চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে ও চিরতা কতদিন খাওয়া যায়
সূচিপত্রঃ চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
- চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
- চিরতা প্রতিদিন খেলে কি হয়
- চিরতা এবং কিডনি ফাংশন বৈজ্ঞানিক গবেষণা
- চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে এ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
- চিরতার পুষ্টি উপাদান কি কি
- চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয়
- চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- চিরতা ব্যবহারে নিরাপদ মাত্রা ও সঠিক নিয়ম
- চিরতা খাওয়ার ফলে সমস্যা জনিত আরো কিছু প্রশ্নোত্তর
- শেষ মন্তব্যঃ চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে অথবা চিরতা কিডনির জন্য কতটা ক্ষতিকর এ ব্যাপারে অনেকেই জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। চিরতা যেহেতু একটি ভেষজ উদ্ভিদ এবং এর বিভিন্ন উপকারী গুনাগুন রয়েছে। বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে চিরতা মানুষ সেবন করে থাকে। এরমধ্যে কিছু মানুষের প্রশ্ন উঠেছে চিরতা খেলে কিডনির কোন সমস্যা করে কিনা।
কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে চিরতা খেলে কিডনির উপকার হয়, আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে চিরতা খেলে কিডনির সমস্যা হতে পারে। তবে নির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না যে চিরতা খেলে কিডনির ক্ষতি হয়। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে চিরতা খাওয়ার মাত্রা, শারীরিক অবস্থা এবং ব্যবহারের পদ্ধতির ওপর। চিরতার উপকারিতা রয়েছে তবে ব্যবহার বিধি জানতে হবে।
চিরতা হচ্ছে অতি প্রাচীন একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি দেহের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন রক্ত পরিশুদ্ধ, হজম শক্তি বৃদ্ধি, লিভার পরিষ্কার ও অন্যান্য আরো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তবে যাদের কিডনিতে আগে থেকেই সমস্যা রয়েছে যেমন ক্রিয়েটেনিন বেড়ে যাওয়া, কিডনি ইনফেকশন, কিডনি ফেইলর এ ধরনের রোগীদের জন্য চিরতা ক্ষতিকর হতে পারে।
কারণ এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে ভেষজ উদ্ভিদ যেমন চিরতা কার্যকর নাও হতে পারে, যার ফলে ভালো হওয়ার চাইতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে কারন কিডনি দুর্বল থাকলে শরীরে কাজ করে না। চিরতা একটি তিতকুটে ভেষজ উদ্ভিদ খাওয়ার অতিরিক্ত।ফলে কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি খেলে কিডনি কোষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ৩ দিনে ফর্সা হওয়ার উপায় - স্থায়ী ফর্সা হওয়ার উপায়
তাই এ ধরনের সমস্যা যাদের আছে তারা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। চিরতা নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোন বড় ধরনের গবেষণা করা হয়নি, তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে লিভার এবং কিডনির উপর কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য কোন ওষুধ বা খাবার পরিমাণের চাইতে বেশি খাওয়া উচিত নয়, অনেক ক্ষেত্রে উপকারের চাইতে অপকার বেশি করে।
এছাড়া যদি কেউ উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনির ঔষধ ডায়াবেটিসের ঔষধ খেয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ বা চিরতা খাওয়া উচিত নয়। কারণ অন্যান্য ওষুধের সাথে চিরতা বিষক্রিয়া করতে পারে। কারণ অন্যান্য ওষুধ এর সাথে চিরতা এডজাস্ট নাও হতে পারে, যার কারণে বড় ধরনের ক্ষতি করা সম্ভবনা থাকে।
চিরতা প্রতিদিন খেলে কি হয়
চিরতা প্রতিদিন খেলে কি হয় যারা এ ব্যাপারে এখনো জানেন না তারা আজকের পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়লে চিরতা ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে জানতে পারবেন। চিরতা বহুল পরিচিত একটি ভেষজ উদ্ভিদ, যার অনেক গুনাগুন রয়েছে। কারণ বেশিরভাগ মানুষ জানে যে সকল মেডিসিন কোন কোন রোগের অসুস্থতা সারাতে না পারলেও অনেক ক্ষেত্রে ভেষজ উদ্ভিদ খাওয়ার ফলে অনেক বড় ধরনের ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অন্যান্য সকল ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে চিরতা অন্যতম একটি উদ্ভিদ। সঠিক পদ্ধতিতে খেলে অবশ্যই অনেক বড় ধরনের ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ আদি যুগে ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে অনেক রোগের ওষুধ বানানো হতো এবং সেই ওষুধের দ্বারাই বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হত। প্রতিদিন যদি খুব স্বল্প পরিমাণে চিরতা খাওয়া হয় তাহলে কিছু উপকারিতা রয়েছে।
- যেমন হজমের সমস্যা দূর করে থাকে।
- শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়।
- চর্মরোগ, চুলকানি, ফুসকুড়ি, এলার্জির মত সমস্যা কিছুটা কমে।
- কাশি, ঠান্ডা, জ্বর প্রতিরোধে সহযোগিতা করে।
- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
তবে প্রতিদিন খাওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তাই যে কোন জিনিস দীর্ঘ মেয়াদে না খেয়ে কিছুদিন বিরতি রাখা ভালো। মাঝে মাঝে বাদ দিয়ে বা বিরতি নিয়ে খেলে শরীরের জন্য ভালো হয় এবং কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কারণ যে কোন ভেষজ উদ্ভিদ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হয়, কারণ এটি শরীরের অবস্থা বয়স ও অন্যান্য ওষুধ গ্রহণের উপর বিবেচনা করে রোগীকে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
চিরতা এবং কিডনি ফাংশন বৈজ্ঞানিক গবেষণা
চিরতা এবং কিডনি ফাংশন বৈজ্ঞানিক গবেষণা এখন পর্যন্ত তেমন কোন বড় ধরনের পর্যবেক্ষণ করা হয়নি তবে চিরতা যেহেতু খুবই জনপ্রিয় একটি ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত তাই অনেকেই এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা করতে পারেননি। তবে যারা ভেষজ উদ্ভিদ চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন তাদের কিডনি সমস্যা নিয়ে চিন্তিত, বৈজ্ঞানিক তথ্য ও গবেষণার ফলাফল জানতে চান।
চিরতাতে বেশ কয়েকটি সক্রিয় উপাদান রয়েছে যেগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহরোধী ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপকার করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। এবং এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো কিডনি থেকে ক্ষতিকর উপাদান প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে তাই এটিকে সরাসরি কিডনির জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে বলা যাবে না। যে সকল উপাদান গুলো রয়েছে সেগুলো হলো
- Amarogentin
- Swertiamarin
- Mangiferin
২০১৫ সালে চিরতা নিয়ে এক ইঁদুরের উপরে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে স্বল্পমাত্রায় চিরতা ব্যবহারে কিডনি ও লিভারের এনজাইমের কার্যকারিতা ঠিক থাকে। অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করলে ইঁদুরের কিডনি টিস্যুতে হালকা প্রদাহ এবং কিছুটা স্ট্রেস দেখা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মানুষের উপরে চিরতা গবেষণার ঘাটতি রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ আয়রন ট্যাবলেট খেলেই কি ওজন বাড়ে? জানুন সত্যি না মিথ্যা!
কারণ মানুষের শরীরে কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে পারে কিনা এ ধরনের গবেষণা এখন পর্যন্ত ক্লিনিক্যাল কোন ট্রায়াল করা হয়নি। তাই উপকারিতা রয়েছে বলে প্রয়োজনে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। এবং যদিও খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ভালোভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টেস্ট করে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এছাড়া যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই ভেষজ উদ্ভিদ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে এ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: চিরতা কিডনির জন্য ভালো নাকি খারাপ?
উত্তর: সীমিত পরিমাণ খেলে উপকার হতে পারে, তবে অতিরিক্ত খেলে কিডনির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রশ্ন: কিডনি রোগীরা চিরতা খেতে পারেন?
উত্তর: না, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া কখনোই উচিত নয়।
প্রশ্ন: কিডনিতে পাথর থাকলে চিরতা খাওয়া কি ঠিক?
উত্তর: সরাসরি কোন তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন: চিরতার পানি কি কিডনিতে চাপ ফেলে?
উত্তর: হ্যাঁ, অতিরিক্ত খেলে কিডনির ফিল্টারিং কার্যক্রমে চাপ পড়তে পারে।
প্রশ্ন: দিনে কতবার চিরতা খাওয়া নিরাপদ?
উত্তর: দিনে ১ বার, সপ্তাহে ৪-৫ দিনের বেশি নয়।
চিরতার পুষ্টি উপাদান কি কি
চিরতার পুষ্টি উপাদান অবশ্যই রয়েছে। যেহেতু এটি একটি আয়ুর্বেদিক ভেষজ উদ্ভিদ তাই এর কিছু পুষ্টি উপাদান ও সক্রিয় রাসায়নিক যৌগ রয়েছে যা দেহের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সাহায্য করে থাকে। চলুন চিরতায় কোন রাসায়নিক উপাদান গুলো রয়েছে এবং এর গুণাবলী গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
- Amarogentin (অমরোজেন্টিন) - হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- Swertiamarin (সোয়েরটিয়ামারিন) - এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন।
- Mangiferin (মঙ্গিফেরিন) - অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে।
- Swerchirin (স্বেচিরিন) - যকের বা লিভারের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে।
- Flavonoids (ফ্লাভোনয়েডস) - কোষের সুরক্ষা এনটি এজিং ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- Xanthones (জান্থনেস) - শরীরের প্রদাহ রোদ করে।
- Gentiopicroside (জেনটিওপিক্রোসাইড) - পাচনতন্ত্র অপকার করে এবং খুধা বাড়াতে সহযোগিতা করে।
- Triterpenoid (ট্রিটারপেনইড) - অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ রয়েছে।
- Iron (আইরন)
- Calcium (ক্যালসিয়াম)
- Magnesium (ম্যাগনেসিয়াম)
- Phosphorus (ফসফরাস)
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয়
চিরতা ভেজানো জল খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার হতে পারে যা হয়তো আমাদের ধারণার বাইরে। চিরতা শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। যারা এখন পর্যন্ত জানেন না চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয় তারা আজকের পোস্টটিতে চোখ রাখুন তাহলেই সকল তথ্য পেয়ে যাবেন।
- চিরতা ভেজানো পানি খেলে শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, যার ফলে লিভার ও কিডনিকে পরিষ্কার রাখে।
- যাদের খাবার দ্রুত হজম হয় না অর্থাৎ হজমে ব্যাঘাত ঘটে তারা এই চিরতা ভেজানো পানি খেলে এর রস বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, অম্বল, বদ হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে তবে এটি খালি পেটে খেলে বেশি উপকার করে।
- রক্ত চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে এটি খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। চিরতা ভেজানো জল খেলে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং এবং ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকার।
- যাদের ত্বক খুবই সেনসিটিভ অর্থাৎ ব্রণ কিংবা চর্ম রোগের মত সমস্যা রয়েছে তারা এই চিরতা ভেজানো পানি খেলে ফুসকুড়ি, চুলকানি, ব্রণ, চর্ম রোগের উপশম কমে যায়।
- যাদের একটুতে ঠান্ডা বা সর্দি, কাশি লেগে যায় এবং দুর্বল অনুভব হয় তাদের শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে পানি খুবই উপকারী।
- মাথা ঘোরা, খাবারে অরুচি যদি থাকে তাহলে এই চিরতা ভেজানো জল খাওয়াবেন তাহলে মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব দূর হবে এবং খাবারের রুচি ফিরে পাবেন।
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
চিরতা খাওয়ার অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কারণ প্রয়োজনে অতিরিক্ত পরিমাণ খেয়ে ফেললে অবশ্যই এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যদি ও চিরতার উপকারিতা সম্পর্কে সবারই কিছুটা হলে ধারণা আছে তবে এর উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো জানাও প্রয়োজন।
- যেহেতু এটি অতিরিক্ত তিত কুটে তাই অনেকে প্রথমবার খাবার ফলে এর স্বাদ সহ্য করতে না পেরে অস্বস্তি, গ্যাস বা অম্বলের সমস্যা অনুভব করতে পারে।
- যেহেতু এর স্বাদটা অন্যান্য ভেষজ উদ্ভিদের চাইতে কিছুটা ভিন্ন বা সুস্বাদু নয় যার কারণে এটি খাওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব অনুভব হতে পারে। বিশেষ করে যারা খালি পেটে খাবেন তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা দিতে পারে।
- যারা লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিক্স উচ্চ রক্তচাপ এর ওষুধ সেবন করে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কিডনি ও লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- ভেষজ উদ্ভিদ কে যাদের অভ্যাস নেই তাদের প্রথমত পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু এর স্বাদ তিতা যার কারণে এ ধরনের সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
- গর্ভবতী এবং স্তন দানকারী নারীরা এই চিরতা খাওয়ার ফলে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে। এবং যাদের বাচ্চা বুকের দুধ খায়, বাচ্চার দুধ খাওয়ার স্বাদ এর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- যেহেতু এটি তিতা ভেষজ উদ্ভিদ তাই খাওয়ার ফলে অনেক সময় রক্তচাপ দ্রুত কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে মাথা ঘোরা এবং দুর্বল অনুভব হতে পারে।
- চিরতা শিশুদের জন্য কখনোই নিরাপদ নয় পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের যেকোনো ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ শিশুদের খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উপরোক্ত সকল আলোচনা সাপেক্ষে বলা যায় যে সকল ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ খাওয়ার আগে অবশ্যই একটি ভাল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ খাওয়া সম্ভব নয় কারণ পেটের মধ্যে মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগের উপক্রম থাকতে পারে যার কারণে প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চিরতা ব্যবহারে নিরাপদ মাত্রা ও সঠিক নিয়ম
চিরতা ব্যবহারে নিরাপদ মাত্রা ও সঠিক নিয়ম জানা থাকলে অবশ্যই এটি খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবেন। চিরতা যেহেতু একটি ভেষজ উদ্ভিদ অবশ্যই এর খাওয়ার সঠিক মাত্রা রয়েছে। নিরাপদ মাত্রা বজায় রেখে খেলে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। চলুন এর নিরাপদ মাত্রা ও সঠিক নিয়ম গুলো আলোচনা করা যাক।
- চিরতার পানি দিনে এক গ্লাস পরিমাণ ২০০-২৫০ মি.লি.।
- চিরতার গুড়া দিনে একবার সাধারণত খাওয়ার পরে ২৫০-৫০০ মি.গ্রা।
- চিরতা ভেজানো পানি দিনে একবার। ১ গ্লাস পানিতে রাতে ১-২ টুকরা ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে ছেকে পানি পান করতে হবে।
- চিরতার ক্যাপসুল যদি গ্রহণ করেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে তবে সাধারণত দিনে ১-২ বার।
- টানা খেতে চাইলে সপ্তাহে ৪-৫ দিন এরপর বিরতি নেওয়া জরুরী।
চিরতা খাওয়ার ফলে সমস্যা জনিত আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন: চিরতা কি রক্তচাপ কমায়?
উত্তর: হ্যাঁ, অতিরিক্ত ব্লাড প্রেসার থাকলে কিছুটা ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।
প্রশ্ন: চিরতা কি লিভারের ক্ষতি করে?
উত্তর: অতিরিক্ত খেলে লিভার এনজাইমের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
প্রশ্ন: চিরতা নিয়ে কিডনি সংক্রান্ত কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা আছে?
উত্তর: প্রাণীর ওপর কিছু গবেষণা হয়েছফে কিন্তু মানব দেহে সরাসরি প্রমাণ খুবই সীমিত।
প্রশ্ন: চিরতার এন্টিঅক্সিডেন্ট কিডনির উপকার করে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে সঠিক মাত্রায় না খেলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্ন: চিরতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম কি?
উত্তর: ১-২ টুকরা চিরতা রাতে ভিজে রেখে সকালে ছেঁকে খালি পেটে পান করা যায় সপ্তাহে ২-৩ দিন।
শেষ মন্তব্যঃ চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
আজকের পোস্টে আমরা জানতে পেরেছি চিরতা হচ্ছে এক ধরনের আয়ুর্বেদিক ভেষজ উদ্ভিদ যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ এ সহায়তা করে। তবে যেকোনো ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ভালো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া যারা বিভিন্ন ধরনের রোগের ওষুধ সেবন করে থাকেন তাদের অবশ্যই ডাক্তারে পরামর্শ নিয়ে ভেষজ উদ্ভিদ সেবন করা উচিত।
চিরতা যেহেতু একটি উপকারী ভেষজ উদ্ভিদ তাই এর উপকারিতা অবশ্যই রয়েছে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তবে যাদের কিডনিতে সমস্যা থাকবে তারা অবশ্যই চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে কিনা এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর আগে জেনে নিয়ে তারপরে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url