়েড জাতীয় মলম ব্যবহার করা যায়। খাওয়ার ওষুধ হিসেবে ভিটামিন ‘এ’ দেওয়া যেতে পারে।

ঠোঁট ফাটা: শীতকালে কম বেশি সবার ঠোঁট ফাটার প্রবণতা বেড়ে যায়। ঠোঁট ফেটে গিয়ে কখনো কখনো রক্তের মতো বের হতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে ঠোঁট ফাটার জন্য ব্যথা হতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় শিশুরা খেতে পারে না। বিশেষ করে ঝাল জাতীয় খাবার।

নিরাময়:
শীতে শিশুদের ঠোঁট ফাটার জন্য লিপজেল, ভ্যাসলিন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেসমস্ত শিশুদের ঠোঁট বেশি ফাটার প্রবণতা তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সকালে, দুপুরে ও রাতে এ সমস্ত ক্রিম ঠোঁটের লাগানো উচিত।

হাত-পা ফাটা:
শীতে পায়ের গোড়ালি ও হাতের তালু সাধারণত ফেটে যায়।
 
নিরাময়:
এই রোগের জন্য নিরাময়ে ইমুলিয়ান ব্যবহার করা যেতে পারে। পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে।

মুখে ঘা:
শীতকালে মুখে ঘায়ের সম্ভাবনা একটু বেশি দেখা যায়।

নিরাময়:
মুখে ঘা হলে তার চিকিৎসা দ্রুত করা উচিত। তাতে করে কার্যকর ফল পাওয়া যায় এবং শিশুর ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়। নবজাতককে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় দু’বার ভেজা কাপড় বা তুলা দিয়ে জিহ্বা পরিষ্কার করে দিতে হবে।

সাবধানতা: সবর্দা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন। ঘর-ধূলাবালি মুক্ত রাখুন। শিশুর পোশাক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।

শেষমন্তব্যঃ শীতকালে শিশুর ত্বকের সঠিক পরিচর্যা

উপরিক্ত সকল আলোচনায় বলা হয়েছে শীতকালে শিশুর ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তার বিভিন্ন উপায় সমূহ আলোচনা করা হয়েছে যাতে করে আপনরা আপনাদের শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে পারেন সহজেই। শীতে শিশুদের ত্বকের যত্নে বিশেষ খেয়াল রাখুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url