স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত

স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে এর সংক্রমণ কমানো সম্ভব হবে। স্ক্যাবিস এক ধরনের  চুলকানি  জাতীয় রোগ একটি পরজীবী বা মাইট দ্বারা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের চিকিৎসা এবং ঘরোয়া ভাবে কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করলে এটি দৈনন্দিন জীবন থেকে দূর করা সম্ভব।
স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায়
স্ক্যাবিসকে মূলত চুলকানি ঘা অথবা খোস পাঁচড়া বলে অনেকে জানে। বিশেষ করে রাতে চুলকানিতে ত্বকের অস্বস্তিকর ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে। আর এ স্ক্যবিস থেকে মুক্তির উপায়, এর ওষুধ এবং এটি হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আজকের পোস্ট আলোচনা করা হবে।

সূচিপত্রঃ স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় 

স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় 

স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় ও কার্যকর বিভিন্ন পদ্ধতি জানা ঘর অভাবে এর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। স্টাবিস যেহেতু একটি ছোঁয়াচে রোগ এবং ভাইরাসের কারণে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। তবে দ্রুত পদ্ধতি গ্রহণ না করলে এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। 

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অথবা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্ক্যাবিস এর জীবনে ধ্বংসের কার্যকরী টিপস। যেহেতু বর্তমানে এই রোগটি ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ছে তাই দ্রুত এর বিরুদ্ধে সচেতন মূলক কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত যেন এটি সর্বত্র ছড়িয়ে না পড়ে।

নিমপাতা ব্যবহারে স্ক্যাবিস ধ্বংসঃ নিম পাতা ব্যবহারে স্টাবিস ধ্বংস করা সম্ভাবনা রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল পাওয়ার ও অ্যান্টিসেপটিক গুন যা জীবাণু ধ্বংস করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক উপায়ে এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে স্ক্যবিশ রোগের জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে বা স্ক্যাবিস ধ্বংস করতে নিম পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। বড় পাতিলে কিছু নিমপাতা দিয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে এবং পানি ঠান্ডা করে এসে পানি দিয়ে গোসল করতে হবে। এছাড়া নিমপাতা ব্লেন্ড করে পেস্ট বানিয়ে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে অথবা পুরো শরীরে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

নারিকেল তেল ও লবঙ্গ ব্যবহারে স্ক্যাবিস ধ্বংসঃ স্ক্যাবিস হলে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দেয় যা অনেক জ্বালাপোড়া করে। স্ক্যাবিস এর জীবাণু ধ্বংস করার জন্য লবঙ্গ ও নারিকেল তেল কার্যকরী উপাদান হতে পারে। কারণ নারকেল তেল যেকোনো ধরনের জ্বালাপোড়া ফুসকুড়ি কমাতে সাহায্য করে। অন্যথায় লবঙ্গ পর জিবি জীবাণু ধ্বংস করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ২ চা চামচ নারিকেল তেল এবং ৫ ফোটা লবঙ্গ তেল একসাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে দিনে দুইবার করে লাগান।

স্ক্যাবিস ধ্বংসের লেবুর রসঃ ধ্বংস করার জন্য লেবুর রস একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে। লেবুর রসের ভিটামিন সি এবং অ্যাসিটিক এসিড থাকার কারণে স্ক্যাবিস জাতীয় পরজীবী বা মাইট দূর করতে সাহায্য করে। একটি ছোট বাটিতে লেবু টিপে রস বের করে নিবেন। এরপর তুলা দিয়ে লেবুর রসে ডুবিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগান প্রতিদিন একবার করে এই লেবুর রস লাগান দেখবেন অনেকটাই আরামদায়ক এবং চুলকানি অনেক কমে যাবে।

অ্যালোভেরা জেল দিয়ে স্ক্যাবিস জীবনু ধ্বংসঃ এলোভেরা জেল দিয়ে স্ক্যাবিস জীবাণু ধ্বংস অন্যতম একটা উপায়। স্ক্যাবিস যেহেতু এক ধরনের চুলকানি বা খুঁজলি জাতীয় রোগ যার ফলে মানুষের মস্তিষ্ক খিটখিটে হয়ে যায় এবং শরীরে অশান্তি সৃষ্টি করে। অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারে এই পরজীবীর জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। প্রথমত গাছ থেকে এলোভেরা পাতা ছিঁড়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নেবেন। এরপর পাতা থেকে জেল বের করে নিতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ 

সেই জেলগুলো আক্রান্ত স্থানে ৩০ মিনিটে রেখে দিয়ে ভালোভাবে পানি ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। দিনে দুইবার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট হবে। কারণ এলোভেরা পাতা ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে প্রাকৃতিকভাবে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। 

হলুদের পেস্ট দিয়ে স্ক্যাবিস জীবানু ধ্বংসঃ হলুদের পেস্ট দিয়ে স্ক্যাবিস এর মত পরজীবী ধ্বংস করা যায়। কারণ হলুদ রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিসেপটিক গুনাগুন যা এ ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। প্রথমত কাঁচা হলুদ সংগ্রহ করে ভালোভাবে বেটে পেস্ট করে নিতে হবে। আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, দিনে একবার ব্যবহার করলে চলবে। এভাবেই ঘরোয়া উপায় স্ক্যাবিস এর মত পরজীবী থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

স্ক্যাবিস রোগের ঔষধের নাম

স্ক্যাবিস রোগের ওষুধের নাম জেনে থাকা ভালো। তবে অবশ্যই কোন ধরনের মলম কিংবা ওষুধ ব্যবহারের আগে ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে তারপরে ব্যবহার করবেন। কারণ মানুষের শরীর এবং ত্বক খুবই সেনসিটিভ জায়গা যেগুলোতে চিকিৎসা ছাড়া কখনোই কোন ধরনের ওষুধ লাগানো উচিত নয়। সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করার পরে ঔষধ ব্যবহার করা উচিত। 

পারমেথ্রিন ক্রিম (permethrin ৫% cream): স্ক্যাবিস এর ওষুধের মধ্যে এটি সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত একটি ক্রিম। তবে এটি বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। যেমন permite/Scabper/Elimite(international brand)। ওষুধ হলে ব্যবহার করার সময় পুরো শরীরের গলা থেকে নিচ পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে এবং ৮ থেকে ১২ ঘন্টা লাগিয়ে রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে সবচাইতে ভালো হয় এ ধরনের ক্রিম গুলো রাতে লাগিয়ে শুয়ে যেতে হবে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালোভাবে গোসল করে নিতে হবে। 

ইভারমেকটিন (Evermectin) ট্যাবলেট: এই ট্যাবলেটটি ওরাল ট্রিটমেন্ট এর জন্য কার্যকরী। অর্থাৎ এটি একটি মুখে খাওয়ার ওষুধ। বড় ধরনের আক্রান্ত হলে সাধারণত এ ধরনের ওষুধ গুলো দেওয়া হয়। এটি ব্যবহারের নিয়ম সাধারণত ওজন অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ হয় অর্থাৎ ১২ মিগ্রা ১/২ দিন ব্যবহৃত হয়। 

সালফার মলম (sulphur ointment 5%-10%): এই মলমটি বিশেষ করে গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের জন্য বিকল্প পদ্ধতি বলা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে পারমেথ্রিন মলম সহ্য না হলে বিকল্প হিসেবে এই মলমটি ব্যবহার করতে দেয় বিশেষজ্ঞরা। কোন গর্ভবতী মহিলা বা শিশুরা যদি স্ক্যাবিস/চুলকানি/খোস পাচরা রোগে আক্রান্ত হয় তারা এই মলমগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

Crotamiton cream/lotion: চুলকানি দূর করার অন্যতম একটি ক্রিম হচ্ছে crotamiton cream। অতিরিক্ত চুলকানি বা শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিলে এই ক্রিমগুলো দিনে দুইবার ব্যবহার করতে হয় ৫ দিন পর্যন্ত। এছাড়া আরো কিছু ওষুধ রয়েছে চুলকানি কমানোর জন্য সেগুলো হল-

  • Cetirizine
  • Loratadine
  • Hydroxyzine ইত্যাদি। 

স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায় 

স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায় জানতে হলে অবশ্যই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে সম্পন্ন করুন। যেহেতু বর্তমানে স্ক্যাবিস এর প্রভাব অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে তাই এ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানা থাকলে খুব সহজেই এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে। যেহেতু এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই পরিবারের কারো একজন হলে অন্যান্য সব দেশের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

  • শুধু স্ক্যাবিস থেকে মুক্তির উপায় খোঁজার জন্য ওষুধ কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ নিলেই চলবে না নিজেকে সাবধানতা অর্জন করে এবং সতর্ক হয়ে চলতে হবে। পারমেত্রিন মলম স্ক্যাবিস এর জীবাণু মেরে ফেলে। এটি শরীরের লাগিয়ে রাখতে হয় ৮ থেকে ১২ ঘন্টা। 
  • অন্যথায় ইভারমেকটিন একটি ট্যাবলেট যা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হয় যদি গুরুতর আক্রান্ত হয় স্ক্যাবিস দ্বারা।
  • এছাড়া নিমপাতা ব্যবহার করে স্ক্যাবিস এর জীবনাদর্শ করা যায় কারণ এটি অ্যান্টিসেপটিক উপাদান হিসেবে কাজ করে।
  • এছাড়া গোসল করার সময় গোসলের পানিতে ৬-৭ ফোটা স্যাভলন অথবা ডেটল দিয়ে গোসল করতে পারেন এতে জীবাণু অনেকটা ধ্বংস হয়। গোসল করার পর কাপড়চোপড় বিছানা তলে সকল কিছু পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন। 
  • স্ক্যাবিস সর্বত্র ছড়িয়ে থাকতে পারে তাই কাপড়চোপড় থেকে শুরু করে বিছানা জামা কাপড় তোয়ালে গামছা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। 
  • পরিবারের কারো একজন স্ক্যাবিস বা চুলকানি হলে সকল সদস্যদের চিকিৎসা করাতে হবে এবং বাকি আক্রান্তরাও সঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  • ঘরবাড়ি সবসময় পরিষ্কার করেছেন রাখতে হবে এবং জীবানুনাশক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
  • যারা আক্রান্ত তারা কাঁচা হলুদের পেস্ট অ্যালোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি অনেকটাই কমে যাবে এগুলো অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। 
  • শরীর যখন প্রচুর জ্বালাপোড়া করবে তখন আক্রান্ত জায়গায় ঠান্ডা পানিতে কাপড় ডুবিয়ে আক্রান্ত স্থানে ধরে থাকুন কিছুটা আরামদায়ক হবে। 
  • চুলকানির কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন খেতে পারেন। লোরাটাডিন, সিটিরিজিন এগুলো চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
  • স্ক্যাবিস এ আক্রান্ত হলে যদি খুব বেশি চুলকায় তাহলে অবশ্যই হাত দিয়ে চুলকাবেন না এতে ঘষাঘষির ফলে আরও বৃদ্ধি পাবে। তাই কোন পরিষ্কার কাপড় দিয়ে অথবা পরিষ্কার কোন জিনিস দিয়ে চুলকাবেন।

স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন: স্ক্যাবিসের ঘরোয়া উপায় কি কি? 

উত্তর: নিমপাতা দিয়ে গোসল, হলুদ বাটা এলোভেরা জেল, তুলসী পাতা, নারিকেল তেল, ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: স্ক্যাবিস আবার ফিরে আসে?

উত্তর: হ্যাঁ, যদি পরিবারের অন্য সদস্যরা চিকিৎসা না করে তাহলে ব্যবহার্য জিনিসপত্র পরিষ্কার না হয় তাহলে আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন: স্কাবেশের প্রাথমিক লক্ষণ কত দিনে দেখা দেয়? 

উত্তর: সংক্রমণের দুই থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে লক্ষণ দেখা দিতে পারে প্রথমবার আক্রান্ত হলে।

প্রশ্ন: স্ক্যাবিস এ কোন অঙ্গ বেশি আক্রান্ত হয়? 

উত্তর: আঙ্গুলের ফাক, কব্জি, কোনুই, কোমর, স্তন, যৌনাঙ্গ, নাভির আশপাশ। 

প্রশ্ন: স্ক্যাবিস এতে চুলকানি কেন বেশি হয় রাতে? 

উত্তর: রাতে শরীরের উষ্ণতা বাড়ে ও পরজীবী বেশি সক্রিয় হয় বলে চুলকানি বেড়ে যায়।

স্ক্যাবিস এর লোশন

স্ক্যাবিস একটি একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ যা sarcoptes scabiei নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র পরজীবী বা mite দ্বারা হয়ে থাকে। এ পরজীবী ত্বকের ভিতরে ঢুকে বাসা বেঁধে এবং ডিম পাড়ে যার কারণে ত্বকে তীব্র চুলকানি, লাল দাগ, ফুসকুড়ি ও জ্বালাপোড়া, লালচে দেখা দেয়। তবে এ থেকে রক্ষা পেতে লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। 

স্ক্যাবিস-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়


আরো পড়ুনঃ  

পারমেথ্রিন লোশনঃ পারমেথ্রিন ৫% লোশন বাজারে পাওয়া যায় এটি অনেক ক্ষেত্রে permite/Scabper/Elimite lotion হিসেবে পরিচিত। শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার করে আক্রান্ত ছাড়াও সম্পূর্ণ শরীরে অর্থাৎ গলা থেকে পা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে রেখে দিতে হবে। বিশেষ করে রাতে লাগালে ভালো হয়। ৭-১২ ঘন্টার রেখে দেওয়ার পর ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনের ৭ দিন পর আবার ব্যবহার করতে পারেন।

ক্রটামিটন লোশন(Crotamiton lotion)ঃএই লোকেশনটি ব্যবহারে চুলকানি কমাতে সাহায্য করে এবং স্ক্যাবিস ধ্বংস করে। এলো সন্ধি ৫ দিন লাগাতে হবে দিনে ১-২ বার করে। বাজারে এ লোশন Eurox lotion নামে পাওয়া যায়।

সালফার লোশন ৫-১০%(sulphur lotion)ঃ এই লোশনটি বিশেষ করে স্ক্যাবিস দ্বারা আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলা কিংবা শিশুর জন্য নিরাপদ। এই লোশনের বন্ধু খুবই তীব্র তবে জীবাণু ধ্বংস করতে খুবই কার্যকরী লোশন। 

বেঞ্জাইল বেনজুয়েট লোশন ১০%-২৫% ঃ এই লোশন চর্ম রোগের জন্য খুবই কার্যকরী। বিশেষজ্ঞরা এই লোশনটি বিশেষভাবে স্ক্যাবিস এবং উকুন দূর করতে ব্যবহার করা হয়। এই লোকেশনটি সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা যায়। স্ক্যাবিস এর জীবাণু ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর। লোশনটি আক্রান্ত জায়গায় গলা থেকে নিচ পর্যন্ত পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিয়ে তারপরে লাগাতে হবে। ৮-২৪ ঘন্টা লাগিয়ে রাখার পরে ধুয়ে ফেলুন তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী। 

স্ক্যাবিস এর সাবান 

স্ক্যাবিস বা চুলকানি রোগের বিশেষ কোনো সাবান নেই। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং রোগ থেকে সাবধানতা থাকার জন্য কিছু  কার্যকরী সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ এ ধরনের চিকিৎসায় কোন সাবান দ্বারা রোগ সারে এ ধরনের কোন ভিত্তি নেই। তবে কিছু জীবাণু নাশক এবং এন্টিসেপটিক সাবান স্ক্যাবিস জীবাণু ছড়ানো রোধ করতে সহায়তা দিতে পারে।

নিম সাবান

  • Medimix Neem soap 
  • Himalaya Neem soap 
  • Ayush Neem soap 

অ্যান্টিসেপটিক সাবান

  • Dettol antiseptic soap 
  • Savlon soap 
  • Lifebuoy total 

সালফার সাবান 

  • Dr. kaufmann sulphur soap 
  • Sanosan sulfer soap

উপযুক্ত এর সাবান গুলো স্ক্যাবিস এ আক্রান্ত হলে ব্যবহার করতে পারেন। যখন মলম কিংবা ক্রিম ব্যবহার করবেন তখন অবশ্যই এই সাবান গুলো দিয়ে ভালোভাবে গোসল করে নিয়ে পরিষ্কার হয়ে তারপরে লোশন কিংবা ক্রিম লাগাতে পারেন। যদিও সাবান দিয়ে স্ক্যাবিস সারায় না কেবল সহায়ক হিসেবে কাজ করে। 

স্ক্যাবিস এর ট্যাবলেট 

স্ক্যাবিস এর চিকিৎসায় মূলত মুখে অর্থাৎ ওরাল ট্যাবলেট হিসেবে ইনভারমেকটিন (Invemectin) ট্যাবলেট দেওয়া হয়। এটি মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় স্ক্যাবিস এর জীবনু ধ্বংস করার জন্য। বাজারে ওষুধটি বিভিন্ন নামে পাওয়া যায় যেমন:Ivecop/Iverjohn/Stromectol।

 সাধারণত এই ওষুধটি একবার খাওয়ার পর আবার সাত দিন পর খাওয়া হতে পারে অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১২ মিগ্রা ২ ট্যাবলেট ৬ মিগ্রা করে খাওয়ানো হয়। এবং সাত দিন পর একই মাত্রায় পুনরায় খাওয়ানো হতে পারে। তবে সকল রোগীর জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক ও গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এর ডোজ ভিন্ন ভিন্ন হয়।

স্ক্যাবিস হওয়ার কারণ

স্ক্যাবিস হওয়ার কারণ অনেক ধরনের হতে পারে। স্ক্যাবিস একটি ছোঁয়াচে রোগ ও পরজীবী ঘটিত রোগ যা মানুষের শরীরে কিংবা ত্বকের উপরিভাগে এক ধরনের ফুসকুড়ি এবং ফোলা ভাব তৈরি করে এবং তীব্র চুলকানি অনুভব হয়। তবে এটি হওয়ার ভিন্ন কারণ থাকতে পারে চলুন কি কারনে স্ক্যাবিস রোগ হয় সেগুলো আলোচনা করা যায়। 

  • স্ক্যাবিস রোগীর সংস্পর্শে আসলে এ রোগ ধরাতে পারে। যেহেতু এটি একটি পরজীবী গঠিত রোগ তাই একজনের কাছ থেকে অন্য জনের কাছে খুব সহজেই পার হয়ে যায়। যেমন: কারো সাথে ঘুমানো, কাউকে জড়িয়ে ধরা, কাউকে স্পর্শ করা বা যৌন সম্পর্ক ইত্যাদি কারণে হতে পারে।
  • এছাড়া কেউ যদি আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক পরিধান করা, তার তোয়ালে ব্যবহার করা, তার বিছানায় শোয়া এ সকল কারণেও হতে পারে। 
  • এছাড়া অনেক বাচ্চাদের স্ক্যাবিস হতে দেখা যায় এর বড় একটি কারণ হতে পারে স্কুলে ময়লা আবর্জনায় খেলা বা স্কুলে স্ক্যাবিস এ আক্রান্ত শিশুর সাথে একসাথে বসা ইত্যাদি কারনে।
  • বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হোস্টেল, বৃদ্ধাশ্রম, জেলখানা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এ ধরনের রোগ গুলো বিশেষভাবে বেশি দেখা দেয় এবং ছড়িয়ে পড়ে।
  • নিয়মিত গোসল করেন না পোশাক পরিস্কার করে না যার কারণে এই ধরনের পরজীবী গুলো বেশি বাসা বাঁধে।
  • অনেকের ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়। কারণ পৃথিবীতে সকলের ইমিউনিটি সিস্টেম একরকম নয়। যাদের ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল তাদের এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 
  • এছাড়াও গরম এবং আদ্র আবহাওয়াতে এ ধরনের পরজীবী গুলো বেশি বেঁচে থাকে এবং বৃদ্ধি পায়। তাই গরমে স্ক্যাবিস নামক খোশ পাঁচড়া বেশি দেখা দেয়।

স্ক্যাবিস এর হোমিও ঔষধ 

স্ক্যাবিস রোগের অনেক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে তার মধ্যে হোমিও বিকল্প অন্যতম একটি পদ্ধতি। যারা একটি প্রাকৃতিক উপায়ে এবং কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া চিকিৎসা নিতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগ নিরাময় করা অন্যতম একটি উপায়। হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিশেষ করে রোগীর লক্ষণ, শারীরিক অবস্থা ও মানসিক দিক বিবেচনা করে চিকিৎসা নির্বাচন করা হয়। 

  1. Sulphur এটি স্ক্যাবিস এর সবচাইতে শক্তিশালী হোমিও ও প্রচলিত ওষুধ।
  2. Psorinum পুরনো চুলকানির ফিরে আসার ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে। 
  3. Hepar sulphuris ব্যথাযুক্ত ত্বক এবং সংক্রমিত জায়গায় ব্যবহৃত হোমিও ঔষধ। 
  4. Mezereum শরীরে গুটি গুটি দেখা দিলে এবং তীব্র চুলকানিতে এবং মাথার ত্বকে স্ক্যাবিস হলে এটি ব্যবহার করা হয়। 
  5. Arsenicum album রাতের বেলায় তীব্র চুলকানি এবং ত্বক শুষ্ক থাকলে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

সকল ওষুধগুলো অবশ্যই নিজে থেকে না ব্যবহার করে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে তারপরে ডোজ গ্রহন করা উচিত।

স্ক্যাবিস সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্ন উত্তর 

প্রশ্ন: স্ক্যাবিস  এ কারা বেশি আক্রান্ত হয়? 

উত্তর: শিশু, বৃদ্ধ, যৌনকর্মী ও ঘন বস্তি পূর্ণ জায়গায় থাকা মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়।

প্রশ্ন: স্ক্যাবিস কতদিনে ভালো হয়? 

উত্তর: চিকিৎসা শুরু করলে ১-২ সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গ কমে যায় তবে পুরোপুরি ভালো হতে ৩-৪ সপ্তাহ লাগতে পারে। 

প্রশ্ন: চুলকানি সেরে গেলেও আবার কি ক্রিম লাগাতে হবে কি?

উত্তর: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একাধিকবার ব্যবহার করতে হতে পারে।

প্রশ্ন: স্ক্যাবিস থেকে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন? 

উত্তর: পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, ব্যতিগত জিনিসপত্র আলাদা রাখা, আক্রান্তদের এগিয়ে চলা।

শেষ মন্তব্যঃ স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় 

স্ক্যাবিস একটি ছোঁয়াচে ও পরজীবী ঘটিত রোগ যা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে গলা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। এটি এমন এক ধরনের রোগ যেটি শরীরে দেখা দিলে প্রচন্ড চুলকানি এবং ফুসকুড়ি এবং লাল হওয়া ও ফুলে ওঠা দেখা যায়। তবে এই ধরনের রোগ থেকে ঘরোয়া ভাবে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে অনেকটাই সংক্রমণ কমানো সম্ভব। আজকে স্ক্যাবিস সম্পর্কিত সকল তথ্য উপরে আলোচনা করা হলো আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন স্ক্যাবিস দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্রো কেয়ার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url