শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয় - বিস্তাারিত আলোচনা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আমরা যারা বাবা-মা আছি সবাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় কম-বেশি চিন্তিত থাকেন। সবাই চায় যেন শিশুরা সুস্থ-সবল থাকে আর এটি নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

শিশুর-স্বাস্থ্য-রক্ষায়-করণীয়-বিস্তাারিত-আলোচনা

এজন্য আমাদের কিছু করণীয় আছে সেগুলো হচ্ছে, সুসষম খাবার বা পুষ্টি, নিয়মিত টিকা দান, পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রিয় পাঠক, এই পোস্ট আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় ‘শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়’।

পেজ সূচিপত্রঃ শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয় - বিস্তাারিত আলোচনা

শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয় - বিস্তাারিত আলোচনা

শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় প্রথমেই মাথায় চলে আসে তাদের সুস্থ বৃদ্ধি এবং বিকাশ। তার জন্য অবশ্যই সুষম খাবার বা সঠিক পুষ্টি  নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক পুষ্টি শারীরিকবৃদ্ধি, জ্ঞানী বিকাশ এবং সামগ্রিক সুস্থতা কে সমর্থন করে থাকে। সুষম খাদ্য বা সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য তালিকায় সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা।

শিশুর বয়সের স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে কিনা, ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা. ঘুমোচ্ছে কিনা এ নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তার কোন শেষ নাই কিন্তু সে তুলনায় শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।

শিশুর-স্বাস্থ্য-রক্ষায়-করণীয়-বিস্তাারিত-আলোচনা

যে সমস্ত শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে বা স্কুলগামী সে সমস্ত শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ সময় চেষ্টা করতে হবে তাদেরকে একটি স্বাস্থ্যকর সুষম বা পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত করানো। শিশুকাল থেকেই এসব খাদ্যের অভ্যাস করতে পারলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মায়েদের ১ম ৩ মাস - বিশেষ কিছু খাবারের পরামর্শ

শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক

শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করা।

শারীরিক সুরক্ষা বলতে বুঝায়-

  • সঠিকভাবে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া
  • সময়মতো টিকা প্রদান নিশ্চিত করা
  • অসুস্থ হলে সঠিক চিকিৎসা ঔষধ এর ব্যবস্থা করা
  • পুষ্টির বা সুষমখাবার নিশ্চিত করা
  • বাসায় First Aid-এর ব্যবস্থা রাখা।

মানসিক ও সামাজিক সুরক্ষা বলতে বুঝায়-

  • শিশুদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ সুন্দর করে গড়ে তোলা
  • তাদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা ও সমর্থন প্রদান করা।
  • শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
  • নিরাপদ পরিবেশ  বলতে বুঝায়-
  • শিশুকে মানসিক বা যৌন নির্যাতন, অবহেলা এবং ক্ষতিকর প্রথা থেকে রক্ষা করা।
  • স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা অর্থাৎপরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন  এবং নিরাপদ খেলা-ধূলার ব্যবস্থা করা।

কিভাবে শিশুদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বৃদ্ধি করা যায়

  • শিশুদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বা সুস্থতা বৃদ্ধি করতে হলে শিশুকে অবশ্যই নিয়মিত সুষম বা পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। সুষম বা পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম জাতীয় খাবার এবং সবুজ শাক-সবজি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা যায় যেতে পারে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান নিশ্চিত করতে হবে।
  • তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিশেষ যত্নশীল হতে হবে যেমন নিয়মিত হাত ধোয়া, দাঁত ব্রাশ করা, নখ কাটা, গোসল করা। শিশুকে খেলা-ধুলা ও ব্যায়ামে উৎসাহিত করতে হবে এবং ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে রাখতে হবে। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ তাদের শরীর ও মন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • শিশুর বয়স অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। নবজাতক শিশুদের দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন হতে পারে, আর বড় শিশুরা দিনে ১০-১২ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
  • শিশুকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং বয়স অনুযায়ী প্রয়োজনীয় টিকা দিয়ে রাখতে হবে। শিশুর শারিরীক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি, মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সাথে সময় কাটানো, কথা বলা এবং তাদের অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় কোন কোন খাবার পুষ্টিকর? - জানা জরুরি

শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় ছোটোবেলা থেকেই শিশুকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করুন। যে খাবার গুলো শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়, মস্তিকের বিকাশ ঘটায়, শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে, ওজন বৃদ্ধি ঘটায় সেই সমস্ত খাবার নিয়মিত নিয়ম করে খাওয়াতে হবে।

  • যেমন-টাটকা ফল-সব্জি, প্রোটিন বা আমিষযুক্ত খাবার, দুধ, ডিম, মাছ ইত্যাদি। অর্থাৎ যে সমস্ত খাবারের মধ্যে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি, ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় সে সমস্ত খাবার খাওয়াতে হবে।
  • পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো অভ্যাস ছোটোবেলা থেকে করলে, পরবর্তিতে তারা সেই সমস্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতেই পছন্দ করবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানোর সাথে সাথে তাদের স্বাস্থ্যকর খাবারে এর উপকারিতা জানিয়ে রাখুন আর অবশ্যই অস্বাস্থ্যকর খাবারের ক্ষতিকর দিকগুলো জানিয়ে রাখুন। তাহলে শিশু স্বাস্থ্য সচেতনতা ধারণাটি তাদের আয়ত্তে আসবে।

গরমে শিশুর পরিচর্যা ও প্রতিপালন

গরমে-শিশুর-পরিচর্যা-ও-প্রতিপালন

গরমে অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সময়ে  শিশুদের মাঝে কিছু সাধারণ রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। যেমন প্রচণ্ড গরমে শরীরে পানি কমে ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়, অতিরিক্ত ঘামে শিশুরা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়, বেশি দুর্বল হয়ে গেলে হজমার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

  • এই সময় ছোট বাচ্চাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বুকের দুধ পান করাতে হবে প্রচুর পরিমাণে দল খাবার দিতে হবে বিশুদ্ধ পানি বা  নারিকেল এর পানি ও বাড়ির তৈরি বিভিন্ন ফলের জুস খাওয়ানো যেতে পারে। স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার বা বাসি খাবার খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরাতে হবে বিশেষ করে  সুতি কাপড়।
  • বাইরে যাওয়ার সময় আপনার শিশুকে বড় হাতার জামা, প্যান্ট এবং মোজা পরিধান করান ।
  • অতিরিক্ত টাইট জুতা ও পোশাক পরানো শিশুদের ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলতে হবে।পোশাক, তোয়ালে বা অন্য কোনো ব্যক্তিগত জিনিসপত্র অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে ভাগ করবেন না।
  • গোসল অথবা সাঁতারের পরে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে শরীর শুকাতে হবে।
  • পোষা প্রাণীদের বাচ্চাদের থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে যদি তাদের ছত্রাকের সংক্রমণের কোনো লক্ষণ থাকে।

শীতে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা

গরমের মত শীতকালেও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশেষ যত্ন নিতে হয়। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক ও ধূলাবালি থাকার কারণেই মূলত শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টা অভিভাবকদের একটু বেশি সচেতন থাকতে হয়। তবে এ সময়টাতে শিশুদের বিশেষ পরিচর্যা নিলে শীতেও শিশুরা সুস্থ থাকবে।

  • শীতে শিশুর গায়ে গরম কাপড় তথা উলের পোশাক পরিয়ে রাখা উচিত তবে সরাসরি উলের কাপড় না পরিয়ে তার নিচে সুতি কাপড় পরানো উত্তম। কারণ উলের লোমে শিশুদের এলার্জি হতে পারে।
  • শীতকালে সাধারণভাবে কুসুম গরম পানি খাওয়ানো উচিত অর্থাৎ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দাঁত ব্রাশ করা, হাত মুখ ধোয়া, খাওয়াসহ নানাবিধ কাজে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। শিশুকে গোসলের সময় একইভাবে হালকা গরম পানি ব্যবহার করা উচিত তবে নবজাতকের বেলায় সরাসরি গরম পানি ব্যবহার না করে কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দেওয়া উত্তম।
  • এ সমূহ শিশুদের খাবারের প্রতি আগ্রহ অনেকটাই কমে যায় তাই প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।যেমন ডিমের কুসুম, ফলের রস, সবজির স্যুপ. গাঁজার. বিট ইত্যাদি।
  • শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শীতকালে সবচেয়ে বড় সমস্যা ত্বক। বিশেষ করে এ সময় তাদের বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ দেখা দেয়। কারণ, তাদের ত্বক বড়দের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল। তাই শিশুর মুখে ও সারা শরীরে বেবি লোশন, বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন নিয়মিত। অন্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

শিশুর শারীরিক যত্ন সম্পর্কে - কিছু কথা

শিশুর শারীরিক যত্ন সম্পর্কে কিছু উপায় দেখে নেয়া যাক-

  • শিশুর প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রক্রিয়াজাত খাবার না দিয়ে বাসায় তৈরি খাবারে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করুন। যেমন- ফ্রোজেন ফুড।
  • প্রতিদিন আপনার শিশুকে কমপক্ষে একটি করে সুষম খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন- একটি প্লেজকে যদি আমরা ৪ ভাগে ভাগ করি, তার অর্ধেক ফল ও সবজি, এক-চতুর্থাংশ শস্য এবং প্রোটিন দিয়ে বাকি এক চতুর্থাংশ পূরণ করুন।
শিশুর-শারীরিক-যত্ন-সম্পর্কে-কিছু কথা
  • শিশুর প্রধান পানীয় হিসেবে তাকে পানি খেতে উৎসাহিত করুন। সারাদিনে যেন আপনার শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করে সেটি নিশ্চিত করুন।
  • আপনার শিশুকে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে এক ঘণ্টা শারীরিক পরিশ্রম করতে দিন। তাকে মাঠে বা পার্কে নিয়ে খেলাধুলা করতে দিন বা দৌড়াদৌড়ি করতে দিন।
  • আপনার শিশুর খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা, ভিটামিনস, মিনারেলস এবং ভিটামিন-বি টুয়েলভ নিশ্চিত করুন।

অপরদিকে পরিমিত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন কারণ, বেশি খাওয়ার কারণে আপনার শিশু আবার মোটা বা স্থূল হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে শিশুকে জোরাজোরি করে খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

শিশুর মানসিক যত্ন সম্পর্কে - কিছু কথা

শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শারীরিকভাবে যেমন যত্ন নেওয়া প্রয়োজন তেমনি মানসিকভাবে যত্ন নেওয়াও আবশ্যক। শিশুর শারীরিক যত্ন অর্থাৎ  বেড়ে উঠা খাদ্যের নির্ভর করে থাকে আর মানসিক যত্ন তার পরিবারের হাতে নির্ভর করে।

শিশুর-মানসিক-যত্ন-সম্পর্কে-কিছু কথা
  • শিশুকালে বিভিন্ন অনুভূতি যেমন- ভালোলাগা, মন্দলাগা, আবেগ, কষ্ট, দুঃখ ইত্যাদি মানিয়ে নেয়া  নির্ধারিত হয়ে যায়। তাই শারীর যত্ন পাশাপাশি শিশুর মানসিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
  • ছোট বাচ্চাদের যে কোন ইচ্ছা, আগ্রহ অথবা যেকোনো ভীতিকর পরিস্থিতি যেটা বড়দের কাছে হালকা মনে হবে সেগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া।
  • সন্তানদের উপর নিজের ইচ্ছামত যেকোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেক অভিভাবকের লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে শিশুদের মানসিক বিকাশ শুরু হয়ে যায় খুব ছোটবেলা থেকেই। শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিজেদের আবেগ, চাওয়া পাওয়া কোনোভাবেই তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তারা যেমন সেভাবেই বিকশিত হতে দিতে হবে তাদের।
  • আমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি একটা বিষয় পরিলক্ষিত হয় এটা হচ্ছে অন্যের  সন্তানের সাথে নিজের সন্তানের যেকোনো বিষয়ে তুলনা করা। এটা মধ্যেই উচিত নয় এতে করে তাদের ভিতর হীনমন্যতার জন্ম নেয়। ছোট ছোট বাচ্চারা দুষ্টুমি করবে, চাঞ্চল্য ভাব দেখাবে এতে অতিরিক্ত শাসন করা যাবে না কারণ, এটা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 
  • শিশুদের ইচ্ছা ও স্বাধীনতার মূল্যায়ন করতে হবে। কোন মতেই তাদের প্রতি  অনাগ্রহ দেখানো যাবে না। তাদের প্রতি সব সময় পজিটিভ মাইন্ডে থাকতে হবে। ভুল করতেছে যেনেও করতে দিতে হবে কারণ, ভুল থেকেই সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব।

শিশুদের খাওয়ানোর কিছু টিপস

প্রতিটি শিশুই সুস্থ থাকার জন্য বা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সুষমা খাদ্য অভ্যাস এর বিকল্প নেই। কিন্তু শিশুকে খাওয়ানো যে কতটা কঠিন বিষয় তা শুধু মায়েরাই জানেন। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে তাদের খাওয়ানো অধিকতার সহজ হয়ে যায়।

  • ছোট ছোট বাচ্চাদের যাদের বয়স ৬ মাস থেকে এক বছর তাদের খাবার খাওয়ানোর ধরন একটু ভিন্ন হলেও ব্যাপারটা কিন্তু একই। আপনার শিশুকে রং বেরঙের খাবার দিন বাচ্চারা এ সময় রঙের প্রতি আকর্ষণ বোধ করবে তাতে করে খাবার খাওয়ানো সহজ হয়ে যাবে।
  • শিশুদের খাবার খাওয়ানের সাথে সাথে নিজেরাও কিছু খাবার খান তাতে আপনার শিশু আপনাকে অনুসরণকরে খাবার খাবে বা উৎসাহিত হবে।
  • সবচেয়ে বড় কথা খাবার সব সময় সুস্বাদু করার চেষ্টা করবেন। এবং মিষ্টি খাবার বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন কারণ শিশুরা মিষ্টি একটু বেশি পছন্দ করে।
  • প্রতিদিন একই খাবার না খাওয়ায়ে ভিন্ন ভিন্ন খাবার খাওয়ান বা খাবারে  ভিন্নতা আনুন।  শিশুকে খাওয়ানোর সময় শিশুর সাথে মজার মজার গল্প করুন।

তাতেও সম্ভব না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ ঘরোয়া সমাধান ও পরামর্শ

বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিবন্ধকতা গুলো কি কি? জেনে নিন

বাংলাদেশের শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, যা তাদের সুস্থ জীবন ও বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো হলো:

  • স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তিতে বৈষম্য
  • অপুষ্টিজনিত সমস্যা
  • পরিবেশগত সামাজিক কারণ
  • রোগের ঝুঁকি
  • শিশু রক্ষা ও সহিংসতা

এই প্রতিবন্ধকতাগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং এগুলোর সমাধানে দারিদ্র্য বিমোচন, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিতকরণ এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো বিষয়গুলিতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।

কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তরসমূহ

১. প্রশ্ন: শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার কি?

উত্তর: শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের নিরাপত্তা, সুস্থ পরিবেশ এবং  মা- বাবা তথা পরিবারের অকৃত্রিম ভালোবাসা।

২. প্রশ্ন: শিশুদের মানসিক রোগের লক্ষণ কী কী?

উত্তর: শিশুদের মানসিক রোগের অনেকগুলো লক্ষণ দেখা যায় যেমন, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, হজমের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা, খিদা কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাব, অমনোযোগী হওয়া ইত্যাদি।

৩. প্রশ্ন: নবজাতককে কখন রোদে দিতে হয়?

উত্তর: সূর্যের আলো ভিটামিন ডি তৈরিতে সাহায্য করে এবং শিশুর হাড় গঠন ও জন্ডিস কমাতে সহায়ক। আপনার নবজাতককে প্রতিদিন সকাল ৯ টা বা দশটা এর মধ্যে অথবা বিকালে তিনটার পর থেকে ২০ থেকে ২৫ মিনিট হালকা রোদে রাখা যেতে পারে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন রোদ লাগানো যেতে পারে।

৪. প্রশ্ন: শীতকালে শিশুর মুখ ঢেকে ঘুমানো উচিত?

উত্তর: না, শীতকালে শিশুর মুখ ঢেকে ঘুমানো উচিত নয় কারণ শিশুরা তাদের মাথার অতিরিক্ত তাপ বের করে দেয়।

পোস্টের শেষকথাঃ পেজ সূচিপত্রঃ শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয় - বিস্তাারিত আলোচনা

শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় সম্পর্কে উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে, শিশুর শারীরিক সুস্থতায় যেমন, সুষম খাদ্য বা পুষ্টির প্রয়োজন তেমনি মানসিক সুস্থতায়েও বিভিন্ন রকম পরিবেশগত এবং পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির দিকেও বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরী। বিষেশতঃ আপনার শিশুর সুস্বাস্থ্য আপনার উপরই নির্ভরশীল।

বিশেষকথা: এই পোস্টে প্রদত্ত তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞান এবং তথ্যের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, এবং এটি চিকিৎসা পরামর্শ নয়। যেকোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্বেগের জন্য বা আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সর্বদা একজন যোগ্যতাসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url