জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে, আর কী খাওয়া যাবে না?
জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে এই প্রশ্নের উত্তর অনেকেই জানতে চেয়েছেন। কারণ জন্ডিস লিভারের সমস্যা জনিত এক ধরনের রোগ। যা অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক রূপ ধারণ করে থাকে তাই এই জন্ডিস নিয়ে অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান যে জন্ডিস হলে কি খাওয়া উচিত।
সূচিপত্রঃ জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে
- জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে
- জন্ডিসের উপসর্গ ও প্রাথমিক লক্ষণ
- জন্ডিসের পানি ও তরল গ্রহণের গুরুত্ব
- জন্ডিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তরল খাবার
- জন্ডিস হলে কি কি ফল খাওয়া নিরাপদ
- জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে এ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
- জন্ডিসে ও বিশ্রামের গুরুত্ব কতটা
- জন্ডিস কমাতে কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত
- জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
- জন্ডিস হলে কি দুধ খাওয়া যাবে
- জন্ডিস হলে কি খাওয়া যাবেনা
- জন্ডিস হলে কি খেতে হবে সম্পর্কিত (FAQ) প্রশ্নোত্তর
- শেষ মন্তব্যঃ জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে
জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে
জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে? এটি খুবই সাধারণ একটি প্রশ্ন। কারণ জন্ডিস লিভার জনিত রোগ হাওয়ায় অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয় যেমন বিশ্রাম, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ওষধ বা তরল জাতীয় খাদ্য সকল কিছু একটি রুটিন মাফিক করতে হয়। তবে অনেকের মধ্যে একটি ধারণা আছে জন্ডিস হলে স্যালাইন খাওয়া যাবে না, স্যালাইন খেলে নাকি জন্ডিস আরো বেড়ে যায়।
এটা কতটুকু সত্যি এ ব্যাপারে জানা না থাকলে অনেকেই জন্ডিসের ভোগান্তির সময় বিভ্রান্তিতে পড়েন চলুন বিষয়টি ক্লিয়ার করা যাক। জন্ডিস হলে অনেক সময় খাবার স্যালাইন খাওয়া যায়, কারণ শরীরের বিপাক ক্রিয়ার জন্য এবং পানি শূন্যতা দূর করতে স্যালাইন খাওয়া হয়। যদি জন্ডিসের সময় এ ধরনের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ওর-স্যালাইন খেতে হবে।
ওর স্যালাইন ছাড়া অন্য কোন ধরনের স্যালাইন খাওয়া যাবে না। শরীরে পানির ঘাটতি হলে অনেক সময় প্রস্রাব হলুদ হয় আর জন্ডিস হলে তো এমনিতেই চোখ, মুখ, হাত, প্রসাব হলুদ হয়। যদি চিকিৎসা করার পরে পানির ঘাটতি দেখা যায় শরীরে তাহলে অবশ্যই ওর স্যালাইন খেতে হবে। তবে দিনে ২-৩ বার ওর-স্যালাইন খেলে কোন সমস্যা হবে না তবে এর চেয়ে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়।
কারণ প্রত্যেক জিনিসের একটি লিমিটেশন আছে আর লিমিট ক্রস করা কখনো উচিত নয়। বিশেষ করে রোগের ক্ষেত্রে কোন ধরনের অবাধ্য, অনিয়ম করা যাবে না। সময় মত খেতে হবে, সময়মত বিশ্রাম নিতে হবে সকল কিছু নিয়ম অনুযায়ী মেনে চলতে হবে। জন্ডিস হলে অনেকের শরীর দুর্বল হয়ে যায়, ক্ষুধা কমে যায়, বমি বমি ভাব লাগে।
আরো পড়ুনঃ
এ ধরনের সমস্যাই শরীর সুস্থ রাখতে ওর-স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। রুচি না থাকার কারণে খাবার খেতে না পারলে তখন ওর স্যালাইন দিলে সমস্যা হবে না কারণ ওর স্যালাইন খাওয়ার ফলে খাবারের ঘাটতি এবং শরীরের দুর্বলতা কমিয়ে দেয় কিছুটা হলেও শরীরে শক্তি পাওয়া যায়। তবে ইনজেকশন দ্বারা যে স্যালাইন শরীরের ভিতরে পুশ করা হয় সে ধরনের স্যালাইন ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই দেওয়া যাবে না।
অনেকেই আছেন যারা পন্ডিতি করে জন্ডিসের সময় ভালো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়ে কবিরাজ দেখিয়ে বাড়িতে IV স্যালাইন দিয়ে থাকে কিন্তু জেনে রাখুন এটি কখনোই করা উচিত নয়। রোগ দূর করার বদলে আরো বিপদ ডেকে আনা হয়, কারণ এ ধরনের স্যালাইন ভালো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করা বিপজ্জনক। কারণ জন্ডিস লিভারের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি রোগ। জন্ডিস বড় আকার ধারণ করলে লিভার নষ্ট হয়ে যায়।
জন্ডিসের উপসর্গ ও প্রাথমিক লক্ষণ
জন্ডিসের উপসর্গ ও প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে। যখন লিভারের সমস্যা দেখা দেয় অর্থাৎ রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে জন্ডিস হয়। তবে অনেকেই জন্ডিসের উপসর্গ লক্ষণগুলো সম্পর্কে সঠিক জানেন না তাদের জন্য আজকের পোস্টে সুন্দরভাবে নিচে উল্লেখ করা হলো।
- জন্ডিস হলে সবচাইতে বড় কমন উপসর্গ যেটা কমবেশি সবার জানা সেটা হচ্ছে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়া। সবচাইতে লক্ষণীয় এবং দৃশ্যমান জন্ডিসের উপসর্গ।
- মুখ মন্ডল শরীরের চামড়া এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হলদে হয়ে যাওয়া।
- শরীর হাত ব্যথা করা অল্পতেই দুর্বল ক্লান্তি অনুভব করা। কোন কিছুতেই মনোযোগ বসেনা মেজাজ খিটখিটে থাকে।
- ক্ষুধা না লাগা অর্থাৎ জন্ডিসের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে ক্ষুধা কমে যাওয়া অর্থাৎ খাবারে রুচি থাকে। কোন খাবার খেতে ইচ্ছা করে না মনে হয় খাবার দেখলেই বমি বমি ভাব লাগে। খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না।
- প্রস্রাবের কালার হলুদ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ গাঢ় রঙের প্রস্রাব হয়। সাধারণ প্রস্রাবের তুলনায় রং অনেক হলুদ, লাল মনে হয়।
- মলত্যাগের সময় ফ্যাকাসে রং মনে হয়। অর্থাৎ পিত্ত রসের সমস্যার কারণে মলের রং ফ্যাকা হালকা সাদা মনে হয়।
- মাঝে মাঝে মাথা ঝিম ধরে থাকা মাথাব্যথা করা জ্বর জ্বর অনুভব হয়। যেহেতু জন্ডিস হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, ই ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে যার কারণে হালকা জ্বর হতে পারে।
- পেটের ডান দিকে ব্যথা অনুভব হয়। কারণ জন্ডিস হলে যদি লিভারের সমস্যা হয় অর্থাৎ লিভার বড় হতে থাকে তাহলে ডান পাশের উপরের পেট ব্যাথা অনুভব হতে পারে।
জন্ডিসে পানি ও তরল গ্রহণের গুরুত্ব
জন্ডিসের পানি ও তরল গ্রহণের গুরুত্ব প্রচুর। জন্ডিস হলে শরীরকে একেবারে নিস্তেজ এবং দুর্বল করে দেয়। কারন জন্ডিস মূলত লিভার জনিত রোগ যার কারণে লিভার বড় হয়ে যায় রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার কারণে। তবে এ অবস্থায় পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। তবে সঠিক পরিমাণে খেতে হবে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।
- জন্ডিস অনেক সময় ডায়রিয়ার মত উপসর্গ দেখা দেয় যেমন বমি বমি ভাব, জ্বর ইত্যাদি যার কারণে খাবারে অরুচি থাকে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। এ সময় ওর স্যালাইন ও নিয়মিত পানি খেতে হবে যেন শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখা যায়।
- লিভার পরিষ্কার রাখার জন্য পানি খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। কারণ পানি পান করার ফলে লিভারের উপরে চাপ কমে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের হয়ে যায়।
- শরীরে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণ এই জন্ডিস হয়ে থাকে। বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর জন্য অবশ্যই পানি পান করা উচিত। পানি পানের কারণে শরীরের মুত্র নিঃসরণ হয় এবং মূত্র বেরিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বিলিরুবিন কমতে থাকে।
- জন্ডিস হলে মুখের রুচি কমে যায় এবং বদহজম এর প্রবণতা বেড়ে যায় তাই তরল জাতীয় খাবার খাওয়া এই সময় অত্যন্ত জরুরী। পানি এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে পেটে আরাম অনুভব হয় এবং দ্রুত হজমে সাহায্য করে।
জন্ডিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তরল খাবার
জন্ডিসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তরল খাবার গুলো খেলে খুব দ্রুত এ জন্ডিস থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তবে অনেকেই আমরা জানি না কোন ধরনের তরল খাবারগুলো খেলে খুব দ্রুত জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। চলুন আজকে আপনাদের সাথে বিভিন্ন ধরনের তরল খাবার উল্লেখ করি যেগুলো জন্ডিস নির্মূলের জন্য উপকার।
- মিনারেল/ফোটানো পরিষ্কার বিশুদ্ধ পানি।
- খাবার ওর স্যালাইন (ORS)
- ডাবের পানি
- লেবু পানি, হালকা চিনি বা চিনি বাদে খেলে ভালো এবং লবণ দিয়ে
- শরবত লবণ, চিনি ও গুড় যুক্ত করে।
- বেশি বেশি গ্লুকোজ
- ভাতের মাড় বা চাল সেদ্ধ করা গরম তরল পানি।
- ফলের রস যেমন কমলা, আনারস, আখের রস, পেঁপের জুস।
- স্যুপ লবণ ছাড়া অথবা সামান্য লবনযুক্ত।
জন্ডিস হলে কি কি ফল খাওয়া নিরাপদ
জন্ডিস হলে যেসব ফল খাওয়া নিরাপদ সেগুলো খুবই সহজলভ্য। জন্ডিস হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং হজম শক্তি কমে যায়, যার কারণে এমন কিছু ফলমূল খাওয়া উচিত যেগুলো লিভার রিকভার করতে সাহায্য করে। জন্ডিস হলে মূলত ভিটামিন,পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার ফল খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। এ সকল উপাদান রয়েছে এরকম কিছু ফলের নাম উল্লেখ করা হলো।
কলা - পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হজমের সাহায্য করে এবং দুর্বলতা কমায়।
কমলা ও মালটা - ভিটামিন সি রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।
আপেল - প্রচুর ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে লিভার পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
আনারস - হজমে সাহায্য করে লিভারের জন্য উপকারী পরিমাণে অল্প খাওয়া উচিত।
আঙ্গুর - আঙ্গুরে পানি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে ও রক্তশূন্যতা কমায়।
পাকা পেঁপে - পাকা পেঁপে লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
লেবু - লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে এবং লিভার পরিষ্কার করে এছাড়া বমি ভাব দূর হয়।
তরমুজ - তরমুজের প্রচুর পানি রয়েছে, শরীর ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে শরীর ঠান্ডা রাখে।
জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে এ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: জন্ডিসের ইনজেকশন স্যালাইন দিলে কোন সমস্যা হয় কি?
উত্তর: না, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ইনজেকশন স্যালাইন দেওয়া নিরাপদ বলা যায়।
প্রশ্ন: শিশুর জন্ডিস হলে কি করে স্যালাইন খাওয়ানো যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে শিশুর বয়স অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করতে হবে।
প্রশ্ন: গর্ভবতী মহিলার জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, কিন্তু অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
প্রশ্ন: জন্ডিস হলে দিনে কয়বার স্যালাইন খাওয়া উচিত?
উত্তর: ডিহাইড্রেশন এর পানির পরিমাণ অনুযায়ী দিনে ২-৪ বার তবে চিকিৎসার পরামর্শ নিলে ভালো হয়।
জন্ডিসে বিশ্রামের গুরুত্ব কতটা
জন্ডিসে বিশ্রামের গুরুত্ব অবশ্যই রয়েছে। শুধু জন্ডিস কেন যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে রোগীকে অবশ্যই বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। রোগের কারণে শরীর অনেক দুর্বল থাকে, যার কারণে বিশ্রাম নেওয়া রোগ মুক্তির অন্যতম একটি উপায় বলা যায়। জন্ডিস এমন একটি রোগ যে কারণে লিভার দুর্বল হয়ে পড়ে এবং লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম কমে যায়। এর কারণে বিশ্রাম নেওয়া জন্ডিসের রোগীদের জন্য খুবই ভূমিকা রাখে।
লিভার আমাদের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর জন্ডিসের ফলে লিভার অনেকটা দুর্বল হয়ে যায় যার কারণে লিভারের উপর অনেকটা চাপ পড়ে তাই লিভার থেকে চাপ কমাতে বিশ্রাম নিতে হবে। এ ছাড়া জন্ডিসের কারণে শরীরে অনেক শক্তি কমে যায় এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব হয় না। তাই শক্তি সঞ্চয়ী করতে হলে বিশ্রাম নেওয়া জরুরী।
আরো পড়ুনঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। যখন শরীরে কোন রোগ সৃষ্টি হয় তখন বিশেষ করে বিশ্রাম নেওয়াটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিশ্রামের কারণে শরীরের সিস্টেম সক্রিয় রাখা যায় এবং শারীরিক প্রশান্তি ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়া চিকিৎসার এবং ওষুধের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য শরীরকে আরাম দিতে হবে।
শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশ্রাম নেওয়া দরকার। জন্ডিসের সময় যদি কেউ অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তাহলে লিভারের উপর চাপ পড়ে যার কারণে লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। যত বেশি বিশ্রাম নেওয়া যায় তত লিভার এর ওপর চাপ কমবে যার ফলে লিভার সিরোসিস এর ঝুঁকি কমবে।
জন্ডিস কমাতে কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত
জন্ডিস কামাতে কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত এ ধরনের প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। কারণ বর্তমানে জন্ডিস এমন একটি রোগ যা প্রায়ই বেশিরভাগ মানুষের হতে দেখা যায়। লিভারের সমস্যা জনিত রোগ হওয়ার কারণে জন্ডিস নিয়ে অনেকের ভেতরে ভীতি সৃষ্ট হয়। তাই বুঝে ওঠা যায় না যে কোন ধরনের খাবার খেলে জন্ডিস কমানো যাবে। চলুন এরকম কিছু খাদ্য তালিকা দেখে নেয়া যাক।
- খিচুড়ি কম মসলা এবং হলুদ ছাড়া
- সাদা ভাত
- নরম রুটি
- ফোটানো পানি
- করছে লাইন
- ডাবের পানি
- লেবু পানি
- তরমুজ, আপেল, পেঁপে, মালটা, আনারস
- সেদ্ধ মসুর, মুগ ডাল
- অল্প পরিমাণে রুই তেলাপিয়া মাছ।
- ভাতের মাড়, ডাল সিদ্ধ পানি
- সবজির ঝোল
- গাজর, টমেটো, ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালং শাক, মিষ্টি কুমড়া, মুলা, বিট, শসা ইত্যাদি।
জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে
জন্ডিস হলে কি ডিম খাওয়া যাবে এ ব্যাপারে অনেকেই জানতে চান। কারণ সচরাচর বাড়িতে বয়স্ক যারা থাকেন তারা অনেকে বলে থাকেন জন্ডিস হলে ডিম খাওয়া যাবেনা, অনেকে বলে যাবে ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা যার কারণে বুঝে ওঠা যায় না যে কোনটা খাওয়া যাবে এবং কোনটা যাবে না। কারণ এমন কোন ভুল খাবার খাওয়া যাবে না যা লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
জন্ডিস মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কারো পরিমাণে বেশি, কারো কম। তবে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া যাবে। কারণ ডিমে প্রোটিন রয়েছে যা শরীরের ক্ষয় পূরণে সহযোগিতা করে। আর ডিমের সাদা অংশে ফ্যাটের পরিমাণ কম। তবে ডিমের হলুদ অংশ বা কুসুম খাওয়া জরুরি নয়। ডিমের কুসুম খেলে দুর্বল লিভারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
যারা জন্ডিসের গুরুতর আক্রান্ত বা মাঝারি আক্রান্ত তারা ডিমের কুসুম এড়িয়ে চলা ভালো। তবে অনেক ক্ষেত্রে ডিম খেতে নিষেধ করেন কারণ যাদের হজমে সমস্যা বা এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের এই ডিম না খাওয়াই ভালো। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধ ডিমের সাদা অংশ হওয়া উচিত। তবে ডিমের ওমলেট, ডিমের ভাজি, ডিমের কুসুম ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো।
জন্ডিস হলে কি দুধ খাওয়া যাবে
জন্ডিস হলে কি দুধ খাওয়া যাবে এ ধরনের প্রশ্ন থাকলে আপনারা নিজে জেনে নিতে পারেন। জন্ডিস হলে খাবার এর প্রতি খুবই সতর্কতা থাকতে হয়। কারণ এ সময়ে অনেক খাবার খাওয়া থেকে বেরোতে থাকতে হয় কারণ লিভার সুস্থ রাখার জন্য। দুধ খাওয়া যাবে তবে রোগীর শরীরের উপর নির্ভর করে। যদি জন্ডিস পরিমাণে হালকা হয় এবং রোগীর এলার্জি জনিত কোন সমস্যা না থাকে তাহলে ফুটানো দুধ হালকা কুসুম গরম থাকা অবস্থায় প্রতিদিন আধা কাপ করে খেতে পারেন।
আর যদি জন্ডিসের খুব বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে দুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত আক্রান্ত রোগী বিলিরুবিন বেশি থাকে এবং বদ হজম হয় পেট ফাঁপা দেখা দেয় তার কারণে চিকিৎসকরা দুধ খেতে নিষেধ করে থাকেন। এছাড়া দুধে যেহেতু চর্বি রয়েছে আর লিভারের জন্য চর্বি জনিত খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ।
জন্ডিস হলে কি খাওয়া যাবেনা
জন্ডিস হলে অনেক কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হয়। কারণ খারাপ উপর নির্ভর করেই রক্ত থেকে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানো সম্ভব। আর জন্ডিসের লিভার দুর্বল করে দেয় এবং হজমশক্তির ব্যাঘাত ঘটে তাই লিভারের উপর চাপ না পর এ ধরনের খাবার খাওয়া উচিত। কি ধরনের খাবার বাদ দিতে হবে জন্ডিস হলে সেগুলো উল্লেখ করা যাক।
- গরু খাসির মাংস।
- তেলে ভাজাপোড়া খাবার যেমন পরোটা, পুরি, সমুচা, ফাস্টফুড, ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
- অতিরিক্ত তেল যুক্ত মাছ মাংস খাওয়া উচিত নয়।
- অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও ঘি খাওয়া যাবেনা।
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া নিষেধ
- অতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার যেমন মাখন, পনির রসগোল্লা, পায়েস ইত্যাদি।
- এলকোহল জাতীয় সমস্ত খাবার খাওয়া নিষেধ।
- মদ, ধূমপান নিষেধ।
- অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার যেমন চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি।
- কোলড্রিংস, কফি, চা বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না।
জন্ডিস হলে কি খেতে হবে সম্পর্কিত (FAQ) প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: জন্ডিস হলে ঠান্ডা পানি খাওয়া যাবে কি?
উত্তর:না, ঠান্ডা পানি লিভারের উপর চাপ ফেলতে পারে।
প্রশ্ন: জুসে চিনি মিশিয়ে খাওয়া যাবে কি জন্ডিস হলে?
উত্তর: না, অতিরিক্ত চিনি লিভারের ক্ষতি করে।
প্রশ্ন: জন্ডিস হলে চা বা কফি খাওয়া যাবে কি?
উত্তর:না, বিশেষ করে ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় লিভারের ক্ষতি করতে পারে।
প্রশ্ন: বরফ দেওয়া সরবত খাওয়া যাবে কি?
উত্তর: একেবারেই না, এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রশ্ন: গ্লুকোজ খাওয়া যাবে কি?
উত্তর: প্রয়োজনে গ্লুকোজ খাওয়া যেতে পারে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
শেষ মন্তব্যঃ জন্ডিস হলে কি স্যালাইন খাওয়া যাবে
জন্ডিস লিভার জনিত রোগ হওয়ার কারণে অনেকেই জন্ডিস নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকেন। তবে দিন দিন জন্ডিসের প্রকোপ এখন খুবই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই কারো যদি জন্ডিস হয় বা এরকম কিছু লক্ষণ বুঝতে পারেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অবশ্যই ঘর আসা লাইন খাওয়া আরম্ভ করবেন। কারণ জন্ডিস হলে স্যালাইন খাওয়া যাবে কি এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যদি রোগীর শরীরে ডিহাইড্রেশন ঠিক না থাকে অর্থাৎ পানির ঘাটতি থাকা তাহলে স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে তবে অতিরিক্ত পরিমাণে নয়।
গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url