গর্ভাবস্থায় কলা খেলে কি বাচ্চার ওজন বাড়ে
আসসালামু ওয়ালাইকুম, গর্ভাবস্থায় কলা একটি পুষ্টিকর ও সহজলভ্য ফল যা কিনা গর্ভবতী
মা ও বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা পুষ্টিমান উপাদান গর্ভবতী মায়ের
স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং বাচ্চার বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
থাকে।
ছবি
আজকে আমরা এই পোষ্টে - মায়েরা গর্ভাবস্থায় কলা খেলে কি কি উপকার হয় ও বিভিন্ন
তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
পেজ সূচিপত্র ঃ গর্ভাবস্থায় কলা খেলে কি বাচ্চার ওজন বাড়ে
গর্ভাবস্থায় কলা খেলে কি বাচ্চার ওজন বাড়ে
পরিমিত পরিমাণে কলা খেলে গর্ভবতী মা ও বাচ্চার সুস্থতায় দারুণ উপকারী। তাই এই
সহজলভ্য ফলটিকে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের খাবার মেনুতে অবশ্যই রাখুন।
গর্ভাবস্থা একজন মহিলার জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ সময়, তবে এই সময়ে স্বাস্থ্যকর
জিনিস বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মায়েদের বাচ্চার সঠিক বৃদ্ধি এবং
বিকাশের জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। আপনার
খাদ্যতালিকায় তাজা ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভূক্ত করা উচিত কারণ এগুলো প্রয়োজনীয়
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও ফাইবারযুক্ত। এরকম একটি স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর
খাবার (ফল ) হল কলা।
কলাতে আছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট ও ডায়েটরি ফাইবার। এতে
করে বমিভাব ও মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহার্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। গর্ভের বাচ্চার মস্তিষ্ক ও নার্ভ সিস্টেমের গঠন ঠিক
রাকতে সাহায্য করে। শক্তি জোগায় ও ক্লান্তি দূর করে।
গর্ভাবস্থায় ৮ মাসে বাচ্চার ওজন কত হওয়া স্বাভাবিক
গর্ভবতী মহিলার জন্য বাচ্চার ওজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মায়ের স্বাস্থ্য ও
পুষ্টির উপর নির্ভর করে। একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার জন্য বাচ্চার ওজন সঠিক
হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ৮
মাসে বাচ্চার ওজন সাধারণত ৩১৫০ থেকে ৪২৫০ গ্রাম হয়। ৮ মাসের গর্ভের বাচ্চার ওজন
স্বাভাবিক হওয়া উচিত। গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বাচ্চার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
এসময় মায়ের পেটে কিছু বাহ্যিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়
- কম্পন ও ধাক্কা অনুভূত হওয়া: এই সময়ে বাচ্চা গর্ভের মধ্যে মায়ের পেটে নিয়মিত কম্পন ও ধাক্কা অনুভূত হয় তবে মাঝে মধ্যে নড়াচড়ার পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে, কারণ গর্ভে জায়গা ছো্ট হয়ে আসে।
- ঘোরা বা কাত হওয়া: গর্ভে বাচ্চার শরীরের অবস্থান পরিবর্তন অনুভূত হওয়া।
- মৃদু লাথি মারা: মায়ের গর্ভে যেহেতু সংকীর্ণ স্থান তাই লাথি বা ধাক্কার গতি কিছুটা কম হতে পাবে কিন্তু নিয়মিত অনুভূত হওয়া উচিত। সাধারণত, দিনে ১০ বার তার চেয়ে বেশি নড়াচড়া অনুভূব করা স্বাভাবিক।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন কত হওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের ওজন ১১ থেকে ১৫ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক হতে
পারে তবে এ ওজন বৃদ্ধি একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়ে থাকে। এটা নির্ভর করে
গর্ভধারণের আগে মায়ের ওজন কেমন ছিল, তার ওপর। Body Mass Index হলো উচ্চতা আর
ওজনের অনুপাত। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আদর্শ Body Mass Index হলো ১৮ দশমিক ৫
থেকে ২৪ দশমিক ৯।
Body Mass Index ১৯ -এর কম হলে তাদের ক্ষেত্রে ওজন ১৭ কেজি পর্যন্ত বাড়ালেও তা
স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
Body Mass Index২৫-এর বেশি হলে তাদের ওপন ৭ কেজি বাড়ালেই তা যথেষ্ট মনে করা হয়ে
থাকে।
কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট প্রতিটি মায়ের জন্য থাকাটা অত্যন্ত জরুরি যাতে করে
বাচ্চার বৃদ্ধি ও সুস্থতার প্রতিচ্ছবি হয়। প্রতিটি মা চান তার বাচ্চা
যেন শক্তিশালী ও সুস্থভাবে জন্ম নেয়। তাই গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন পর্যবেক্ষণ করা
শুধু তথ্য নয়, বরং এটি মায়ের ভালোবাসারই এক পরম অনুভূতি। প্রতিটি বাচ্চার ওজন
বাড়তে থাকে ৮ সপ্তাহে মাত্র ১ গ্রাম থেকে শুরু করে ২০ সপ্তাহে প্রায় ৩০০ গ্রামহয়,
এবং ৪০ সপ্তাহে গড়ে ৩৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার ওজন চার্ট: সাপ্তাহিক চার্ট:
গর্ভাবস্থায় প্রতি সপ্তাহে প্রতিটি বাচ্চার ওজন ও উচ্চতা বাড়ে। নিম্নে তার
সাধারণ একটি চার্ট দেওয়া হলো:
গর্ভকাল (সপ্তাহ) গড় ওগন
(গ্রাম) গড় উচ্চতা (সেমি)
৮ ১ ১.৬
১২ ১৪ ৫.৪
১৬ ১০০ ১১.৬
২০ ৩০০ ১৬.৪
২৪ ৬০০ ৩০.০
২৮ ১০০০ ৩৭.৬
৩২ ১৭০০ ৪২.৪
৩৬ ২৬০০ ৪৭.৪
৪০ ৩৫০০ ৫১.২
গর্ভাবস্থায় কি কি করণীয়:
- গর্ভধারণের আগে প্রতিটি মায়েকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিতে হয়।
- গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবার বাচ্চার বিকাশ নির্ভর করে থাকে। এজন্য মায়েদেরকে খাবারের প্রতি যত্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। খাবারের তালিকায় প্রচুর ভিটামিন সি, আয়রন, ফলিক এসিড, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার থাকা খুবই গুরুত্বপূর্।
- নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন Medicine সেবন করবেন না।
- গর্ভাবস্থায় অন্ততপক্ষে ৪-৫বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
- গর্ভকালীন যে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
- সুস্থ প্রসবের জন্য গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ভাবে ফিট থাকাটা খুবই জরুরী।
- প্রসবের সময় রক্ত ক্ষরণ হতে পারে তাই আগে থেকে রক্তের ডোনার ব্যবস্থা করে রাখা অবশ্য উচিত।
- বিভিন্ন টিকা যেমন:- কোভিট , টিটি প্রভৃতি নিতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় মায়েদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
আট মাসের একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য সময়টা খুশির একই সাথে উংকন্ঠারও বটে। আর
মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাপার এই সময়ে মা এবং মায়ের আশেপাশের সবাই বাচ্চার বাবা
থেকে শুরু করে আত্নীয় প্রতিবেশী পর্যন্ত প্রত্যেকের মায়ের প্রতি বিশেষ যত্নশীল
হওয়া বাঞ্চনীয়।
গর্ভাবস্থায় বর্জণীয়:
গর্ভাবস্থায মায়েদের শারীরিক অনেক কিছু খেয়াল রাখা আবশ্যক। য়েমন-
- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস ও শেষ মাস সহবাস পরিহাস করা উচিত।
- যথাসম্ভব যাবতীয় দুশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বেশি পরিশ্রম হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না।
- গর্ভাবস্থায় কিছু খাবার আছে যেমন- আনারস, পেঁপে, কলিজা ইত্যাদি বেশি খাওয়া যাবে না।
- বাইরের ফাস্ট ফুট জাতীয় খাবার বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যাবে না।
- ভারী কোন কাজ যেমন- কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা, ভারী জিনিস বহন ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হবে।
- দূরপাল্লার যাতায়াত করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url