যেসব গুণী নারীরা দুনিয়াতে বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছেন
আসসালামু ওয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
প্রিয় পাঠকবৃন্দ- যেসব গুণী নারীরা দুনিয়াতে বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছেন এবং যাদের জীবনীতে রয়েছে দৃষ্টান্ত মূলক ঘটনা ও বিশাল ত্যাগ।
আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে দুনিয়াতে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের জীবনী যেন আমাদের জন্য বেহেশতের পথপ্রদর্শক। তাই আজকে সেরকম কয়েকজন নারী সাহাবীদের ঈমান, আমল ও ত্যাগের কথা আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাল্লাহ।
পেজ সূচিপত্রঃ যেসব গুণী নারীরা দুনিয়াতে বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছেন
- বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত নারী সাহাবীদের নাম
- সর্বশ্রেষ্ঠ চার বেহেশতী নারী সাহাবী
- নারীদের মধ্যে কে সর্বপ্রথম বেহেশতে প্রবেশ করবে
- বেহেশতে নারীদের মধ্যে প্রধান হবেন যে নারী
- বেহেশতে পুরুষরা পাবেন হুর আর নারীরা কি পাবেন
- বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত নারী সাহাবীদের গুরুত্ব
- ইসলামে ২০ জন প্রসিদ্ধ নারী সাহাবীর নাম জিনে নিন
- বেহেশতে নারীরা যে সমস্ত বিশেষ বিশেষ নিয়ামত পাবেন তা জানুন
বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত নারী সাহাবীদের নাম
যে মহিলারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত অবস্থায় যে
মহিলারা সবসময় আল্লাহর ইবাদত নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। তাদেরকে মূলত সাহাবী বলা হয়।
এ নারী সাহাবীদের মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য সরাসরি অনেকে বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকেই সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলার নাম জানেন না।
এই নারী সাহাবীর আমলও তো সবসময় আল্লাহর এবাদত এবং অনুগত্য করতেন। সব সময় ভালো
কাজ এবং সঠিক পথে চলাচল করার জন্য আল্লাহতালা খুশি হয়ে বেহেস্তের ঘোষণা করে দিয়েছেন। হাদিসের মধ্যে বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলাদের নাম গুলো ঘোষণা করা হয়েছে।
চলুন আমরা দেখে নেই- বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত মহিলা সাহাবীদের নাম সমূহঃ
- খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রাঃ ( রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী)
- হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসালাম এর স্ত্রী)
- ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা)
- উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা (আবু তালহা রাঃ এর স্ত্রী)
- মরিয়ম বিনতে ইমরান (আ.) (ঈসা আঃ মা )
- উম্মে হারাম বিনতে মিলহাম (আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা এর খালা)
- হাফসা রাঃ ( রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী)
- আসিয়া রাঃ (ফেরাউনের স্ত্রী)
- রবি বিনতে মুআওযায।
- সুরাইয়া আল আসাদিয়া।
- গুমায়সা বিনতে মিলহান (রাঃ)
সর্বশ্রেষ্ঠ চার বেহেশতী নারী সাহাবী
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার চারটা দাগ কেটে
ওনার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন " তোমরা কি জানো এগুলো কি?" সাহাবিগণ উত্তর দিলেন
" আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভাল জানেন"। রাসুল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন
" সর্বশ্রেষ্ঠ চার বেহেশতী নারী হল খদিজা বিনতে খুআলিদ রাদি আল্লহু আনহা, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ
রাদি আল্লহু আনহা, মারইয়াম বিনতে ইমরান, এবং আসিয়া বিনতে মুযাহিম (ফেরাউনের
স্ত্রী) ।
নারীদের মধ্যে কে সর্বপ্রথম বেহেশতে প্রবেশ করবে
নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে বেহেশতী হবেন? এই বিষয়ে কোন সহিহ বর্ণনা আমাদের
জানা নেই। বিভিন্ন হাদিসে বেহেশতী নারীদের নেত্রী কারা হবেন, তাঁদের বর্ণনা
এসেছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ’বেহেশতের নারীদের সর্দার হবেন-মারিয়াম বিনতে
ইমরান, ফাতেমা, খাদিজা ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া’।
মুস্তাদরাক হাকিমে কয়েকটি বর্ণনা রয়েছে যে, নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম
বেহেশতে প্রবেশকারীনি হলেন ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (সা.)
বেহেশতে নারীদের মধ্যে প্রধান হবেন যে নারী
বেহেশতে নারীদের সর্দার হবেন চারজন বিশিষ্ট নারী। আল্লাহ সুবহানা তায়ালা তাদের
বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদিসে তাদের আলোচনা ও বর্ণনা এসেছে।
বেহেশতে তারা প্রধান বা নেত্রী হওয়ার বিষয়টি সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে।
রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, ’বেহেশতের নারীদের সর্দার হবেন-
মারিয়াম বিনতে ইমরান, ফাতেমা, খাদিজা ও ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া।’
রাসূলে পাক (সা.) সাহাবীদের কোন এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বেহেশতবাসীর মধ্যে
সর্বোত্তম নারী হলো খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.), ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ (রা.),
মারিয়াম বিনতে ইমরান, ও আসিয়া বিনতে মাজাহিম।
বেহেশতে পুরুষরা পাবেন হুর আর নারীরা কি পাবেন
দুনিয়াতে মানুষের মধ্যে এমন প্রশ্ন অনেক সময়েই জাগে যে পুরুষেরা যেহেতু বেহেশতে
নারী হুর পাবেন তাহলে নারীরা বেহেশতে গেলে কি পাবেন?
বেহেশতে পুরুষরা পাবেন সত্তর জন হুর আর নারীদের জন্য কি আছে? বেশীর
ভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নের েউত্তরে যেটা পাওয়া যায় তা হলো নারীরা তার
দুনিয়ার স্বামীকে পাবেন। নারীরা একাধিক পুরুষ পাওয়ার কথা কোন সহীহ হাদিস পাওয়া
যায়নি।
এখন প্রশ্ন হলো পুরুষের চেয়ে নারীদের কম দেওয়া হলো গেল। বিষয়টি বুঝতে গেলে প্রথমে
বুঝতে হবে, কোন চরিত্রের লোকেরা বেহেশতে যাবে। যখন আদম-হাওয়াকে দুনিয়াতে পাঠানো
হয়েছিল তখন দুনিয়াটা স্বর্গের মতনেই ছিল।
যে নারীর বিয়ে হয়নি, তাহলে তার জন্য অনুমতি আছে, সে ইচ্ছে করলে বেহেশতী কোন
অবিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করতে পারবে। আর না চাইলে পুরুষ হুর আল্লাহ তাআলা
সুষ্টি করে তার সাথে বিয়ে করিয়ে দিবেন।
বেহেশতের সুসংবাদপ্রাপ্ত নারী সাহাবীদের গুরুত্ব
নারী সাহাবীরা ছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সঙ্গী যারা তাঁর জীবদ্দশায় ইসলাম
গ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর প্রতি অনুগত্য স্থাপন করেছিলেন। তারা ইসলামের প্রাথমিক
সমাজের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এবং বিশ্বাসের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন
করেছিলেন। এই মহান নারীদের জীবনী ও অবদান ইসলামের ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ ও
গুরুত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়.।
ধর্মীয় জ্ঞানের সংরক্ষকঃ নারী সাহাবীরা হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা ইসলােমের
দ্বিতীয় মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত।
শিক্ষাবিদ ও শিক্ষিকাঃ নারীরা কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী জ্ঞানের অন্যান্য
শাখা শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সামাজিক কর্মীঃ গরীব, দরিদ্র, অসহায় এবং এতিমদের সাহায্য করার জন্য তারা
সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছেন।
নেতৃত্বদানঃ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছিলেন যেমন যুদ্ধে
সৈন্যদের নেতৃত্ব দেওয়া িএবং ধর্মী বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেছেন।
ইসলামে ২০ জন প্রসিদ্ধ নারী সাহাবীর নাম জিনে নিন
নিম্নে ২০ জন প্রসিদ্ধ নারী সাহাবীর নাম ও অর্থ দেওয়া হলঃ
- উম্মে আইমান (রা.) যার অর্থ-শুভ-ভাগ্যবতী
- উম্মে সুলাইমান (রা.) যার অর্থ-শান্তির মানুষ
- উম্মে আতিয়া (রা.) যার অর্থ-দান বা আর্শীবাদ
- আরওয়া (রা.) যার অর্থ-কোমলতা
- আসমা (রা.) যার অর্থ- মহান, উচ্চ, সম্মানিত
- উম্মে রুমান (রা.) যার অর্থ-
- উম্মে ফযল (রা.) যার অর্থ- উত্তম, শ্রেষ্ঠ
- উম্মে উমারা (রা.) যার অর্থ- দীর্ঘজীবী
- উম্মেহানী (রা.) যার অর্থ- সুদর্শন
- উমাইয়া (রা.) যার অর্থ- আশ্রয়দানকারী
- খালিদাহ (রা.) যার অর্থ- অমর, চিরস্থায়ী
- জামীলা (রা.) যার অর্থ- সৌন্দর্য্য, কোমনীয়তা, মাধুয্যের প্রতীক
- বুশরা (রা.) যার অর্থ- সুখবর বা আনন্দময় সংবাদ
- তামীমা (রা.) যার অর্থ- পরিপূর্ণ হওয়া
- হালীমাতুস সাদিয়া (রা.) যার অর্থ- ধৈর্য্যশীল, দয়ালু
- হাকীমা (রা.) যার অর্থ- প্রজ্ঞাময় শাসক রাণী
- খুযায়মা (রা.) যার অর্থ- সুগন্ধি
- রুফাইদা (রা.) যার অর্থ- সহযোগী, উপকারী হাত
- সুমাইয়া (রা.) যার অর্থ- উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানিত ব্যাক্তিত্ব
- লুবাবা (রা.) যার অর্থ- সবচেয়ে মূল্যবান বা খাঁটি।
বেহেশতে নারীরা যে সমস্ত বিশেষ বিশেষ নিয়ামত পাবেন তা জানুন
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- দুনিয়াতে যে সমস্ত বান্দা নারী অথবা পুরুষ যেই হোক না
কেন তারা যদি আমার ওপর ঈমান আনবে আর আমার রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ মোতাবেক জীবন
গঠন করবে, সে পরকালে বেহেশতের আশা রাখতে পারে। কারণ, মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট
রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
বেহেশতের নিয়ামত, বিশেষ করে শুধু পুরুষের জন্যই নয়, বরং কোরআনে বলা হয়েছে, তা
মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
এখানে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ করা হয়নি। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, যে মহান
আল্লাহ তায়ালা বেহেশতে নারীদেরও অনেক অনেক নিয়ামত দান করবেন।
আজ আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করবো, মহান রাব্বুল আলামিন বেহেশতি নারীদের কি কি
দান নিয়ামত করবেন-
- চির যৌবন ও লাবণ্য পাবেন
- বেহেশতি নারীরা হুরের মতো সুন্দর হবেন, তাঁদের হুরের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্য দেওয়া হবে।
- তাঁরা বৃদ্ধা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেও বেহেশতে তাঁরা যুবতী হয়ে যাবেন। দুনিয়াতে যেমনই থাকুন, পরকালে অপরূপ সৌন্দর্য লাভ করবেন।
- স্বামী সোহাগিনী ও সমবয়স্কা হবেন। তাঁরা স্বামীভক্ত হবেন, যা নারীদের শ্রেষ্ঠ চরিত্র।
- বেহেশতি নারীরা দুনিয়ার স্বামীকেই পাবেন যদি সে বেহেশতি হন।
- কোরআনের বর্ণনা মতে, বেহেশতে পুরুষদের কমপক্ষে ৭০টি হুর দেওয়া হবে, যাঁদের রানি হবেন দুনিয়ার স্ত্রী।
- পূর্ণ চারিত্রিক পবিত্রা হবেন তাঁদের মনে স্বামী ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না।
এ থেকে বোঝা যায়, দুনিয়ার যে স্ত্রী বেহেশতি হুরদের সর্দার হবেন, তাঁরাও
পূর্ণ সতীসাধ্বী হবেন। তাঁদের অন্তরে কখনো একাধিক পুরুষপ্রাপ্তির
আশা াজাগবে না।
গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url